বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১শে মার্চ ২০২১ সকাল ১০:৩০
২৮৮৪
মাওলানা মোঃ ছাবেদ হোসেন
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রিঃ) ছিলেন মানবজাতির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় মহান উদার, বিনয়ী ও নম্র ব্যক্তিত্ব। তিনি উত্তম চরিত্র ও মহানুভবতার একমাত্র আধার। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, প্রতিবেশী সবার অকৃত্রিম শিক্ষণীয় আদর্শ ও প্রাণপিয় ব্যক্তিত্ব নবী করিম (সাঃ) একাধারে সমাজসংস্কারক, ন্যায়বিচারক, সাহসী যোদ্ধা, দক্ষ প্রশাসক, যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক এবং সফল ধর্মপ্রচারক।
কল্যাণকর প্রতিটি কাজেই তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে উত্তম আদর্শ।’ (সূরাঃ আল-আহজাব, আয়াতঃ ২১)
তিনি অবিস্মরণীয় ক্ষমা, মহানুভবতা, বিনয়-নম্রতা, সত্যনিষ্ঠতা প্রভৃতি বিরল চারিত্রিক মাধুর্য দিয়েই বর্বর আরব জাতির আস্থাভাজন হতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে কারণে তারা তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বস্ত উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তিনি যে বিনয়-নম্র ও সৎচরিত্রের অধিকারী ছিলেন, তা তারা একবাক্যে অকপটে স্বীকার করেছে। দুনিয়ার মানুষকে অর্থের দ্বারা বশীভূত না করে বরং তাদের সদাচরণ, উত্তম ব্যবহার এবং সততার দ্বারা বশীভূত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিতি।’ (সূরা আল-কালাম, আয়াতঃ ৪)
আত্মমর্যাদাবোধ বশত কখনো তিনি মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান ও হেয়প্রতিপন্ন করেননি বা নগন্য ভাবেননি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে সদাচরন করে পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠতর স্বভাব-চরিত্রের অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন। তাঁর স্বভাব-চরিত্রের মধ্যে বিনয় ও নম্রতা ছিল সদা জাগ্রত। সর্বোত্তম আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবেই তাঁকে বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতাসাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। কখনো দুর্বল ব্যক্তিকে কটু কথার মাধ্যমে হেয়প্রতিপন্ন করতেন না। এমনকি কোনো মানুষকে তার সামর্থ্যরে বাইরে অসাধ্য কাজে বা কঠিন দায়িত্বে বাধ্য করতেন না। তিনি দরিদ্র অসহায় মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন।
সমাজে যে যতটুকু মর্যাদা অধিকারী, তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করতেন। তিনি নম্রতাসুলভ আচরণ প্রদর্শন করার জন্য সাহাবায়ে কিরামদের উপদেশ দিতেন, আচার-ব্যবহারে অযথা রাগ ও ক্রোধ থেকে সর্বদা বিরত থাকার পরামর্শ দিতেন। তিনি মানুষকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ‘ যে ব্যক্তি নম্র-বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চাসনে আসীন করেন আর যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে অপদস্থ করেন।’ (মিশকাত)
তাঁর কাছ থেকে বিধর্মীরাও আশাতীত সুন্দর কোমল আচরণ লাভ করত। তিনি এতই নমনীয় ও কোমলতর ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন যে তাঁর পবিত্র সৎ কিংবা সামান্যতম সুদৃষ্টির কারণেও অনুসারীরা তাঁকে প্রাণাধিক ভালোবাসত এবং মনে-প্রাণে গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করত। তাাঁর কোমল ব্যবহার সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী করিম (সাঃ) কঠোর ভাষী ছিলেন না, এমনকি প্রয়োজনেও তিনি কঠোর ভাষা প্রয়োগ করতেন না। প্রতিশোধপ্রবণতা তাঁর মধ্যে আদৌ ছিল না।
মন্দের প্রতিবাদ তিনি মন্দ দিয়ে করতেন না, বরং মন্দের বিনিময়ে তিনি উত্তম আচরণ করতেন। সব বিষয়েই তিনি ক্ষমাকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি এতটা বিনয়ী ও ন¤্র ছিলেন যে কথা বলার সময় কারও মুখমগুলের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করে কথা বলতেন না। কোনো অশোভন বিষয় উল্লেখ করতেন না।’
তিনি সব সময় মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন ও সদালাপ করতেন। তাঁর মধুর বচনে সবাই অভিভূত হতো।
তার অভিভাষণ শুনে জনসাধারণ অশ্রু সংবরণ করতে পারত না। তিনি জনগণকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দয়ালু প্রভু আল্লাহর ইবাদত করো, ক্ষুধার্তকে খাদ্য প্রদান করো, সালামের বহুল প্রচলন করো এবং এসব কাজের মাধ্যমে বেহেশতে প্রবেশ করো।’ একদা এক ব্যক্তি নবী করিম (সাঃ)-কে ইসলামে সবচেয়ে ভালো কাজ কোনটি প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে জানালেন, ‘অভুক্তকে খাওয়ানো আর চেনা-অচেনা সবাইকেই সালাম করা।’ (বুখারি ও মুসলিম) তিনি ছিলেন নির্লোভ, নিরহংকার , পরোপকারী, সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনের অধিকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন আদর্শ মহামনব। একবান এক ব্যক্তি নবী করিম (সাঃ)-এর দরবারে এসে তাঁর ইস্পাতকঠিন ব্যক্তিত্ব ও গাম্ভীর্য লক্ষ করে ভয়ে কাঁপতে লাগল।
এতদর্শনে তিনি লোকটিকে স্বাভাবিক করে তোলার জন্য বললেন, ‘থামো, নিজেকে সংযত করো! আমি তো এমন এক মহিলার গর্ভজাত সন্তান, যিনি শুকনো গোশত ভক্ষণ করতেন।’ মানুষের সঙ্গে এমন সদাচরণ একান্তই উদারতার পরিচায়ক। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম বিরল ব্যক্তিত্বের সন্ধান কখনো মেলে না। এমনিভাবে তিনি মানুষের প্রতি কঠোর সতর্কবানী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ওহির মাধ্যমে আমার কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছেন যে নম্রতা ও হেয়তা অবলম্বন করো। কেউ যেন অন্যের ওপর গর্ব ও অহংকারের পথ অবলম্বন না করে এবং কেউ যেন কারও ওপর জুলুম না করে।’ (মুসলিম)
তিনি বহুলাংশেই স্বাবলম্বী ছিলেন। নিজের প্রয়োজনে কারও ওপর নির্ভরশীল হতেন না। নিজ হাতে জুতা মেরামত করতেন, কাপড় সেলাই করতেন, দুধ দোহন করতেন। সেবকদের কাজে সহয়তা করে আটাা পিষতেন। নিজ হাতে রুটি তৈরি করে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে খেতেন। নিজে হাটবাজার থেকে সওদা করে নিয়ে আসতেন। পরিবারের কেউ কোনো কাজের সহায়তা কমনা করলে তখনই সাহায্যের জন্য সাড়া দিতেন।
তাঁর পারিবারিক কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বাড়িতে অবস্থানকালে পরিবারের কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো তখন তিনি নামাজের জন্য উঠে যেতেন।’ হজরত আনাস(রাঃ) বলেছেন, ‘ পরিবারের প্রতি অধিক স্নেহপ্রবন হিসেবে নবী করিম (সাঃ) থেকে বেশি অগ্রগামী আমি আর কাউকে দেখিনি। তিনি দিবারাত্রির সময়টুকু তিন ভাগে ভাগ করে নিতেন। এক ভাগ ইবাদত-বন্দেগি করতেন। অন্য ভাগ পরিবার-পরিজনের গৃহকর্মের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতেন। আর এক ভাগ সময় তিনি নিঃস্ব-দুস্থজনদের জনসেবায় ব্যয় করতেন। কোনো জরুরি অবস্থা দেখা না দিলে সাধারণত এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটত না।
মহানবী (সাঃ) সৎ স্বভাব, সত্যনিষ্ঠা, সৌজন্যবোধ, বিনয় ও নম্রতার যে অনুমান শিক্ষা দিয়েছেন, তা আমরা ব্যক্তিগত, পরিবারিক ও সামাজিক জীবনে পারস্পারিক সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারি। তাঁর সাধারণ জীবনযাপন, বিনম্র আচার-আচরণ, উপদেশাবলি অনুশীলন করলে এবং আদর্শ গুনাবলি নিজেদের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুশীলন করে চললে মানুষ ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভে ধন্য হতে পারে। তাই নবী করিম (সাঃ)- এর সুমহান জীবনদর্শ থেকে মানুষের প্রতি সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয়ী চরিত্র, বিনম্র ব্যক্তিত্ব, আনুগত্যতা, সহযোগিতা ও পারস্পারিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনসেবা ও মানবকল্যান সুনিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়।
লেখক : মাওলানা মোঃ ছাবেদ হোসেন
শিক্ষকঃ ভোলা দারুল হাদিস কামিল ( স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা
ভোলা সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন বুলেট আর নেই
লালমোহন পৌরসভা পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে স্থাপন হচ্ছে ডাস্টবিন
লালমোহনে রাতের আঁধারে সরকারি চাল পাচার
ভোলায় কোস্ট ফাউন্ডেশন ও জাগো নারীর ভলান্টিয়ারদের যৌথ সমন্বয় সভা
মনপুরায় ছাত্রদল'র উদ্যোগে ইসরায়েল বিরোধী অবস্থান ও বিক্ষোভ
মনপুরায় ছাত্রদলনেতা রাশেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামীসহ তিনজন গ্রেফতার
লালমোহনে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার-বীজ বিতরণ
গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সরকারি শাহবাজপুর কলেজে মানববন্ধন
লালমোহনে তেঁতুলিয়া নদী থেকে ৩০ লাখ টাকার অবৈধ জাল উদ্ধার
মনপুরায় ছাত্রদলনেতা রাশেদ হত্যার বিচারের দাবীতে বিএনপি'র সংবাদ সম্মেলন
ভোলায় পাঁচ সন্তানের জননীকে গলা কেটে হত্যা
ভোলায় বিষের বোতল নিয়ে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকা
ভোলার ৪৩ এলাকা রেড জোন চিহ্নিত: আসছে লকডাউনের ঘোষনা
ভোলায় বাবা-মেয়ে করোনায় আক্রান্ত, ৪৫ বাড়ি লকডাউন
উৎসবের ঋতু হেমন্ত কাল
ভোলায় এবার কলেজ ছাত্র হত্যা, মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার
ভোলায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন করোনা রোগী: এলাকায় আতংক
ভোলায় কুপিয়ে হত্যা করে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক এক
ভোলার চরফ্যাশনে করোনা উপর্সগ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু
ভোলায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিত