অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


লালমোহনে ইটভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ, হুমকিতে পরিবেশ


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০শে জানুয়ারী ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:০৫

remove_red_eye

২২৫

লালমোহন প্রতিনিধি : ভোলার লালমোহন উপজেলায় মাহী ব্রিকস্ নামের ইটভাটায় মানা হচ্ছে না ইট তৈরি ও ভাটা স্থাপন আইন। ইচ্ছেমতো কৃষি জমি ও পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় মাহী ব্রিকস স্থাপন করা হয়েছে। আর এই ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে মূল্যবান বনজ ও ফলদ গাছ। ভাটার ধূলা, চুল্লির কালো ধোঁয়া ও আগুনের উত্তাপে ধ্বংস হচ্ছে আশেপাশের সবুজ মাঠ, বনজ সম্পদ ও ফলদ গাছ। ব্যক্তি মালিকানাধীন এই ইটভাটায় নষ্ট হচ্ছে সরকারি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কও।
উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রায়রাবাদ এলাকায় মাহী ব্রিকস নামের ইট প্রস্তুতকারী এমনই একটি ইটভাটায় দিনরাত অবাধে গাছ পোড়ানো হচ্ছে। কোনো প্রকার নিয়মনীতিই মানা হচ্ছে না এই ইটভাটায়। কৌশলে ঝিকঝাকের অনুমোদন নেওয়া হলেও মানা হচ্ছে না এর কিছুই। প্রতিদিন কয়েক মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে মাহী ব্রিকসে এই ভাটার ধোঁয়ার কারণে মরে যাচ্ছে আশেপাশের বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। এতে করে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাহী ব্রিকস্ নামের ওই ইটভাটার চারপাশে শত শত মণ গাছ স্তুপ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গাড়িতে করে গাছ কেটে এনে রাখা হচ্ছে ইটভাটা সংলগ্ন এলাকায়। টুকরো করা হচ্ছে ভাটার ভেতরে থাকা করাত কলে। লোক দেখানোর জন্য কেবল কয়েক মণ কয়লা সাজিয়ে রাখা হয়েছে ভাটার এক কোণে। তবে এসব কয়লা কখনই যাচ্ছে না ইটভাটার চুল্লিতে। চুল্লিতে যা যাচ্ছে সবই গাছ।


নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক ওই ভাটার কয়েকজন শ্রমিক জানান, আমরা শুরু থেকেই গাছ দিয়ে এখানে ইট পুড়ছি। এই ভাটায় আমরা কর্মরত থাকা অবস্থায় একবারের জন্যও কয়লা পোড়ানো হয়নি। দিনের পর দিন আমরা ইটভাটায় গাছই পুড়ছি। আমাদেরই বা করার কী আছে, মালিকের নির্দেশেই এই গাছ পোড়ানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মাহী ব্রিকসে প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ প্রকাশ্যেই পোড়ানো হচ্ছে। যার ফলে উজার হচ্ছে এলাকার গাছপালা। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। প্রকাশ্যে ইটভাটায় গাছ পোড়ানো হলেও এ যেন ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কেউ দেখছে না। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এই ইটভাটায় গাছ পোড়ানো হলেও প্রশাসনের কেউ কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন আরো বেসমালভাবে পোড়ানো হচ্ছে গাছ। মাহী ব্রিকস্রে মালিক কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। তিনি নাকি প্রভাবশালী।
লালমোহন উপজেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, অবাধে ইটভাটায় এমন করে গাছ পোড়ানো হলে কয়েক বছরের মধ্যে ওই এলাকায় ফসল উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। কমে যাবে গাছপালার সংখ্যাও। আর গাছপালা কমে গেলে পশু-পাখি ও কীট-পতঙ্গ হুমকিতে পড়বে, বিপর্যয় ঘটবে পরিবেশের ভারসাম্যের। অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ওই ভাটায় গাছ পোড়ানো বন্ধসহ মালিককে আইনের আওতায় আনবে বলে মনে করি।
ইটভাটায় গাছ পোড়ানোর ব্যাপারে মাহী ব্রিকস্রে মালিক মো. মাইন উদ্দিন মিয়া তালুকদার বলেন, ইটভাটা চালানোর মতো সব ধরনের কাগজ আমার রয়েছে। তবে এখন মৌসুমের প্রথম দিক, তাই গাছ পুড়িয়েই ইট তৈরি করা হচ্ছে। কয়েকদিন পরে আর গাছ পুড়বো না, কয়লাতেই ইট তৈরি করবো।
এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ওই ইটভাটায় যদি গাছ পোড়ানো হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।