অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ১২ই জানুয়ারী ২০২৫ | ২৯শে পৌষ ১৪৩১


আজ মুক্তির মহানায়কের জন্মদিন


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭ই মার্চ ২০২৩ রাত ১২:০০

remove_red_eye

৩৭৩




  আসমা আক্তার সাথী : ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, মঙ্গলবার । রাত ৮ টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন ইতিহাসের মহানায়ক , বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। আজ বাংলার সেই অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে বর্ণিল আলোকসজ্জা, আতশবাজি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ‘বিশ্ববন্ধুর’ জন্মদিন উদযাপন করবে পুরো জাতি। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস বিধায় শিশুদের নিয়েও আজ রয়েছে নানা আয়োজন।  দ্বীপ জেলা ভোলাও তার ব্যতিক্রম নয়।
আজ বাঙালী জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। সর্বকালের সবশ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মদিনে দেশের সাড়ে  ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হদয় নিংড়ানো ভালোবসা জানাতে উদগ্রীব। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা, যিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। শেখ মুজিব শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী চেতনা। শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও রাজনীতি, একটি ভৌগলিক সীমারেখায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গবন্ধুর স্বকীয় নেতৃত্বের আভাস পাওয়া যায় কিশোর বয়স থেকেই। ১৮ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময় এক ঘটনায় প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহণের জন্য তরুণ শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হন। সে সময় সপ্তাহখানেক জেল হাজতে থাকতে হয় তাঁকে। সেটা ছিলো তাঁর জীবনের প্রথম কারাবরণ। এরপর বাঙালী জাতির অধিকার আদায় এবং স্বাধীনতার জন্য অসংখ্যবার কারাবরণ করনে এই মহান নেতা। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্নত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণর মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। জনসাধারণের কাছে তিনি ‘শেখ মুজিব’ ও ‘শেখ সাহেব’ হিসেবে বেশি পরিচিত এবং তার উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু'। শেখ মুজিবুর রহমানকে এই উপাধি প্রদান করেছেন ভোলা জেলার কৃতি সন্তান , ৬৯ এর গণঅভুত্থানের মহানায়ক, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগ সরকারের সফল সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ  । ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত সভায় লাখো জনতার উপস্থিতিতে তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ এই উপাধি দেন।
      ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ২৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে ১৩ বছর ৯ মাস অর্থাৎ প্রায় ১৪টি বছর কারাবন্দি থেকেছেন, জেল নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কারা প্রাচীরের অন্ধকারের প্রকোষ্ঠে ৫১১০টি দিন অতিবাহিত করেছেন। তিনি তাঁর জীবনে শ্রেষ্ঠ সময় অতিবাহিত করেছেন কারান্তরালে। যৌবনের সুন্দর দিনগুলো তিনি উৎসর্গ করলেন দেশ ও জাতির মুক্তির জন্যে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বিশ্বের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয়, বিশ্বের অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক, নেতা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও মনীষীদের কাছে ছিলেন প্রিয়পাত্র। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তাঁর সিদ্ধান্ত, অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো’।

 ইতিহাস আজীবন কথা বলে । ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায় যা কিছু ভালো, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানব সভ্যতার আশীর্বাদ।  বাঙালী জাতির জন্য তেমনই আশীর্বাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নাম চির ভাস্বর হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেন – ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম / এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য নাম। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির অবিভাজ্য সম্পর্কের কোন পরিসমাপ্তি নেই। পৃথিবীর মানচিত্রে বংলাদেশের অবস্থান এবং বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির সগর্ব উপস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে না থাকলেও ছড়িয়ে আছেন সারা বাংলাদেশে ।  পুরো বাঙালি জাতির বঙ্গবন্ধুর প্রতি  রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক