অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


চরফ্যাশনে কুইচ্চা চাষে ১০ পরিবার স্বাবলম্বী


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩০শে জুলাই ২০১৯ রাত ১০:৩১

remove_red_eye

৬৭২

আমিনুল ইসলাম, চরফ্যাশন ।। চরফ্যাশন দক্ষিন আইচা চর হরিশ ১০ পরিবার শুরু করেছে কুইচ্চা চাষ। ময়মনসিংহ থেকে পোনা এনে ১০ টি খামারে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু চাষিদের। পল্লী উন্নয়ন সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহায়তায় বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান পরিবার উন্নয়ন সংস্থা চরফ্যাশন এর বাস্তবায়নে ৫ মাস পূর্বে প্রকল্পটি শুরু হয়। এরই মধ্যে চরফ্যাশনে ব্যপক আলোরণ সৃষ্টি করেছেন এই কুইচ্চা চাষ। কুইচ্চা চাষের জন্য চর হরিশকে কুইচ্চা পল্লী নামে নতুন রুপ নিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলা লুগাতে কুইচ্চার বিশুদ্ধ নাম কুইচ্চাই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অঞ্চলভেদে এই জলজ প্রানিকে একাধিক নামে চিনে। বাংলাদেশ ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষন ও নিরাপত্তা আইনের রক্ষিত বন্য প্রাণীর তালিকায় তফসিল ২ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। কুইচ্চা আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশেই পাওয়া যায়। অন্যান্য দেশে সাধারণত কুইচ্চার দেখা মিলে না। আমাদের দেশের নি¤œ আয়ের মানুষ জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমরুপে কুইচ্চা চাষ বেছে নিয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে শুধুমাত্র গত অর্থ বছরে ৭০.০১৭৫ টন কুইচ্চা বিদেশে রপ্তানি করে প্রায় ১.৫ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ। তাইওয়ান, হংকং, চায়না, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ প্রায় ১৭ টি দেশে কুইচ্চা রপ্তানি করা হয়। দেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এ ব্যবসার সাথে জড়িত।
সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, চরফ্যাশনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০ পরিবার আলাদা আলাদা ১০ টি খামার তৈরী করে। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১০ ফুট প্রস্ত এবং সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতায় খামার গুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী কুইচ্চার পোনা ছাড়া হয়েছে। বর্তমানে স্বল্প আকারে বিক্রি করলেও কিছু দিনের মধ্যে বড় ধরনের কুইচ্চার চালান ঢাকা পাঠানো হবে বলে জানান চাষিরা।
কুইচ্চা চাষি কমল কুলু জানান, আমাদের এই কুইচ্চা চাষাবাদ দেখে চরফ্যাশন উপজেলার অনেক বেকার যুবক, কলেজ ছাত্র খামার তৈরীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি আশাকরি খামারের কুইচ্চা রপ্তানি করে পরিবারের অর্থের চাহিদা মিটিয়ে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবো। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রেখে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে এখনই বানিজ্যিক ভিত্তিতে কুইচ্চা চাষের প্রচলন করা খুবই জরুরি।
চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত ডাঃ মাহবুব কবির বলেন, কুইচ্চা অনেক সু-সাদু খাবার, শরীরের রক্ত শুন্যতা, ডায়াবেটিস, বাত, অ্যাজমা ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। কুইচ্চা খেলে হৃদপিন্ড সুরক্ষা হয় এবং স্টোক হওয়ার প্রবনতা ১৩ শতাংশ কমে যায়। ভক্ষনযোগ্য প্রতি ১শ গ্রাম কুইচ্চা প্রায় ১৭.৭ গ্রাম প্রোটিন, ০.৮ গ্রাম চর্বি, ২.৪ গ্রাম কার্বহাইড্রেট, ১ হাজার ৪শ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন ১শ ৮৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।
চরফ্যাশন খাসমহল জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা রফিকুল ইসলাম এর নিকট কুইচ্চা খাওয়ার ইসলামিক বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলজ প্রানিদের মধ্যে আমাদের জন্য মাছ কে বৈধ করা হয়েছে। আমাদের প্রচলনে কোনটি মাছ নয় তা সকলেরই জানা আছে। কুইচ্চা, কাঁকড়া ও ফুটকা মাছ নয়। বাংলাদেশে প্রায় ৭৬ প্রজাতির মাছ রয়েছে। কুইচ্চা তাদের অন্তর্ভূক্ত নয়। মুসলমানদের জন্য কুইচ্চা অখাদ্য।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুক হোসেন মিনার বলেন, আমি চর হারিশ ১০ পরিবারের কুইচ্চা খামার গুলো পরিদর্শন করেছি। চাষিদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য একাধিক বার প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। এ উপজেলার যে কেউ কুইচ্চা চাষাবাদে আগ্রহী হলে আমরা সকল প্রকার সহযোগিতা করবো। চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এই অঞ্চলের দুস্থ পরিবারগুলো স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বেকারত্ব কমবে এবং দেশ আয় করবে অভাবনীয় বৈদেশিক মুদ্রা।
জেএসবি/৩০ জুলাই