অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


দৌলতখানে মেঘনার জোয়ারে প্লাবিত তিন শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত


দৌলতখান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৬ই আগস্ট ২০২০ রাত ০৮:৪১

remove_red_eye

৭৮৯

 


দৌলতখান প্রতিনিধি : ভোলার দৌলতখানে সৈয়দপুর, ভবানীপুর ও চরপাতা ইউনিয়নের বেড়ি বাঁধের বাইরে চৌদ্দটি ওয়ার্ডের পাঁচ শতাধিক বসতঘর মেঘনার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। আকস্মিক জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা যাওয়াসহ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ছাগল ভেড়াসহ পাঁচ সহশ্রাধিক হাঁস মুরগী। ঘর বিধ্বস্ত হয়ে স্বর্নালংকারসহ ব্যবসার মালামাল ও গৃহসামগ্রী হারিয়েছেন অনেক গৃহস্থ। প্লাবিত এলাকাগুলো হচ্ছে হাজিপুর ও মদনপুর ইউনিয়নের সবক’টি ওয়ার্ড, সৈয়দপুর ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ড, ভবানীপুর ইউনিয়নের সবক’টি ওয়ার্ডের আংশিক ও চরপাতা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড। ভবানীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম নবী নবু জানান, বেড়ি বাঁধের বাইরের সবক’টি ওয়ার্ড তলিয়ে গেছে। তা ছাড়া মধ্য মেঘনায় অবস্থিত চর হাজারীতে গুচ্ছগ্রামের সরকারি আবাসনসহ তিন শতাধিক বাড়িঘর পাঁচ-ছয় ফুট উচু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। চরের বাসিন্দাদের হাঁস, মুরগী, ছাগল, ভেড়া ও পুকুরের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। মধ্য মেঘনার আরেক ইউনিয়ন হাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান টিপু জানান, এবারের জোয়ারে হাজিপুর চরবাসী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয়-সাত ফুট উঁচু জোয়ারের ¯্রােতে আড়াইশ বসতঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। হাঁস, মুরগী, ভেড়া ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তিনি জানান, বুধবার চরবাসীর আহার জোটেনি। এ সংবাদ শুনে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল হাজিপুর চরবাসীর জন্য বৃহস্পতিবার সকালে এক টন চিরা, প্রয়োজনীয় পরিমান গুড়, মোম বাতি, দিয়াশলাই ও অন্যান্য গৃহসামগ্রী পাঠিয়েছেন। এর আগে সংবাদ পেয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে বুধবার রাতে সৈয়দপুর ইউনিয়নের বেড়ির বাইরে বানভাসীদের দেখতে এসে দুর্গতদের পাসে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করেন আলী আজম মুকুল এমপি। চরপাতা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন জানান, ওই ইউনয়নের কাজির হাটের বেড়ি বাঁধ থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত ৬ নং ওয়ার্ড সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। মধ্য মেঘনার চর ইউনিয়ন মদনপুরের চেয়ারম্যান একেএম নাছির উদ্দিন নান্নু জানান, তার ইউনিয়নটি পুরোটাই পাঁচ-ছয় ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেকের গৃহসামগ্রী ও তৈজসপত্র পানিতে ভেসে গেছে। ঘরে সংরক্ষিত ধান, গম ও সয়াবিন বীজসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজীর বীজ পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।  দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও পূর্ণিমার জো’র কারনে গত দুইদিন ধরে মেঘনায় অতি উচ্চতায় জোয়ার বইছে। জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় মধ্য মেঘনার তিনটি চর ও উপজেলার সৈয়দপুর, ভবানীপুর ও চরপাতা ইউনিয়নের বেড়ি বাঁধের বাইরে বসবাসকারী দশ সহশ্রাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। ভাটায় পানি কমে যেতে না যেতেই পূণরায় জোয়ার এসে ফের বাড়িঘর তলিয়ে দিচ্ছে। ঘরের মালামাল সরিয়ে নেয়ার ফুরসতও পাচ্ছেনা। রান্না করার সুযোগ না থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এসব মানুষ। সরেজমিন এসব মানুষের মানবেতর জীবনযাপনের চিত্র দেখা যায়। সৈয়দপুর ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সইজল ফিটার জানান, বুধবার বিকালে জোয়ার এসে চোখের পলকে সব তলিয়ে দেয়। স্ত্রীর দশ আনার গহণা ও ২৫ হাজার টাকা চৌকির ওপর রেখে অন্য মালামাল গোছাচ্ছিলাম। মুহুর্তের মধ্যে পাঁচ ছয় ফুট উচ্চতায় জোয়ার এলে সব তলিয়ে যায়। গহণা আর টাকার চিহ্নও পেলাম না। জুতার ব্যবসায়ী আবু বলেন, বসত ঘরেই সব মালামাল রাখতাম। জোয়ারের পানিতে ব্যবসায়ের পুরো মূলধনটাই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বিধবা মাইনুর বেগমের বসতঘরটি সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নি:শ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। সৈয়দপুর ইউপি চেয়ারম্যান জিএস ভুট্টো তালুকদার বলেন, বাণভাসী এসব মানুষের দুর্ভোগের সংবাদ শুনে এমপি আলী আজম মুকুল দ্রুত ওই এলাকায় ছুটে আসেন। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে অবস্থান করে তাদেরকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন। এ সময় এমপি মুকুল ক্ষতিগ্রস্তদের পূণর্বাসনে সব ধরণের সহযোগিতার আশ^াস দেন।