অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


সংগ্রাম স্বাধীনতা : প্রেরণায় বঙ্গমাতা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ই আগস্ট ২০২৩ রাত ০৯:৫৫

remove_red_eye

৪২৬




আজ শেখ ফজিলাতুন নেছার ৯৩ তম জন্মবার্ষিকী



আসমা আক্তার সাথী : গ্রামের নাম টুঙ্গিপাড়া। গোপলগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া। যেখানে জন্মেছেন আমাদের মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর আকৈশর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা। আমাদের বঙ্গমাতা। আজ তাঁর ৯৩ তম জন্মবার্ষিকী। মহীয়সী এই নারী বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন।
ঘন বর্ষার এক শ্রাবণ দুপুরে ১৯৩০ সালের ৮ আগষ্ট জন্ম নিল ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। দাদা শেখ আবুল কাশেম নাতনীর নাম রাখেন ফজিলাতুন নেছা । ফুলের মত গায়ের রঙ তাই মা হোসনে আরা বেগম ডাকতেন রেণু। তিন বছর বয়সে রেণুর বাবা শেখ জহুরুল হক মারা যান। মাকে হারান পাঁচ বছর বয়সে। রেণুর দাদা ছিলেন শেখ মুজিবের বাবা শেখ আবদুল হামিদের চাচা। পিতামহ শেখ আবুল কাশেমের ইচ্ছায় ১৯৩৮ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে চাচাতো ভাই শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আদরের নাতনী রেণুর বিয়ে হয়। ছোট্ট রেণু শ্বাশুড়ী সায়েরা খাতুনের কাছে মাতৃ¯েœহে বড় হতে থাকেন শেখ মুজিবুর রহমানের ভাই বোনের সঙ্গে। শেখ মুজিবের বয়স তখন বার বা তের। ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধু যে পরিবেশ ও পরিমÐলে বেড়ে উঠেছেন, শেখ ফজিলাতুন নেছাও সেই একই পরিবেশে বড় হয়েছেন, এমনকি একই পরিবারে। স্বাভাবিকভাবেই মুজিবের আদর্শ, তাঁর সহজাত মানসিকতা, সাহস ও আত্মবিশ্বাসী সত্তা দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছেন। সেই কিশোরী বয়স থেকে সকল ক্ষেত্রে স্বামী মুজিবকে সমর্থন করার মধ্যে এটি লক্ষ্য করা যায়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে তিনি আকুন্ঠ সমর্থন দিয়েছেন দিধাহীন চিত্তে। মনোবল ও সাহস যুগিয়েছেন, অপরিসীম প্রেরণা যুগিয়েছেন।
                গোপালগঞ্জের মিশনারী স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর গৃহ শিক্ষকের কাছে পাঠ গ্রহণ করেন রেণু। প্রখর স্মৃতি শক্তির অধিকারী ছিলেন বলে শেখ মুজিব তাকে ডাকতেন ‘জীবন্ত ডায়েরী’। বঙ্গবন্ধুৃ কোলকাতায় লেখাপড়া ও রাজনীতি করতেন, দফায় দফায় কারাবরণ করেছেন। এই নিয়ে কোন অভিযোগ ছিলো না পতœী রেণুর। বঙ্গবন্ধু ‘অসমাপ্ত আতœজীবনী’তে লিখেছেন, রেণু খুব কষ্ট করত কিন্তু কিছুই বলতো না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্য টাকা পয়সা জোগাড় করে রাখত। যাতে আমার কষ্ট না হয়।’  
  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত না থেকেও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস ছিলেন তিনি। জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জাতির পিতার পাশে থেকে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। তার কর্মের মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন একটি সংগ্রাম মুখর জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যে জীবন কোটি জীবনের আশা-আকাঙক্ষা ও স্বপ্নের সাথে দ্বিধাহীনভাবে যুক্ত হয়েছিল ত্যাগ ও নিপীড়ন মোকাবেলা করবার দৃপ্ত প্রতিজ্ঞায়।
বেগম মুজিব সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘আমার স্ত্রীর মতো সাহসী মেয়ে খুব কমই দেখা যায়। আমাকে যখন পিন্ডির ফৌজ বা পুলিশ এসে জেলে নিয়ে যায়, আমার উপর নানা অত্যাচার করে, আমি কবে ছাড়া পাব বা কবে ফিরে আসব ঠিক থাকে না, তখন কিন্তু সে কখনো ভেঙে পড়েনি। আমার জীবনের দুটি বৃহৎ অবলম্বন। প্রথমটি হলো আত্মবিশ্বাস, দ্বিতীয়টি হলো আমার স্ত্রী আকৈশোর গৃহিণী।’ উল্লেখ্য জীবনের সোনালী ১৪টি বছর বঙ্গবন্ধু কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। তখন বঙ্গবন্ধুর মামলা চালানোর খরচ, আইনজীবী নিয়োগ, আদালতে যাওয়া, নিজ হাতে রান্না করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা দলের নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং কার্যকরের ব্যবস্থা করা, সন্তান লালন-পালন, তাদের লেখা পড়ার তদারকি করা থেকে ঘরে বাইরে সবই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সামলাতেন বঙ্গমাতা।
 শেখ ফজিলাতুন নেছা ছিলেন অনন্য মানবিক গুণাবলীর অধিকারী। ঘরে বসে স্কুল খুলে নিজেই মেয়েদের লেখাপড়া ও সেলাই শেখাতেন। এতিম, গরীব ছেলে-মেয়ে, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতাকে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। দলীয় নেতা কর্মীদের চিকিৎসা খরচও বহন করেছেন তিনি। রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম ও সংগঠনে বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজন পূরণে নিজের সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন বেগম মুজিব শর্তহীনভাবে। মায়া-মমতা আর আপ্যায়নে তিনি ছিলেন তুলনাহীন। তাঁর কাছ থেকে কেউ কখনও খালি হাতে ফিরে যাননি।
  ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং দুর্ভিক্ষের সময় তার স্বামী যখন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বিভিন্নভাবে মানুষের সেবা করেছেন, তার সাথে একইরকম মনোভাব নিয়ে সার্বক্ষণিক সমর্থন দিয়ে গেছেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা। এমনকি যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রচারণা ও সার্বিক কর্মকাÐে অপরিসীম সহযোগিতায় বেগম মুজিবকে একান্তভাবে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হলে বঙ্গবন্ধু সদস্য নির্বাচিত হন। তখন রজনী বোস লেনের একটি ভাড়া বাড়ীতে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ১৫ মে কৃষি উন্নয়ন, বন ও সমবায় মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ৩০ মে পাকিস্তান সরকার মন্ত্রীসভা বাতিল করে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। ১৯৫৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম ও ভিলেজ এইড মন্ত্রী নিযুক্ত হন। কিন্তু মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে দল গোছানোকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বঙ্গবন্ধু দল গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করেন। আরাম আয়েশের তোয়াক্কা না করে স্বামীর এই সিদ্ধান্তকে হাসিমুখে মেনে নেন শেখ ফজিলাতুন নেছা। মায়ের এ ধরণের নানামুখী উদার পদক্ষেপ প্রসঙ্গে কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, লড়াই, সংগ্রামে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে, কিন্তু কখনও মাকে ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি। যতই কষ্ট হোক আমার বাবাকে কখনওই বলেননি যে , তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও বা সংসার কর বা খরচ দাও। আব্বা যে পদক্ষেপ নিতেন সেটাকেই সমর্থন করতেন তিনি।” বরং বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালীন সময়ে বঙ্গমাতা চিঠিতে লিখেছেন, “আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন, দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ, আপনি নিশ্চিন্ত মনে সেই কাজে যান, আমার জন্য চিন্তা করবেন না। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গমাতার এই অনুপ্রেরণা আজীবন চলমান ছিলো।
 ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি, বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। ৮ মে নারায়ণগঞ্জে ৬ দফার সমর্থনে জনসভা করে ঘরে ফেরার পর গভীর রাতে গ্রেফতার হন তিনি। ৬ দফা থেকে এক চুলও নড়া যাবে না- বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ বাস্তবায়নে বঙ্গমাতা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। ৬ দফা আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠন করতে বোরকা পরে রাস্তায় নেমে লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ করেছেন বেগম মুজিব। শুধু তাই নয়, নেপথ্যে থেকে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন বঙ্গমাতা। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন, সংগঠনকে সংগঠিত করতেন, ছাত্রদের নির্দেশ দিতেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতেন।
   রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। কারাগারে অন্তরীন তরুণ শেখ মুজিবকে নবগঠিত সংগঠনের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক করা হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার হওয়ায় আবারো তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫০ সালে কারারুদ্ধ হয়ে টানা দুই বছর কারাগারে থাকতে হয়। ১৯৫৮ সালে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাকে ১৪ মাস কারান্তরীণ রাখা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝোলাবার সব আয়োজন সম্পন্ন করলে ১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করে আনে এবং রেসকোর্স ময়দানে এক ছাত্র-গণসংবর্ধনায় তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের দীর্ঘ ১৪ বছর বঙ্গবন্ধুকে কারাগারেই কাটাতে হয়েছে। দিনের পর দিন বঙ্গবন্ধুর কারাগারে থাকা অবস্থায় বেগম মুজিব শত সংকট মোকাবেলা করে সংগঠন এবং সংসার সামলেছেন, শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর যতœ নিতেও ত্রæটি রাখেননি কখনও। অসীম ধৈর্য্যরে অধিকারী বঙ্গমাতা কোনদিন স্বামীর প্রতি এতটুকু অভিযোগ করা তো দূরে থাক, সবসময় আপোষহীন থেকে তার রাজনৈতিক লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যেতে নিরন্তর উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন। কী ভীষণ দায়ভার বহন করছেন!  ধীর-স্থির এবং প্রচÐরকম সহ্যশক্তি তার মধ্যে ছিল। বিপদে, দুঃখ-বেদনায় কখনো ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং যেকোন বিপদ থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে চেষ্টা করেছেন অসীম সাহসিকতার সাথে - এটাই ছিল তার চরিত্রের দৃঢ়তা, তার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। স্বাধীনতার জন্য বঙ্গমাতার মহান ত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্মর হয়ে আছে।
বঙ্গমাতার দূরদর্শিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দ্বার খুলে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক ইস্যুতে বার বার জেলে যেতেনে। যৌবনের অধিকাংশ সময় তাঁকে জেলে কাটাতে হয়েছে। ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাঁচ মাস পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন যখন বঙ্গমাতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এলো তখন জানা গেলো, তিনি ক্যান্টনমেন্টের অফিসার্স মেসের একটি কক্ষে বন্দী। কন্যা শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি, “পাকিস্তান সরকার আম্মাকে ভয় দেখায়, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি না নিলে তিনি বিধবা হবেন। মা সোজা বলে দিলেন, কোনো প্যারোলে মুক্তি হবে না। নি:শর্ত মুক্তি না দিলে কোনো মুক্তি হবে না। আমি মায়ের সিদ্ধান্তের কথা বঙ্গবন্ধুকে যখন জানালাম তখন অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকেও দেখেছি আমাকে বলতে, তুমি কেমন মেয়ে? বাবার মুক্তি চাও না? আম্মাকে বলেছে, ভাবী আপনি কিন্তু বিধবা হবেন।” বঙ্গবন্ধু যদি প্যারোলে যেতেন বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বঙ্গমাতার বিচক্ষণতা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ধ্রæবতারার মত।
১৯৭১ এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানেও রয়েছে বঙ্গমাতার ভূমিকা। কন্যা শেখ হাসিনার এক স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে পেয়েছি, “মা আব্বাকে বললেন, সমগ্র দেশের মানুষ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমার মনে যে কথা আসে তুমি তাই বলবে। অনেকে অনেক কথা বলতে বলেছে। তোমার কথার উপর সামনের অগণিত মানুষের ভাগ্য জড়িত।” বঙ্গমাতার প্রেরণা থেকে রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু মঞ্চ কাঁপিয়ে শুনিয়েছিলেন স্বাধীনতার অমোঘ মন্ত্র, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’  
 ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে সারাদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগের দিন ২২ মার্চ রাতে খেতে বসে বঙ্গবন্ধুকে চিন্তাক্লিষ্ট দেখে বেগম মুজিব জানতে চেয়েছিলেন- “পতাকা ওড়ানোর ব্যাপারে কী কোনো সিদ্ধান্ত নিলেন?” বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- “না, নিতে পারিনি। আমি পতাকা ওড়াতে চাই। একটাই ভয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এখনো ঢাকায়। পাকিস্তানিরা বলবে, আলোচনা চলা অবস্থাতেই শেখ মুজিব নতুন পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এ অজুহাত তুলেই তারা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর সামরিক হামলা চালাবে।” এ অবস্থায় বেগম মুজিব পরামর্শ দিয়েছিলেন- “আপনি ছাত্র নেতাদের বলুন আপনার হাতে পতাকা তুলে দিতে। আপনি সেই পতাকা বত্রিশ নম্বরে ওড়ান। কথা উঠলে আপনি বলতে পারবেন, আপনি ছাত্রজনতার দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন।” বঙ্গবন্ধু আর কোনো কথা না বলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেন, পরদিন ২৩ মার্চ তিনি ৩২ নম্বরে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়াবেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার মাটিতে বিজয় ছিনিয়ে এনে স্বাধীনতার পতাকা পত পত করে উড়িয়ে তবেই ক্ষান্ত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা দম্পতি।
  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ২৫ মার্চ রাত থেকে ঊনিশ বার জায়গা বদল করেও গ্রেফতার এড়াতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর পরিবার। পাকিস্তানি সেনারা বঙ্গমাতাকে তাঁর সন্তানদেরসহ ধানমন্ডি ১৮ নম্বর রোডের একটি বাড়ীতে বন্দী করে রাখেন। কন্যা শেখ হাসিনা সন্তান প্রসবের সময়ও মা ফজিলাতুন নেছাকে কাছে পাননি। বঙ্গমাতা রাজবন্দী, তাকে ঢাকা মেডিকেলে যেতে দেয়নি পাক সেনারা।
     তাঁদের যুদ্ধ দিনের বন্দী দশার অবসান ঘটে ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তি পেয়ে বঙ্গমাতা বাড়ীর ছাদ থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে টুকরো টুকরো করে আগুন ধরিয়ে দেন। জয় বাংলা শ্লোগান দেন। হাজার হাজার জনতা ছুটে আসে ৩২ নম্বরের বাড়ীর সামনে। বঙ্গমাতা বাংলাদেশকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে অনন্য ভূমিকা রাখেন। একটি দেশের জাতির পিতা, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও সাধারণ জীবন যাপন করতেন। কোনদিন প্রচার চাননি।

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা অবিচ্ছিন্ন সত্তা ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে শক্তি, সাহস, মনোবল, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন বলেই আমরা পেয়েছিস্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু হয়েছেন জাতির পিতা।  ড: নীলিমা ইব্রাহিম বলেন, “রেণু ছিলেন নেতা মুজিবের ঋৎরবহফ, চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ ধহফ এঁরফব,”
  বঙ্গমাতা সমাজ, সংসার, সন্তান প্রতিপালনের পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পর দেশ পুণর্গঠনে অসামান্য অবদান রেখে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন, ইতিহাসও তাঁকে অভিষিক্ত করেছে বঙ্গমাতা উপাধিতে। স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল প্রেরণাকারী বঙ্গমাতার কাছে জাতি কৃতজ্ঞ। এই মহীয়সী নারীর জীবন চর্চা নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। মহীয়সী এই জননীর জন্মদিনে রইল আমার কৃতজ্ঞ চিত্তের অশেষ শ্রদ্ধা। লেখক : প্রভাষক, দৌলতখান সরকারি আবু আব্দুল্লা কলেজ, দৌলতখান, ভোলা









মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হচ্ছে আজ, সংগ্রহ করেছেন ২৭৮০ জন

মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হচ্ছে আজ, সংগ্রহ করেছেন ২৭৮০ জন

মনপুরায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে দুই জন গ্রেপ্তার

মনপুরায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে দুই জন গ্রেপ্তার

ভোলা-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী গোলাম নবী আলমগীরের মনোনয়নপত্র দাখিল

ভোলা-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী গোলাম নবী আলমগীরের মনোনয়নপত্র দাখিল

ভোলার বোরহানউদ্দিনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ যাত্রীর

ভোলার বোরহানউদ্দিনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ যাত্রীর

ভোলায়  যৌথ অভিযানে ১টি বিদেশী পিস্তল ৩টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ২ রাউন্ড কার্তুজসহ আটক-১

ভোলায় যৌথ অভিযানে ১টি বিদেশী পিস্তল ৩টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ২ রাউন্ড কার্তুজসহ আটক-১

লালমোহনে বিএনপির বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

লালমোহনে বিএনপির বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

ভোলায় নাজিম উদ্দিন আলম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

ভোলায় নাজিম উদ্দিন আলম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

লালমোহনে সফল বরই চাষি

লালমোহনে সফল বরই চাষি

ভোলা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিমের মনোনয়নপত্র দাখিল

ভোলা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিমের মনোনয়নপত্র দাখিল

সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

আরও...