অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৮ই অক্টোবর ২০২৪ | ২৩শে আশ্বিন ১৪৩১


কীটনাশক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করেছে ডেঙ্গু মশা : কীটতত্ত্ববিদ


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ রাত ০৮:০৭

remove_red_eye

১৫২

কীটতত্ত্ববিদরা সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন যে, প্রচলিত কীটনাশকগুলো ডেঙ্গু বা এডিস মশার বিরুদ্ধে অকার্যকর বলে মনে হচ্ছে। 
তারা বলেন, প্রাণঘাতি এসব কীট মেরে ফেলা অথবা এর লার্ভা ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত দুটি প্রচলিত কীটনাশকের বিরুদ্ধে এগুলো প্রাকৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ প্রিভালেন্স অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন বা নিপসম-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম সারোয়ার আজ বাসসকে বলেন, বিষাক্ত পদার্থ (কীটনাশক) কীটনাশক ক্ষমতা হারিয়ে মশার বিরুদ্ধে তাদের কার্যকারিতা হারিয়েছে।’ 
কীটবিজ্ঞানীরা এই ঘটনার কারণ হিসেবে মশা নিধনের জন্য কীটনাশক প্রয়োগে বা তাদের প্রচলিত ফগার মেশিন দিয়ে লার্ভা ধ্বংস করতে মশা-বিরোধী কর্মীদের অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন।
নিপসম কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন, দুটি বিশেষ কীটনাশক ম্যালাথিয়ন এবং টেমেফোস বর্তমানে যথাক্রমে মশা এবং তাদের লার্ভা মারতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তবে, সারোয়ার বলেন, দুই সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগকৃত কর্মীরা দৃশ্যত তাদের জ্ঞানের অভাবে যথাযথ মাত্রায় কীটনাশক স্প্রে করতে পারেনি, যা মূলত ডেঙ্গু বহনকারী মশাকে কীটনাশক প্রতিরোধী করে তুলেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ডক্টর কবিরুল বাশার এ বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, ‘মানুষের জীবন বাঁচাতে ডেঙ্গুর আক্রমণ বন্ধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এডিস মশার প্রজনন প্রকৃতি এবং জীবনচক্র (বিশেষ করে) বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বাশারও শারোয়ারের কথার প্রতিধ্বনি করেন এবং এডিসকে ধ্বংস করার জন্য প্রচলিত পদ্ধতির অনুশীলন সম্পর্কে তার সন্দেহ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকার উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন উভয়কেই প্রধানত রাজধানীর মশা নির্মূলের দায়িত্ব প্রাপ্ত।
 এলজিডি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ফগার মেশিনের সঠিক ব্যবহার শেখার জন্য চারজন উপসচিবসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি প্রতিনিধি দল জার্মানিতে পাঠিয়েছে। একজন স্প্রে ম্যান সুপারভাইজার এবং একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর অবশ্য ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশা নিধনে দক্ষতা অর্জনের জন্য জার্মানি সফরে ছিলেন।
এদিকে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, তারা আলাদাভাবে অন্তত তিনটি দল জার্মানি ও ফ্রান্সে পাঠিয়েছেন এবং তাদের দলের সদস্যরা কারিগরি ব্যক্তি যারা সরাসরি মশা বিরোধী অভিযানে জড়িত ছিলেন।
ডিএনসিসি কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা সম্প্রতি জার্মানির পালসফগ থেকে ১০০টি ফগিং মেশিন কিনেছেন, সঠিক স্থানে যথাযথ ডোজে কীটনাশক স্প্রে করার জন্য সম্প্রতি সংগ্রহ করা অত্যাধুনিক ফগিং মেশিন পরিচালনার জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিদের অব্যাহত প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ চলছে।
এ বছর ডেঙ্গু সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে এবং বিশেষজ্ঞ এবং কর্মকর্তারা সিটি কর্পোরেশনগুলোকে মশা দমনে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। এখন পর্যন্ত ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। 
সারোয়ার অবশ্য বলেন, সিটি কর্পোরেশনগুলো অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু কমিউনিটির সাহায্য এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বয় ছাড়া তারা একাই কাজটি করতে পারেন না।
বাশার বলেন, যেহেতু এডিস মশা সাধারণত আবাসিক এলাকায় পাওয়া যায় ‘এটি আসলে একটি গৃহপালিত প্রজাতি এবং এর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অবশ্যই অন্যান্য মশার প্রজাতি থেকে আলাদা হতে হবে।’
‘আমাদের সারা বছর ধরে ঢাকার বিশেষ এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক বাড়ির তদারকি করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে।’ 
বাশার বলেন, এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজনন উৎস ধ্বংস করার জন্য বছরব্যাপী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলেন, উভয় সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকাগুলোতে রাজধানীর দুই পৌর কর্তৃপক্ষকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পারস্পরিক যোগাযোগ বা সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।

সুত্র বাসস