অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


চরফ্যাশনে মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময়


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮ই জুলাই ২০১৯ সকাল ০৭:১৮

remove_red_eye

৬১৯

চরফ্যাশন প্রতিনিধি : চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-১৯ উদযাপন গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় পরিবার উন্নয়ন সংস্থা(এফডিএর) মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলেন সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ১৭-২৩ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১৯ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। আজ থেকে শুরু করে সপ্তাহব্যাপী এ আয়োজনের এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, “ মৎস্য সেক্টরের সমৃদ্ধি, সুনীল অর্থনীতির অগ্রগতি”। এ উপলক্ষে আমি আপনাদের মাধ্যমে উপজেলার সকল মৎস্য চাষী, মৎস্যজীবী, আড়ৎদার, মৎস্য ব্যবসায়ীসহ মৎস্য সেক্টরের সাথে জড়িত সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার দুই বছর পরে কুমিল্লায় এক জনসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান“মাছ হবে দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ” এ মর্মে ঘোষনা দেন। আজ বাংলাদেশে তৈরী পোশাক শিল্পের পরই মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। শুধু তাই নয় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আমিষের ৬০ শতাংশ যোগান দেয় মাছ।
আপনারা জেনে অত্যন্ত খুশি হবেন যে, বাংলাদেশ এখন মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ন। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মাছ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ৪১.৩৪ লাখ মেট্রিকটন। মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪২.৭৭ লাখ মেট্রিক টন ১৯৮৩-৮৪ অর্থ বছরে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৭.৫৪ লাখ মেট্রিক টন। ৩৪ বছরের ব্যবধানে ২০১৭-১৮ সালে এ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪২.৭৭ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ সময়ের ব্যবধানে মোটম ৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ গুন। সরকারের বাস্তবমূখী কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশ এখন মাছ ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জন করেছে। মৎস্যজাত উৎস থেকে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, দারিদ্র বিমোচন ও রপ্তানী আয় বৃদ্ধির লক্ষে বর্তমান সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। মৎস খাতের এ অনন্য সফলতা ধরে রাখার লক্ষে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এগুলো হলো জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন, অভ্যন্তরীন জলাশয়ের আবাসস্থল উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ, পরিবেশ বান্ধব চিংড়ী চাষস ম্প্রসারণ, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সহনশীল আহরণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ মাছ সরবরাহ এবং মৎস্য ও মৎস্যজাতপণ্য রপ্তানী।
তিনি আরো বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, প্রাকৃতিক উৎসের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে ৩য় অবস্থানে উন্নিত হয়েছে। গত ৯ জুলাই ২০১৮ খ্রি. প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে যাবাৎ লাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। বর্তমানে চিন, ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থা। এতে আরো বলা হয়েছে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশে^র ৫ম ও প্রাকৃতিক এবং চাষের মাছ মিলিয়ে বিশে^ ৪র্থ। সারা বিশে^র প্রাকৃতিক উৎস থেকে মোট ৯০ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। যেখানে বাংলাদেশের উৎপাদন হয় ১০ লাখ টন। এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে দেশি প্রজাতির মাছের উন্নতজাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাছ উৎপাদন বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নদীতে জাটনিধন বন্ধে ও মা ইলিশ রক্ষার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অন্যতম ভূমিকা ইলিশ মাছের। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ৪ লাখ ৯৬ হাজার মে.টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.১৭ লাখ মে.টন। অধিদপ্তরের হিসাবে গত অর্থ বছরে দেশে উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশই ছিল ইলিশ।
ইলিশের উৎপাদন বাড়ার প্রধান কারণ, কয়েক বছর ধরেই ইলিশ রক্ষায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও নৌবাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। সবার সহায়তায় বিশেষ অভিযান ও পরিচালনা করা হয়। তাতে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষা পায়। এ কারণেই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারোর তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের মানুষের মাছ খাওয়ার পরিমাণও বেড়েছে। আগে জন প্রতি গড়ে ৬০ গ্রাম মাছ খেত, এখনতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম।
বিপন্নপ্রায় মাছের প্রজাতির সংরক্ষণ, অবাধ প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে সার্বিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের ৫৩৪টি মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। অভয়াশ্রম-সংশ্লিষ্ট জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়েছে। অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে বিলুপ্তপ্রায়এবং বিপন্ন ও দুর্লভ প্রজাতির মাছ, যথা একঠোঁট, টেরিপুঁটি, মেনি, রানী, গোড়া গুতুম, চিতল, ফলি, বামোস, কালিবাউশ, আইড়, টেংরা, সরপুঁটি, মধু পাবদা, রিঠা, কাজলি, চাকা, গজার, বাইম ইত্যাদির তাৎপর্যপূর্ণ পুনরাবির্ভাব ও প্রাপ্যতাবৃদ্ধি পেয়েছে। অভয়াশ্রমে দেশি কই, শিং, মাগুর, পাবদা, ইত্যাদি মাছের পোনা ছাড়ার ফলে এসব মাছের প্রাচুর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত কয়েক দশকে দেশে চাষ করা মাছে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে, শিং, মাগুর, পাবদার মতো আরও বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ হারিয়ে যেতে বসেছিল। গবেষণার মাধ্যমে এই জাতের মাছ এখন চাষ হচ্ছে। চাষ করা মাছ থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপাদন হয়।সাগরে মাছ ধরার নতুন নতুন সরঞ্জাম কেনা হলে মাছ উৎপাদন বেড়ে যাবে। ওই সব যন্ত্রের মাধ্যমে কোন এলাকায় বেশি মাছ আছে তা নিশ্চিত হওয়া গেলে সাগর থেকে মৎস্য আহরণ আরও বেড়ে যাবে। তাতে সার্বিকভাবে মৎস্য উৎপাদন আর ও বাড়বে।
দেশে বিপুল পরিমাণ পাঙাশ, তেলাপিয়া ও রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীনের উদ্ভাবিত মাছের জাত এখন বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন শিক্ষিত তরুণেরা চাকরির দিকে না ঝুঁকে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ ছাড়া ব্যাংক গুলো মৎস্য ও কৃষিকাজে সহজ শর্তে ঋণ দিয়েছে। এতে মাছের দিকে মানুষ ঝুঁকেছে। বাজারে মাছের ব্যাপক চাহিদা ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। ২০১৭-১৮ সালে ৬৮৩০৫ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে ৪ হাজার ৩১০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮ অনুসারে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩.৫৭% মাৎসের অবদান রয়েছে। দেশের মোট কৃষি আয়ের ২৩.৮৪% আসে মৎস্য থেকে। অভয়াশ্রম ব্যবস্থপনা ও ইলিশ প্রজনন সূরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অর্থ বছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার মে. টন, যা ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মে. টন। বৈদেশিকমুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে মৎস্যখাত ব্যাপক সফলতা অর্জন করছে। বাংলাদেশে থেকে গুনগত মান সম্পন œহিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে।
আগামী ১৮ জুলাই ২০১৯ খ্রি. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করার মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এছাড়াও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো ঃ আব্দুল হামিদ বঙ্গভবন লেক ও মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরি জাতীয় সংসদ ভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করার জন্য সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এ বছর উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিক সম্মেলন ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মৎস্য সেক্টরে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা সভা ও প্রামাণ্য চিত্রপ্রদর্শন, মৎস্য বিষয়ক আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, বিভিন্ন স্কুল কলেজে মৎস্য চাষ বিষয়ক আলোচনা ও প্রামাণ্য চিত্রপ্রদর্শন, হাট বাজার বা জনবহুল স্থানে মৎস্য চাষ বিষয়ক উদ্বুদ্ধকরণসভা ও ভিডিও/প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন এবং সর্বশেষ দিনে সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরষ্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের সবান্ধব উপস্থিতি কামনা এবং আপনাদের মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯ এর সফলতা কামনা করছি। পরিবার উন্নয়ণ সংস্থার হিসাব বিভাগ কর্মকর্ত নান্টু মিয়া, মৎস্য বিভাগের সাইফুল রহমান, শংকর দাস বক্তব্য রাখেন।

এই সময় উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক কল্যান তহবিলের আহবায়ক ইয়াছিন আরাফাত, যুগান্তর প্রতিনিধি আমির হোসেন, বালাদেশ প্রতিদিন প্রতিনিধি এম আবু ছিদ্দিক, ইত্তেফাক প্রতিনিধি মিজান নয়ন, সমকাল প্রতিনিধি নোমান সিকার, সংবাদ প্রতিনিধি জামাল মোল্লা, কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি কামরুল সিকদার, প্রমুখ।