অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩০


আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী কবিগানের আসর


অচিন্ত্য মজুমদার

প্রকাশিত: ৪ঠা নভেম্বর ২০২৩ রাত ১১:১০

remove_red_eye

৩৫

অচিন্ত্য মজুমদার : ভোলায় সদর উপজেলার দক্ষিণ বাপ্তা গ্রামে আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী কবিগানের আসর শুরু হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীর
আয়োজনে রতন মহাজন বাড়ির উঠানে শুক্রবার সকাল (৩ নভেম্বর) থেকে দুই দিনব্যাপী এ গানের আসর শুরু হয়। এক সময়ের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কবি, জারি, সারি, আর পালাগানের মাঝে বাঙালি তার প্রাণের আনন্দ খুঁজে পেত। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় বিলুপ্তির পথে এ সব জনপ্রিয় গান। তাই বাঙালীর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ভোলায় আজও আয়োজন করা হচ্ছে কবিগানের আসর।  
কবিগান আয়োজক শ্রী শ্রী ল²ী গোবিন্দ মন্দির কমিটি সভাপতি মনরঞ্জন চন্দ্র দে জানান, সকাল থেকে পাল্টাপাল্টি যুক্তি, তর্ক আর গানে-গানে দুই কবিয়ালের লড়াইয়ে মধ্যেদিয়ে কবিগান শুরু হয়। যা হারমনিয়াম, ঢোল, বাশি, কাশা, বেহালাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। কোজাগরী ল²ীপূজা পর পরই শ্রী শ্রী ল²ী গোবিন্দ মন্দির কমিটির আয়োজনে ২৫৬ বছর ধরে এ কবিগানের আসর হয়ে আসছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা শত-শত দর্শক শ্রোতা এই গান উপভোগ করেন। তিনি আরো বলেন, এবারের আসরে পালা গান পরিবেশন করছেন বাগেরহাট জেলার দিপংকর সরকার ও নড়াইল জেলার সুরঞ্জন সরকার। এই গানের আসরকে কেন্দ্র করে খাওয়া-দাওয়া পাশাপাশি, বসে গ্রামীণ মেলা। আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে
লক্ষীপূজার পর স্থানীয় গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে এ কবিগানের আয়োজন করেন। তাদের আয়োজন করা কবিগানের মাধ্যমে বাঙালির লোক সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কবিগান অনুষ্ঠানে আসা শ্রোতা উপজেলার বাপ্তায ইউনিয়নের মুছিকান্দি গৰামের লাল মিয়া ও শহরের ওয়েষ্টার্ন পাড়ার গোপাল সাহা বলেন, একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদে আসর বসতো কবি জারি, সারি আর পালাগানের। শত ব্যস্ততার মাঝেও মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হতো এসব গ্রামীণ গানের। কিন্তু বর্তমান আকাশ সংস্কৃতি আর আধুনিক বিনোদনের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে এসব জনপ্রিয় গান। বর্তমান প্রজন্ম এর সাথে পরিচিত না থাকলেও প্রবীণরা আজও খুঁজে ফেরে একসময়ের এসব গানের আসর। তাই কবিগান শোনার পাশাপাশি নিজেদের সাংস্কৃতির সাথে বর্তমান প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দেয়ার সুযোগও পাচ্ছেন
অনেকে।
বাগেরহাট জেলা থেকে আসা কবিয়াল দিপংকর সরকার জানান, তিনি ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে কবিগান করে আসছে। আর ভোলার বাপ্তা গ্রামের মহাজন বাড়ি গান করছেন গেল দুই বছর ধরে। বাংলার লোক সাংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রাখাতে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই কবিগান পরিবেশন করেন। গানে গানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের মাঝে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে তাদেই এই গান গাওয়া বলেও জানান তিনি।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ স¤পাদক অসীম কুমার সাহা জানান, আড়াইশ’ বছরের বেশি সময় ধরে এই কবিগানের আসর হয়ে আসছে। শুধু জেলার নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত-শত মানুষ মহাজনবাড়ি কবিগান শুনতে আসেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলে মিলে উৎব মুখর পরিবেশে কবিগান উপভোগ করেন। তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয় বলেও জানান তিনি ।