অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


ভোলার রাজাপুরে জেলে থেকে ভূয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার , রোগীদের সাথে প্রতারনা


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ রাত ১০:২১

remove_red_eye

৬৬০

 

আকতারুল ইসলাম আকাশ : ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জনতা বাজারের সালমা ফার্মেসীর নামধারী ভূয়া ডাক্তার মোঃ জসিম উদ্দিন প্রতারনা করছেন। তিনি নিজেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। জসিম ডাক্তার ওরফে (জাইল্যা জসিম) নিজেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জনতা বাজারে সালমা ফার্মেসি দোকান নামক একটি ফার্মেসি খুলে তার মধ্যে মিনি ক্লিনিক খুলে চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় প্রতি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্থানীয় গুইলগোলা নামক বাজারের পাশে এক মহিলার ঘরে চেম্বার খুলে সর্ব রোগের রোগী দেখেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১০টায় গুইলগোলা বাজারের ছাত্তার মৃধার ঘরে গিয়ে দেখা যায় ১২ বছর বয়সী এক যুবতী মেয়েকে পাশে বসিয়ে রোগের বিভিন্ন বিবরণ নিচ্ছেন। এমন সময় সাংবাদিক দেখে তিনি চমকে উঠে রোগীকে ঘরের ভিতরে পাঠিয়ে দেন।

এসময় তার সামনে একটি প্রেসক্রিপশন দেখা যায়, প্রেসক্রিপশনের এক কোনায় লেখা আছে ডাঃ মোঃ জসিম উদ্দিন, আর, এম, পি (ঢাকা) শিশু ও মহিলা রোগের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তবে প্রেসক্রিপশনে শিশু ও মহিলা রোগের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লেখা থাকলেও প্রেসক্রিপশনে রোগীর নাম লেখা আবু তালেব।

রোগী আবু তালেব বাংলার কন্ঠকে জানান, আমি ইবনেসিনায় ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু জসিম ডাক্তার প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে এই বাড়িতে চেম্বার বসিয়ে রোগী দেখেন। তাই আমি ও আমার মেয়ে এসেছি তার কাছে। কিন্তু এসে শুনি তার সনদ নেই। তিনি ভূয়া ডাক্তার।

আঞ্জুমা নামে এক রোগী বলেন, জসিম ডাক্তার প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে এখানে এসে রোগী দেখেন। আর সিরিয়াল লিখেন এই ঘরের আরেক প্রতারক জসিমের শিষ্য শামিম। ঐ সিরিয়াল অনুযায়ী তিনি রোগী দেখেন।

আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। পরে নিজেকে বিএ পাশ দাবী করলেও পরে সেই কথাটি এড়িয়ে যান তিনি। তবে তিনি মানবিক শাখা থেকে পাশ করেছে বলে দাবী করেন। আর মানবিক শাখা থেকে পাস করে চিকিৎসক হওয়া যায়না বলেও তিনি স্বীকার করেন।

এই দিকে সাংবাদিক আসার খবর শুনে স্থানীয়রা বলেন, জসিম ডাক্তার নাকি প্রতি সপ্তাহে বরিশালের একটি ক্লিনিকে গিয়েও রোগী দেখেন এমন প্রচার করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই জসিম ডাক্তার গত কয়েক বছর পূর্বে মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছও শিকার করতেন। কয়েক মাস এলাকার বাহিরে থেকে হঠাৎ এসে এই ফার্মেসী দিয়ে নিজেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছেন।

আরো জানা যায়, গত কয়েক মাস পূর্বে তার মিনি ক্লিনিকে ক্লিনিক বন্ধ করে রাতের আঁধারে মহিলা রোগী দেখার সময় সন্দেহজনকভাবে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সর্তক করে দেন। তবে এতকিছুর পরেও প্রতারক জসিম সর্তক হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।

ইলিশা ফাঁড়ির এ এসআই সুজন মাঝি জানান, জসিমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে।

রাজাপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছাদেক ছোকদার, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনউদ্দিন সহ স্থানীয়রা জানান, এই প্রতারক জসিম এর বিরুদ্ধে এই রকম অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও তিনি গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। ভূয়া চিকিৎসা করে।

রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিজানুর রহমান বলেন, জসিম ডাক্তার এর বিরুদ্ধে ভূয়া চিকিৎসার কথা আরো অনেকবার শুনেছি। কিন্তু তার কোন পরিবর্তন হচ্ছেনা।

তবে জেলা সিভিল সার্জন রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।