অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


অন্তিম যাত্রার সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করে আসছেন লালমোহনের শওকত


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ রাত ০৮:৫৩

remove_red_eye

৯১

মো. জসিম জনি, লালমোহন : মৃত্যু পরবর্তী অসহায় গরিব মানুষদের দাফন কাপনের সামগ্রী বিনামূল্যে প্রদান করে আসছে ভোলার লালমোহনের ‘লাস্ট ড্রেস বাই শওকত’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনটির স্বপদ্রস্টা লালমোহন পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন আলমের সন্তান শওকত আরিফ। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক দাফন কাপনের সামগ্রী দিয়েছেন। তার এই সেবা নিজ এলাকাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলাতেও তিনি কাপনের সামগ্রী বিতরণ করে আসছেন। কিশোরগঞ্জের নীলফামারীর বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে বিনামূল্যে অন্তিম শয্যার সামগ্রী প্রদান করেছেন ‘লাস্ট ড্রেস বাই শওকত’ সামজিক সংগঠনটি। ওই বৃদ্ধাশ্রমটিতে আজীবনের জন্য বিনামূল্যে মরদেহ দাফন করার যাবতীয় সামগ্রী দিবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হন শওকত আরিফ।

এছাড়া বরিশালের কাউনিয়া বয়স্ক পুনর্বাসন কল্যাণ সংস্থায় বিনামূল্যে কাপনের কাপড় ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে আসছেন তিনি। সেখানেও চুক্তিবদ্ধ হয়ে যতদিন প্রয়োজন ততদিন তিনি এসব সামগ্রী বিতরণ করবেন বলে জানান। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর তারুয়া সমূদ্র দ্বীপের গরিব অসহায়দের জন্যও গত শুক্রবার ৫ সেট দাফন কাপনের সামগ্রী দিয়ে এসেছেন শওকত আরিফ। সব জায়গায় তিনি চুক্তিবদ্ধ থাকেন বিতরণকৃত সামগ্রী শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবার নতুন ৫ সেট করে সরবরাহ করা হবে। দাফন কাপনের সামগ্রী বিতরণ ছাড়াও শওকত আরিফ তাড়ুয়া দ্বীপে ভ্রমণপ্রেমী পর্যটকদের উদ্দেশ্যে সচেতনতামূলক ব্যানার লাগানোর ব্যবস্থা করেন। ‘বন উজার থেকে বিরত থাকি এবং বন বিভাগকে সহযোগিতা করি’, ‘গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই’, ‘জলবায়ু পরিবর্তন রক্ষায় অবদান রাখুন’, ‘বন্যপ্রাণী, শীতকালীন অতিথি পাখি, তারুয়া দ্বীপের লাল কাঁকড়াকে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার সুযোগ করে দিন’ ইত্যাদি প্রচারমূলক ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর পাশাপাশি ওই দ্বীপে তাল গাছের চারা বিতরণ করেন শওকত আরিফ। এসময় দ্বীপের রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা নাছিম আল খুসবু, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার লালমোহন উপজেলা সভাপতি শাহীন কুতুব, ইউনিয়নের সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ‘লাস্ট ড্রেস বাই শওকত’ এর উদ্যোগে তার নিজ এলাকা লালমোহন পৌরসভার ওয়েস্টার্নপাড়ায় নিয়মিত ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প চলমান রয়েছে। সেখানে ৩জন চিকিৎসক নির্ধারিত সময় করে প্রতিদিন রোগী দেখেন। নিজ এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকা থেকে গরিব অসহায় রোগীরা এখানে এসে বিনামূল্যে ডাক্তার সেবা গ্রহণ করছেন। কোন কোন রোগী পাচ্ছেন বিনামূল্যে ঔষধও। 
শওকত আরিফ জানান, তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। ঢাকার প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টে চাকরী করেছেন তিনি। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। নিজ বেতনের বিশ ভাগ টাকা তিনি এসব সেবায় ব্যয় করেন। এছাড়া বাবা ও প্রবাসী আত্বীয় স্বজন থেকেও তিনি সহযোগিতা নেন। তিনি আরো জানান, মৃত্যুর পর অর্থাভাবসহ নানা কারণে অনেক মানুষের দাফন কাজে জটিলতা দেখা দেয়। হয়তো কারো অর্থ নেই, নয়তো কারো স্বজন নেই। তাই চাকরির বেতনের টাকা থেকে এসব অসহায় মানুষদের মরদেহ দাফনের জন্য বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদানের উদ্যোগ নেই। যতদিন বেঁচে থাকরো ততদিন গরিব মানুষের মৃত্যু পরবর্তী দাপন কাফনের সামগ্রী বিতরণ করে যাবো। সম্প্রতি এলাকায় যাদের মৃত্যুর পর কবর করার মতো জায়গা নেই, তাদের জন্য একটি গণকবর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটা বাবা আমজাদ হোসেন আলম কমিশনারের একান্ত উদ্যোগে হচ্ছে। এর জায়গা কেনার জন্য কাজ চলছে। অন্তিম যাত্রার অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন মানবিক শওকত আরিফ। 


লালমোহন মোঃ ইয়ামিন



আরও...