অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


বাল্যবিবাহের আঘাতে ব্যাহত নারীর অগ্রযাত্রা


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সন্ধ্যা ০৬:৩৫

remove_red_eye

১৯১

বিশ্ব সমাজব্যবস্থায় বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং একটি পবিত্র বন্ধনও বটে। নারী-পুরুষের সুখ-শান্তি প্রেমণ্ডপ্রীতির মধুরতম বন্ধন সৃষ্টি ছাড়াও মানব বংশের স্থায়িত্ব ও সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। তবে বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। যুগে যুগে সামাজিক কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সেই সাথে সামাজিক অবক্ষয়ের পরিমাণও কোনো অংশে কমেনি। বাল্যবিবাহ দুই-চারদিন আলোচনা করে থেমে যাওয়ার মতো কোনো বিষয় নয় বরং এটি একটি চলমান সমস্যা যে ক্ষেত্রে শুধু আইন প্রণয়ন নয় প্রয়োজন আইন প্রয়োগের কঠোর নজরদারী। একটি সুস্থ জাঁতি পেতে প্রয়োজন একজন শিক্ষিত মা। অথচ একুশ শতকে এসেও বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ নারী এখনো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আর এর প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতেও বাল্যবিবাহ একটি বড় বাধা। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে ভারতবর্ষে বাল্যবিবাহের উৎপত্তি ১০০০ বছরে আগে থেকে। বাল্যবিবাহের শাব্দিক অর্থ অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বিবাহ। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় মেয়েদের সাধারণত বয়ঃসন্ধির আগেই বিয়ে দেয়া হতো,তবে শিল্প বিপ্লবের আগে ভারতবর্ষে নারীরা তাদের মধ্যে কিশোর বয়সে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর পর পরই বিয়ে করার প্রবণতা ছিলো। বাংলাদেশের মেয়েদের বিবাহের সর্বনিন্ম বয়স ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছর। তবে ২০১৭ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ বিলের বিধান অনুযায়ী, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশে এবং পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সম্মতিক্রমে বাল্যবিবাহ হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না। বেসরকারি সংস্থা সেভ দি ডটারের এক জরিপে গতবছর ১ জানুয়ারি থেকে ১ মার্চ-১৮ পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৪০৩টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে ১১২ জন শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে এবং এসব বিবাহের বিপরীতে মামলা হয়েছে মাত্র ৭টি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে জনকে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে ৩৭টি। দেশে বাল্যবিবাহ নিরসনের জন্য সরকারি-বেসরকারিসহ বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সামাজিক, প্রশাসনিক পর্যায়ে কাজ করছে, এমন সংগঠনের প্রতিবাদণ্ডসংক্রান্ত ঘটনা ঘটছে ৭৯টি। ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি, এমন দেশগুলোর শীর্ষ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশে ১৫ বছর হওয়ার আগেই শতকরা ৩৯ শতাংশ মেয়ের এবং ১৮ বছরের মধ্যেই ৭৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে জন্মহার হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে প্রধান দুটি অন্তরায় বাল্যবিবাহ আর অল্প বয়সে সন্তান ধারণ। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধকল্পে এবং এর ভয়াবহতা অনুধাবন করে সবাইকে মহান উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন সংগঠককে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বাস্তব ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই নারী এগিয়ে যাবে তার গন্তব্যে আর আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে নিজস্ব ধারায়। বাল্যবিবাহ কেবল একটি নারীর জীবনকে অন্ধকার ও দুর্বিষহ জীবনযাপনের দিকে ধাবিত করে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও কোনো বিকল্প নেই।