অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৪ই পৌষ ১৪৩২


মফস্বল সাংবাদিকতা ও একজন হাবিব রিপোর্টার


হাসনাইন আহমেদ মুন্না

প্রকাশিত: ২৯শে নভেম্বর ২০২৫ রাত ০৮:৫০

remove_red_eye

২০১

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ।। 

পৃথিবীর সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং পেশা হলো সাংবাদিকতা। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই চ্যালেঞ্জের মাত্রা কতটা তীব্র তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে মফস্বল সাংবাদিকতায় আরো কঠিন ও দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। এই কঠিন পথকে ভালোবেসে পরম মমতায় বুকে ধারণ করে গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন এম. হাবিবুর রহমান। সেই ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দুর্দশাগ্রস্থ দীপাঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরতে ভোলায় এসে সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করেছেন। তিনি চাইলে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিশ্চিত জীবন যাপন করতে পারতেন। তা না করে ভোলার মানুষকে ভালোবেসে তাদের দুঃখ দূর্দশা তুলে ধরার ব্রত গ্রহণ করেন। 
আমরা জানি ৭০ এর সেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয় ভোলা। আর সেই খবর ৩ দিন পর এম. হাবিবুর রহমানের তৎকালীন পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রচার হওয়ার পরে পুরো পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি  হয়। মূলত এর পর থেকেই হাবিবুর রহমান “হাবিব রিপোর্টার” হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন ভোলা তথা সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে। এছাড়া আশির দশকে প্রেসিডেন্ট পদক অর্জনসহ সাংবাদিকতায় নানান অবদানের পেয়েছেন বহু পুরস্কার। 
অত্যন্ত মেধাবী, বিনয়ী ও সজ্জন প্রকৃতির মানুষ এম. হাবিবুর রহমানকে আমি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি ছিল তার প্রচণ্ড দায়বদ্ধতা। ব্যক্তি হিসেবে একটি কল্যাণময়ী সমাজ বিনির্মাণে নিমগ্ন ছিলেন।  সাংবাদিকদের সম্মান ও মর্যাদায় সচেষ্ট ছিলেন আমৃত্যু। তিনি কষ্ট পেতেন সাংবাদিকদের মর্যাদাহানিতে। স্বাধীনতা উত্তর যেমন তিনি পূর্ব বাংলার নিপীড়িত মানুষের কথা তুলে ধরতেন খবরের কাগজে, তেমনি স্বাধীনতার পরে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাসহ (বাসস) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়ায় এই অঞ্চলের সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরতেন। 
আর যখন দেখলেন জাতীয় গণমাধ্যমে দ্বীপ জেলা ভোলার সাধারণ মানুষের সব কথা তুলে ধরা যায় না তখন তিনি নিজেই প্রকাশ করলেন দৈনিক পত্রিকা। যার নাম দিলেন “ দৈনিক বাংলার কণ্ঠ”। ১৯৯৪ সাল থেকে নিজ প্রকাশনা সম্পাদনায় শুরু করেন বাংলার কন্ঠ পত্রিকার যাত্রা। বিপুল সাংগঠনিক দক্ষতায় বারংবার নির্বাচিত হয়েছেন ভোলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি পদে।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিককে  খুব কাছ থেকে দেখে আমার একটা কথাই মনে হতো ’একজন সৎ, আদর্শবান সাংবাদিক অনেক অর্থ-ক্ষমতার চেয়ে সম্মান ও গৌরবের। তার মর্যাদাপূর্ণ  ব্যক্তিত্বের জন্য অনেক সরকারি কর্মকর্তারাই তাকে স্যার বলে সম্বোধন করতেন। তার কাছ থেকে জেনেছি এই শহরের অনেক ইতিহাস। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ নানান বিষয়। একজন সাংবাদিককে বলা হয় একজন অগ্রগামী পাঠক। সেটা যথার্থ ছিল এম হাবিবুর রহমানের বেলায়। তিনি ঘুম থেকে উঠে অন্তত তিনটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়তেন। আর এই পড়া কেবল চোখ বুলানো নয়। খুটিয়ে খুটিয়ে পড়া বলতে যা  বোঝায়। পড়তেন স্থানীয় ৩টি দৈনিক। লেখাপড়ার প্রতি ছিল প্রচণ্ড আগ্রহ। তবে তার একটি স্বপ্ন ছিলো ; ভোলা জেলার উপর একটি বই লেখার। যা আর পূরণ হলো না। তাকে হারিয়ে শুধু তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ক্ষতি হয়েছে আমাদের গোটা সমাজের। আমারা সাংবাদিক সমাজ হারালাম আমাদের অভিভাবক। এই গুণী মানুষটির প্রয়াণে যে ক্ষতি আমাদের হলো তা পূরণ হবার মত নয়। পরম করুনাময় যেন তাঁকে জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম স্থানে অধিষ্ঠিত করেন। আমিন।


মোঃ ইয়ামিন