অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন নয় চরফ্যাশনের অভিভাবকরা


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩০শে আগস্ট ২০১৯ রাত ০৯:২৭

remove_red_eye

৯৫০

 

এম আবু সিদ্দিক, চরফ্যাশন : কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে এখনো সচেতন নয় দেশের উপকূলীয় জেলা ভোলার চরফ্যাশনের অভিভাবকরা। ফলে, এ সময়টাতে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের। এদিকে, চিকিৎসকরা বলছেন, অভিভাবকরা সচেতন হলেই বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে নিরাপদ থাকবে সন্তানরা।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১১-১৮ পর্যন্ত বয়ঃসন্ধির সময় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রাইমারি শিক্ষা অতিক্রম করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার সময় থেকেই কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধির সময় শুরু হয়। এ অবস্থায় তাদের শরীর ও মনের পরিবর্তন দেখা দেয়। কিন্তু এ পরিবর্তনের সময় অভিভাবকদের পাশে না পেয়ে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে কিশোর-কিশোরীরা।
চরফ্যাশন ট্যাপনাল ব্যারেট মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চরফ্যাশন বালিকা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থী জানান, এসম্পর্কে আগে থেকে তাদের জানা না থাকায় অনেকে বিভিন্ন অসুবিধা, দুশ্চিন্তা ও ভয়ের সম্মুখীন হয়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হই এর প্রভাব পড়ে লেখা পাড়ায়।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, শারীরিক এ পরিবর্তনের বিষয় বাবা-মা কিংবা বন্ধু বন্ধাব, শিক্ষক শিক্ষার সাথে শেয়ার করতে পারি না। যার কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে আমরা বিভিন্ন সময় ভুল পথে পরিচালিত হয়ে বিপদগামী হয়ে পড়ি। তাদের পিতা মাতার উচিৎ তাদের খেয়াল রাখা যাতে করে এ পরিবর্তনের ফলে তারা কোন ধরনের ভয় পেয়ে না যায়।

চরফ্যাশন বালিকা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলারা বেগম জানান, আমার সহকর্মী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি ডাক্তারদের আহবান করেছি যেন নির্দিষ্ট একটি সময় আমার বিদ্যালয়ে এসে বয়ঃসন্ধির বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আরো বেশী উদ্ভুদ্ধ করার জন্য।

চরফ্যাশন ট্যাপনাল ব্যারেট মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তাসলিমা হোসাইন জানান, গত এক সপ্তাহ আগে ঢাকা থেকে ট্রেনিং করে এসেছি এ বিষয়ে। ট্রেনিং এর বিষয় বস্তু গুলো আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাব। যাতে করে ছেলে-মেয়েদের সমস্যা গুলো আমরা সমাধান দিতে পারি।

বয়ঃসন্ধিকালীন অবস্থায় কিশোর-কিশোরীদের বেশীরভাগ সময় কাটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাই এই বিষয় গুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে শ্রেণী কক্ষে আলোচনা করবেন বলে জানালেন এই দুই শিক্ষক।

এ দিকে বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন চিকিৎসক, শিক্ষক ও অভিজ্ঞ মহল।

এ ব্যাপারে ডা. এফ কে চৌধুরী চঞ্চল বলেন, মা-বাবা যদি সন্তানদের সাথে এ বিষয়ে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলেন, তাহলে কিশোর-কিশোরীদের সমস্যাটি অনেকাংশে লাঘব হবে বলে মনে করেন তিনি। একমাত্র অভিভাবকই পারে তাদের এ সমস্যা সমাধান করতে।

তিনি আরো বলেন, আমরা যদি এভাবে দেখি কিশোর-কিশোরীদের শৈশব থেকেই বয়ঃসন্ধি স্বাস্থ্যের যতœ নিতে হয়। কারণ আমরা মনে করে থাকি, যখন কিশোর-কিশোরীরা পূর্ণ বয়স্ক মানুষ বা তরুন-তরুনী হয়, তখনই হয়তো বয়ঃসন্ধি এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের যতœ নিতে হয়। ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। একটি শিশু যদি বয়ঃসন্ধিকালে পরামর্শ, চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সেবা ঠিকমতো না পায় তাহলে তার প্রজনন অঙ্গগুলো ঠিকমতো বেড়ে উঠবে না। এছাড়া বয়ঃসন্ধিকাল পরবর্তী কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা। কারণ প্রজনন স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে সার্বিকভাবে সুস্থ থাকা যায় না। অথচ আমাদের এখানে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে স্পষ্ট বোধ নেই। বরং এটি নিয়ে লুকোচুরি এবং চাপাচাপি থাকাতে কিছুটা অজ্ঞতা থেকে যায়। এই অজ্ঞতা থেকে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়।

বয়ঃসন্ধিকাল কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সময় অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।