অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৮ই অক্টোবর ২০২৪ | ২৩শে আশ্বিন ১৪৩১


আগামীকাল ভয়াল ১২ নভেম্বর: দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে ভয়াবহ দিন


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১ই নভেম্বর ২০২৩ বিকাল ০৪:৫১

remove_red_eye

৯৭

আগামীকাল ভয়াল ১২ নভেম্বর। দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ স্মৃতি বিজড়িত দিন। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’ আঘাত হেনেছিলো দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে। সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের তোড়ের সঙ্গে ৩০ ফুট উচ্চতায় বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নেয় সব কিছুই।
সেসময়ে সরকারি হিসেবে উপকূলের ৫ লাখ মানুষের প্রাণহাণী বলা হলেও সংখ্যাটা ছিলো দ্বিগুন; ১০ লাখ। সে ঝড়ের রাতে নিখোঁজই হয়েছিলেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ, যাদের সন্ধান পরবর্তীতে আর পাওয়া যায়নি। সেই দুর্যোগে বরগুনা (তৎকালীন পটুয়াখালীর অন্তর্গত), বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুরসহ উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসবাসরত প্রতিটি পরিবারের কোন না কোন সদস্য নিহত বা নিখোঁজ হয়েছিলেন।
পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছিলো দুর্যোগের ১০ দিন পার হবার পরে। বিশ্বের গণমাধ্যমে হেরিকেনের তান্ডবের খবরসহ তৎকালীন সরকারের এহেন আচরণ প্রচারিত, প্রকাশিত হলে বিশ্বব্যাপী পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের প্রতি ধিক্কার ওঠে। ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাওলানা ভাসানী উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ছুটে আসেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেন দুই নেতা।
উপমহাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। অসংখ্য জনপদ বিরাণ প্রান্তরে রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শী বয়োবৃদ্ধসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, ৭০ সালের ১১ নভেম্বর বুধবার সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। পরদিন ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আবহাওয়া আরও খারাপ হতে লাগল। মধ্যরাত থেকেই ফুঁসে উঠতে শুরু করে সমুদ্র। তীব্র বেগে লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসে পর্বতসম উঁচু ঢেউ। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে লোকালয়ের উপর। আর মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষ, গবাদি পশু, বাড়ি-ঘর, ক্ষেতের সোনালী ফসলসহ অনেক কিছু। পথে প্রান্তরে খোলা আকাশের নীচে পড়েছিলো কেবল লাশ আর লাশ। মরণপুরীতে রূপ নেয় গোটা উপকূল। সে রাতে যে ভয়াবহ বিভিষিকা নেমে এসেছিল তার নজির এখনো গোটা বিশ্বে বিরল।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এ ঘূর্ণিঝড়কে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করেছে। আঘাত হানার সময়ে ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ২৫০ কিলোমিটিার আর ১২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৩ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গড় গতি ছিলো ১৮৫ কিলোমিটার।
বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়টি পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী ঝড় হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ২০২২ সালের ১৮ মে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বিশ্বের পাঁচ ধরনের ভয়াবহ প্রাণঘাতী আবহাওয়া ঘটনার শীর্ষ তালিকা প্রকাশ করে। তালিকার শীর্ষ প্রাণঘাতী ঘটনা হিসেবে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এ ঝড়টিকে পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৩ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে সর্বকালের ভয়াবহ প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। সরকারি হিসেবে এতে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা যান; তবে বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি ছিল।
নভেম্বর মাস এলেই গোটা উপকূলীয় এলাকার মানুষ আতঙ্কে থাকেন। ১৯৭০ এর ১২ নভেম্বরের মতো ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতেও হেরিকেনরূপী আরেক ঘূর্ণিঝড়, সুপার সাইক্লোন খ্যাত ‘সিডর’ বঙ্গোপসাগর থেকে বিশাল জলোচ্ছ্বাস মাথায় করে প্রায় ২২০ কিলোমিটার বেগে বরিশাল, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরের বিশাল এলাকায় হামলে পড়েছিল। সিডরের তান্ডবে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক প্রাণহাণী ও সম্পদহানী ঘটেছিলো; যার স্মৃতি এখনো মানুষ বয়ে বেড়ায়।
১২ ও ১৫ নভেম্বরে বরগুনার বিভিন্ন সংগঠন মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বলে বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. সঞ্জিব দাস জানিয়েছেন।

সুত্র বাসস