অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বুধবার, ৮ই জানুয়ারী ২০২৫ | ২৫শে পৌষ ১৪৩১


দৌলতখানে বিলুপ্তির পথে খেজুর রস


দৌলতখান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৭ই জানুয়ারী ২০২৫ রাত ০৯:৩৪

remove_red_eye

৪৯



 খালেদ মোশাররফ শামীম, দৌলতখান  থেকে : বাংলাদেশ ঋতু-বৈচিত্রের দেশ। এখানে এক এক ঋতুর  এক এক রূপ । প্রতি দুই মাস অন্তর একটি নতুন ঋতুর  আবির্ভাব ঘটে। প্রত্যেক ঋতুর আবির্ভাবে বাংলাদেশের রূপ ও সৌন্দর্য বিচিত্রময় হয়ে ওঠে। হেমন্তের পরে কুয়াশার চাদর গায়ে উত্তরের হওয়ার সাথে আসে শীত। শীতের দাপটে মানুষ ও প্রকৃতি যখন অসহায় হয়ে পড়ে। তখন রকমারি শাকসবজি, ফল ও ফুলের সমারোহে বিষন্ন প্রকৃতি ভরে ওঠে। শীত আসলেই  বাতাসে ভাসে খেজুর রসের ঘ্রাণ। ক্ষীর, পায়েস আর পিঠাপুলির উৎসবে মাতোয়ারা হয় গ্রামগুলো। প্রিয় টাটকা খেজুর রসের স্বাদ পেতে প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে ভোরবেলা মানুষ ছুটে যান দূর- দূরান্তে। খেজুর গাছের চারপাশ পরিণত হতো রস পিপাসুদের কেন্দ্রস্থল। কারণ কখন গাছ থেকে হাড়িগুলো নামাবেন গাছিরা, কখন খাবেন শীতের এই মধু।   ভোলার দৌলতখানে শীতের এমন দৃশ্য  এখন আর চোখে পড়ে না। এখানে প্রায় বিলুপ্তির পথে খেজুর রস। আগ্রহ থাকলেও আগের মত গাছ না থাকায় পাওয়া যাচ্ছে না স্বাদের এই খেজুর রস। একসময়
শীতকাল আসতেই  গাছ কেটে হাঁড়ি বসিয়ে সকালবেলা রস বিক্রি করত এখানকার গাছিরা।  মাঝরাতেও রস সংগ্রহ  করে বিক্রি হত। গভীররাতে গৃহিণীরা টাটকা খেজুর রস দিয়ে  পায়েস তৈরি করে পরিবারের সকলের মাঝে বিতরণ করতেন। সবাই মিলে একসাথে পায়েস খাওয়া  ছিল অনেক আনন্দের। শীতে  গ্রামের প্রতি ঘরে ঘরে চলত পায়েস খাওয়ার উৎসব। সেই সঙ্গে ছিল  শীতের পিঠা। এখন এসব কেবলই অতীত। দৌলতখান উপজেলার  বিভিন্ন বাড়িতে ও রাস্তার দু'ধারে এখন আর আগের মতো  দেখা য়ায় না সারি সারি খেজুর গাছ। যা আছে, তা থেকে আগের মত রস পড়ে না। সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় গাছি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন কোন এলাকায় কিছু কিছু খেজুর গাছ  থাকলেও আগের মত রস হয় না। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও  ইটভাটায়  খেজুর গাছ পোড়ানোর ফলে গাছের  সংখ্যা  দিনে দিনে কমছে। এছাড়াও নানা কারণে এলাকার খেজুর গাছগুলো মরে যাচ্ছে। যা আছে, তা থেকেও কাঙ্ক্ষিত রস পাওয়া যায় না।  
গাছি কাঞ্চন মিয়া জানান, আগে একটি গাছ থেকে মাঝারি সাইজের এক হাঁড়ি রস পাওয়া যেত। কিছু কিছু গাছে বিকেলে হাঁড়ি বসালে মাঝরাতেই হাঁড়ি ভরে যেত। এখন গাছে আগের মতো  রস হয় না।
নুর মিয়ার হাট এলাকার  শানু মিয়া বলেন, শীতকালে ২০ থেকে ৩০ টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতাম। রস বিক্রি করে   সংসারের খরচ  উঠাইতে পারতাম। এখন এলাকায় খেজুর  গাছ নেই বললেই চলে।

কৃষক হেজু বলেন, গ্রামে একসময়   খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ  করে  গুর তৈরি করে বাজারে বিক্রি  করে পারিবারিক  ব্যয় নির্বাহ করা যেতো। এখন গাছ কম। গাছে আগের মতো রসও হয় না।  তাই খেজুর গাছ কাটার পাশাপাশি কৃষিকাজ  করি।
দৌলতখান উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ   হুমায়রা সিদ্দিকা বলেন, শীতকালে খেজুরের রসের পিঠা, পায়েস বাংলাদেশের গ্রামীণ খাদ্যাভাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে খেজুর গাছ রোপন প্রবণতা দক্ষিণাঞ্চল তথা ভোলা জেলায় কম রয়েছে। এছাড়াও  মানুষ নির্বিচারে গাছ কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে। রস ও গুড়ের প্রচুর চাহিদা থাকলেও যত্নের অভাবে গাছ কমে যাচ্ছে। বজ্রপাত প্রতিরোধে এবং রস ও নলেন গুড়ের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ রোপনের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।