অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ১লা নভেম্বর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


মনপুরায় জনগণের জন্য স্বাস্থ্য সংলাপ অনুষ্ঠিত


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ রাত ১০:০৬

remove_red_eye

৬৭৬

মেহেদি হাসান নাহিদ,মনপুরা : মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সমর্থিত, আইসিডিডিআর,বি এর ‘স্ট্রেন্থেদেনিং হেল্থ, অ্যাপ্লায়িং রিসার্চ এভিডেন্স (শেয়ার)’ প্রকল্প যৌথ উদ্যোগে বুধবার সকাল ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে ‘জনগণের জন্য স্বাস্থ্য সংলাপ’ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
জনগরে জন্য স্বাস্থ্য সংলাপ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অধ্যাপক ড. নাসিমা সুলতানা। বিশেষ অতথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. আব্দুর রহিম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ অধ্যাপক ডা. লুৎফর রহমান, ভোলা সিভিল সার্জন ডা. রথীন্দ্রনাথ মজুমদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহমেদ ,চৌগাছা- ঝিনাইদহ্ স্বাস্থ্য মডেল- এর উদ্যোক্তা ডা. ইমদাদুল হক।
ডা.ম: শফিকুল ইসলাম সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন মনপুরা সরকারী ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ মো: জাহঙ্গীর আলম,উপজেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক একেএম শাহজাহান,উত্তর সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো: জাকির হোসেন,দক্ষিন সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো: অলিউল্যাহ কাজ,প্রেসক্লাব সভাপতি মো: আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার উদ্দেশ্যেই স্থাপিত হয়েছে। যদি কমিউনিটির সচেতনতায় প্রসূতি মায়েরা নিয়মিত পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে আসে, তবেই গর্ভবতীর স্বাস্থ্যের অবনতি হবেনা, এক্লেমশিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আই.সি.ইউ- তে যাওয়ার ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। প্রতিকারের দিকে বেশি মনযোগ দিলে এই স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আরো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।
স্বাস্থ্য সংলাপের সভাপতি সেলিনা চৌধুরী বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জনপ্রতিনিধি ও নীতিনির্ধারকদের সমন্বিতভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। তা না হলে চিকিৎসকদের সেবা প্রাপ্তি স্থায়ীভাবে লাভ করা যাবেনা।
সংলাপে মূল বক্তব্য রাখেন মনপুরা উপজেলার দায়িত্বরত উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মাহমুদুর রশিদ। তিনি বলেন, মনপুরা উপজেলা একটি দ্বীপাঞ্চল, যা ভোলা জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানকার স্থানীয় লোকজন নানাধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং যথাযথ চিকিৎসা সেবার অভাবে মারা যাচ্ছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একসময় ডাক্তার ও নার্সের সংকট ছিল। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সংলাপের পর জনবলের সেই সংকট আপাতত কমলেও, স্বল্পসময়ের ব্যবধানে তাদের বদলি এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের অন্তরায়।
তিনি বক্তব্যে তুলে ধরেন, ২০১৬ সালে আইসিডিডিআর,বি-এর শেয়ার প্রকল্পের সহযোগিতায় দকমিউনিটি সাপোর্ট কমিটি গঠন ও তহবিল সংগ্রহ কার্যক্রমের সূচনা হয়। এই কমিটির অধীনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষ ৯ হাজার টাকা সংগৃহিত হয়েছে। উপকারভোগী ৮০ জন। যেখানে ২০১৬ সালে ছিল নবজাতক জন্ম নেয় ৪৪ জন আর ২০১৯ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৬ জন।
উল্লেখ্য ব্যানারে ২০১৬ সালে স্থানীয় জনগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংবাদ প্রতিনিধিদের মাঝে মত বিনিময় সভার আয়োজন করে। এরই ধারাবাহিকতায় তৃতীয়বারের মতো স্বাস্থ্য বিষয়ক সংলাপের আয়োজন করা হয় ২৫ সেপ্টেম্বর । মনপুরার মতো দুর্গম এলাকার স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচকবৃন্দ কথা বলেন।
মনপুরা প্রেসক্লাব সাবেক সভাপতি হাওলাদার আমির হোসেন ,ক্ষুদে ডাক্তার সানজিদা আক্তার নুপুর,বলেন, এই দুর্গম এলাকায় গর্ভবতী নারীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবার নেয়ার জন্য দরকার একাধিক আধুনিক দ্রুতগতির জলযান। তা না হলে, প্রাথমিক চিকিৎসার অভাবে অনেক নারী যাত্রাপথেই মারা যায়।
একইসাথে স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা হালিমা বেগম সীমা ও ইউপি সদস্য ফরিদা বেগম বলেন, এসময়ে জটিল অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এখানে কোন রক্ত পরীক্ষার সুবিধা নেই, সাম্প্রতিক ডেঙ্গু সঙ্কটে আমরা ভীষণ ঝুঁকিতে ছিলাম। বিচ্ছিন্ন চর কলাতলীতে চিকিতসা সেবার কোন ব্যাবস্থা নেই। এখানে একজন ডাক্তার রেখে চিকিতসা সেবার জন্য অনুরোধ করেন।
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততার বিষয়ে জোর দিয়ে বিজ্ঞানী ও প্রকল্প পরিচালক, শেয়ার প্রকল্প, আইসিডিডিআর, বি ড. ইকবাল আনোয়ার বলেন æমনপুরার মতো প্রত্যন্ত এলাকায় প্রতিটা মানুষ অসংক্রামক ব্যধি প্রতিরোধে সচেতন হচ্ছে। স্থানীয় জনগণের আর্থিক সহযোগিতায় হাসপাতালের সীমাবদ্ধতা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। ‘মনপুরা স্বাস্থ্য মডেল’ এই এলাকায় সাফল্য আনতে পেরেছে। যদি প্রতিটা দুর্গম এলাকায় কার্যকর করা হয়, তবে সবার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করার পথে একটি স্থায়ী পরিবর্তন বয়ে আনবে”।
এই সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,সাংবাদিক,ক্ষুদে ডাক্তার,সুশীল সমাজে নের্তৃবৃন্দ ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।