অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


ভোলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রসূতি সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১শে মার্চ ২০১৯ সকাল ০৭:৩৩

remove_red_eye

৬২৭

হাসনাইন আহমেদ মুন্না \ ভোলায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রসূতি মায়েদের নিরাপদ সন্তান প্রসবের আগ্রহ বেড়েছে। ২০১৪ সালে এখানে ডেলিভারী হয়েছিলো ২২ জনের। আর গত বছর (২০১৮) এখানকার ২১৩টি ক্লিনিক থেকে নিরাপদে সন্তান জন্ম দিয়েছেন ২ হাজার ৫৪৭ জন প্রসূতি মা। প্রতিকছর কিøনিকে মায়েদের ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রসূতি সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা।
এতে করে অকারণে প্রসূতিদের অস্ত্রোপাচার রোধ হচ্ছে এবং তাদের শারিরিক ও পারিবারিকভাবে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এখন আর পল্লী অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় অপ-চিকিৎসায় মায়েদের জীবন দিতে হচ্ছেনা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখানে ২০১৪ সালে প্রথম ডেলিভারী সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম বছর ২২ জন মায়ের নিরাপদ সন্তান প্রসব হলেও পরের বছর ২০১৫ সালে হয় ১২৭৪ জনে উন্নিত হয়। ২০১৬ সালে ডেলিভারীর সংখ্যা আরো বেড়ে দাড়ায় ৭৯৪ জনে। পরের বছরে ৬৬৫ জন বৃদ্ধি পেয়ে এর সংখ্যা হয় ১৪৫৯ জনে। এছাড়া ২০১৮ সালে ১ হাজারেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২ হাজার ৫৪৭ জনে।
সিভিল সার্জন ডা. রথিন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ প্রসব সেবায় বিশেষ প্রশিক্ষন ও সরকারের প্রচার প্রচারণার ফলে ডেলিভারীর ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত কর্মীদের দক্ষতার সাথে ডেলিভারী কার্যক্রম পরিচালনা করায় প্রসূতিরা ক্লিনিকমূখী হচ্ছেন। তাদের মধ্যে দিনি দিন সচেতনতাও বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এই উদ্যেগের ফলে দীপাঞ্চলে কমছে শিশু ও মাতৃ মৃত্যূর হার। মায়েদের কাছে আস্থা লাভ করেছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারীদের সহায়তায় নির্দিষ্ট ক্লিনিকের আওতায় প্রথমে গর্বভতী মায়েদের তালিকা প্রনয়ণ করা হয়। তাদের ক্লিনিকে আসতে বিভিন্নভাবে উদ্বোদ্ধ করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রসূতি মায়েদের প্রসব পূর্ব সেবা, প্রসব পরবর্তি সেবা ও ডেলীভারী সেবা এই ৩ভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রসব পূর্ব সেবার মধ্যে গর্ভের ইতিহাস জানা, শারিরিক পরীক্ষার মধ্যেমে উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ, রক্ত সল্পতা, প্রসাব পরীক্ষা ইত্যাদী। এছাড়া প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ জানানো, প্রসব প্রস্তুতি, ঝুকিপুর্ন অবস্থান নির্নয় ও বিপদ চিহৃ সম্পর্কে জানানো হয়।
আর প্রসব পরবর্তি সময়ে যাতে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষনন না হয় সে ব্যাপরে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে পরীক্ষার মাধ্যমে ডেলীভারীর স্বাভাবিক অবস্থা নির্ধারন করা হয়। ডেলীভারী স্বাভাবিক না হলে রোগীকে অন্যত্র রেফার করা হয়।
সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জনতাবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের দ্বায়িত্বে থাকা শাহিদা বেগম জানান, অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তার এখানে নিরাপদ ডেলিভারী সেবা নিশ্চি করা হয়। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাকে ফোন করলে তিনি রোগীর বাড়িতে গিয়ে সন্তান প্রসব করান। গতকাল ভোর রাতে ফোন পেয়ে একই এলাকার বাহাউদ্দিনের স্ত্রী নাজমুন নাহারের বাড়িতে গিয়ে ডেলিভারী করান। বর্তমানে মা ও সন্তান সুস্থ্য আছেন। তিনি বলেন, এমনি করেই সাধারণ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন। আর রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে অন্যত্র রেফার করেন।
প্রত্যন্ত এলাকা কন্ডকপুরের দিনমজুর নিরব হোসেন’র স্ত্রী জান্নাত বেগম বলেন, চলতি মাসের প্রথম দিকে তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। ভোরে প্রসব ব্যথা উঠলে কমিউনিটি ক্লিনিকে ফোন করলে স্বাস্থ্য কর্মী তার বাড়িতে আসেন এবং নিরাপদে সন্তান জন্মদানে সহায়তা করেন। জান্নাত আরো বলেন, যখন ব্যথা উঠলো তখন মনে হয়েছিলো আর বাঁচবেননা তিনি। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসায় জীবন বাঁচলো তার। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এই নারী।
জনতা বাজারের মৎস্যজীবী শেখ ফরিদের স্ত্রী সুরমা বেগম জানান, ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখ তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। রাত ১টার দিকে প্রসব ব্যথায় ছটফট করেন তিনি। স্থানীয় ক্লিনিকের সিএইচসিপিকে ফোন দিলে তিনি বাসায় আসেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকলে আমাদের মত দরিদ্র্যদের যে কি হতো তা ভাবা যায়না বলেন তিনি।
জেলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা। এখানকার দক্ষিন সাকুচিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের দ্বায়িত্বে থাকা নাছিমা বেগম বাসস’কে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তার ক্লিেিনকে ডেলিবারীর সংখ্যা বেড়েছে। গত জানুয়ারি মাসে তার এখানে ডেলিভারী হয়েছিলো ১১টি, আর রেফার হয়েছে ৫জন রোগী। ফেব্রæয়ারিতে ডেলিভারী হয়েছে ৯টি ও রেফার হয়েছে ৩টি। এছাড়া মার্চের ১৯ তারিখ পর্যন্ত ডেলিভারী হয়েছে ৫টি ও অন্যত্র রেফার হয়েছে ২জন প্রসূতি।
সাকুচিয়া এলাকার দিনমজুর নাগর আলীর স্ত্রী মিষ্টি বেগম। গত বছর এই কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপদ সন্তান প্রসব করেন। বর্তমানে শিশু সন্তান নিয়ে ভালো আছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা চাইলেই অন্যত্র চিকিৎসার জন্য যেতে পারিনা। তাই এই ক্লিনিকই আমাদের একমাত্র ভরশা।