অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


লভ্যাংশের টাকা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সন্ধ্যা ০৬:৩০

remove_red_eye

১৭৭

হিসাববছর শেষের পর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডাদের জন্য নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দেয় পাঁচটি কোম্পানি। শেয়ারহোল্ডারদের দিয়ে এ লভ্যাংশ অনুমোদনও করিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ লভ্যাংশের সেই টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধই করা হয়নি। কোম্পানিগুলো হলো- আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, লাভেলো আইসক্রিম, লুব-রেফ বাংলাদেশ ও বিডি পেইন্টস। নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা না দেওয়াকে মহাপ্রতারণা বলছেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকার সংকটে ঘোষিত লভ্যাংশের টাকা বিনিয়োগকারীদের দেওয়া সম্ভব হয়নি।

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্বশীলরা বলছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে লভ্যাংশের টাকা অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীকে দিতে হবে। যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে কোনো কোম্পানি বাড়তি সময় চাইলে সেটি কমিশন বিবেচনা করে দেখবে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লভ্যাংশের টাকা বিতরণ এবং সময় চেয়ে আবেদন করেননি, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করায় দুটি কোম্পানির শেয়ার কিনি। কিন্তু ওই দুটি কোম্পানির একটিও লভ্যাংশের টাকা দেয়নি। কোম্পানি দুটির শেয়ার এখন ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন) দামে আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় শেয়ার বিক্রি করতে পারছি না। নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর সেই লভ্যাংশের টাকা বুঝিয়ে না দেওয়া মহাপ্রতারণা। এতে শুধু আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারী না, সমগ্র বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিএসইসির উচিত কোম্পানিগুলো যাতে লভ্যাংশের টাকা বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে দেন, সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ঘোষণা করা লভ্যাংশ বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডদের অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি বিএসইসির জারি করা আদেশে বলা হয়, অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে লভ্যাংশ জমা করতে হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা থাকলেও ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের পর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সেই লভ্যাংশের টাকা এখনো বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে পাঠায়নি আলিফ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিটির লভ্যাংশের টাকা পাঠানোর শেষ সময় ছিল ২৬ জানুয়ারি।

২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাদের জন্য ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এ লভ্যাংশের জন্য কোম্পানিটিকে দিতে হবে তিন কোটি ৫৩ লাখ ৯১ হাজার ৫৫৬ টাকা। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও কোম্পানিটি এ টাকা বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে দেয়নি।

আলিফ গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংও উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের বাদ দিয়ে শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডাদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এ কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সাধারণ শেয়ারহোল্ডাদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা এজিএমের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। শেয়ারহোল্ডাদের বিও হিসাবে লভ্যাংশের টাকা পাঠানোর শেষ সময় ছিল ২৬ জানুয়ারি। কিন্তু এখনো বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা দেওয়া হয়নি। এ লভ্যাংশের জন্য কোম্পানিটির লাগবে তিন কোটি ৬১ লাখ ৫৩ হাজার ৯১৮ টাকা।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা দিতে না পারা আরেক কোম্পানি লাভেলো আইসক্রিম। তারা ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দেন। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর শেয়ারহোল্ডারদের দিয়ে সেই লভ্যাংশ অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। এখনো কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা বুঝিয়ে দেয়নি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দুই বছর না যেতেই কোম্পানিটি এমন ঘটনা ঘটালো। ২০২০ সালে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে লাভেলো আইসক্রিম।

লাভেলো আইসক্রিমের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ দিদারুল আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন কলটি রিসিভ করেন কোম্পানিটির শেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমরা লভ্যাংশের টাকা দিচ্ছি না, বিষয়টি তেমন না। আমরা লভ্যাংশ বিতরণের প্রসেসটা এখনো শেষ করতে পারিনি। সব শেয়ারহোল্ডার লভ্যাংশের টাকা পেয়ে যাবেন।’

লাভেলো আইসক্রিমের মতো ২০২০ সালে শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয় লুব-রেফ বাংলাদেশ। এ কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওযার পর দুই বছর না যেতেই কোম্পানিটি লভ্যাংশের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না দেওয়ার মতো অপরাধ করলো।

২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। যা গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এজিএমের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডাদের দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু লভ্যাংশের সেই টাকা এখনো বিনিয়োগকারীরা বুঝে পাননি।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা না দেওয়া আরেকটি কোম্পানি বিডি পেইন্টস। এসএমই (স্বল্প মূলধনী কোম্পানি) প্ল্যাটফর্মের এ কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ঘোষিত এ লভ্যাংশ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর এজিএম করে শেয়ারহোল্ডারদের দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু লভ্যাংশের টাকা এখনো পাননি বিনিয়োগকারীরা।

ঘোষিত লভ্যাংশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিতরণ করতে হবে। তবে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে লভ্যাংশের টাকা বিতরণের জন্য কোনো কোম্পানি সময় চাইলে সেটি কমিশন বিবেচনা করবে। এ আবেদন করতে হবে লভ্যাংশ বিতরণের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার সাতদিনের মধ্যে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও যে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা বিতরণ করেনি এবং সময়ে চেয়ে আবেদনও করেনি, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জাকির নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করায় দুটি কোম্পানির শেয়ার কিনি। কিন্তু ওই দুটি কোম্পানির একটিও লভ্যাংশের টাকা দেয়নি। কোম্পানি দুটির শেয়ার এখন ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন) দামে আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় শেয়ার বিক্রি করতে পারছি না। নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর সেই লভ্যাংশের টাকা বুঝিয়ে না দেওয়া মহাপ্রতারণা। এতে শুধু আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারী না, সমগ্র বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিএসইসির উচিত কোম্পানিগুলো যাতে লভ্যাংশের টাকা বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে দেন, সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা দিতে না পারার কারণ হিসেবে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান  বলেন, ‘এটা ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। ম্যানেজমেন্ট পর্যাপ্ত ফান্ড দিচ্ছে না বলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশের টাকা বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। মার্চের শুরু থেকে লভ্যাংশের টাকা বিতরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে আপনারা বিএসইসির কাছে আবেদন করেছেন কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘না। এ বিষয়ে আমরা বিএসইসির কাছে কোনো আবেদন করিনি।’

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম , ‘ঘোষিত লভ্যাংশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিতরণ করতে হবে। তবে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে লভ্যাংশের টাকা বিতরণের জন্য কোনো কোম্পানি সময় চাইলে সেটি কমিশন বিবেচনা করবে। এ আবেদন করতে হবে লভ্যাংশ বিতরণের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার সাতদিনের মধ্যে।’

তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও যে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা বিতরণ করেনি এবং সময়ে চেয়ে আবেদনও করেনি, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি দেখছি, এটি এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে তদন্ত করতে বলা হবে। তদন্তে অনিয়ম পেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সুত্র জাগো