ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার চার্জশিট আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার পরপরই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ডিবি, সিটিটিসি, র্যাব, সিআইডি ও বিজিবি যৌথভাবে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার দিনই শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ ওরফে রাহুল এবং তার সহযোগী মোটরসাইকেলচালক মো. আলমগীর শেখকে শনাক্ত করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল সাভার, হেমায়েতপুর, আগারগাঁও ও নরসিংদীতে অভিযান পরিচালনা করে।
ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএমপির একটি দল ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী এলাকাতেও অভিযান চালায়।
তিনি আরও জানান, মামলাটি নিবিড় তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তে পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ, ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি লুকানো এবং মূল দুই আসামিকে পলায়নে সহায়তার অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- হুমায়ুন কবির (৭০), হাসি বেগম (৬০), সাহেদা পারভীন সামিয়া (২৪), ওয়াহিদ আহমেদ শিপু (২৭), মারিয়া আক্তার লিমা (২১), মো. কবির (৩৩), নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল (৩৪), সিবিয়ন দিও (৩২), সঞ্জয় চিসিম (২৩), মো. আমিনুল ইসলাম রাজু (৩৭) ও মো. আব্দুল হান্নান (৪২)।
এই ঘটনায় জব্দ করা উল্লেখযোগ্য আলামতের মধ্যে রয়েছে- হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন ও ছোরা, ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট, ঘটনার সময় ওসমান হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা গুলির খোসা ও বুলেট, ভিডিওচিত্র, সিসিটিভি ফুটেজসহ অন্যান্য আলামত এবং প্রায় ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক।
তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল ও আলমগীর ঘটনার পরপরই ঢাকা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আমিনবাজার যান। সেখান থেকে তারা মানিকগঞ্জের কালামপুর হয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছান। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মূল দুই অভিযুক্ত অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে থাকতে পারে।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ফয়সালের বাবা-মা, স্ত্রী, শ্যালক, প্রেমিকা এবং পলায়নে সহায়তাকারী নুরুজ্জামান বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া ফয়সাল ও আলমগীরকে পরিবহনকারী তিনজন গাড়িচালক এবং শহীদ শরিফ ওসমান হাদির অটোরিকশাচালক সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বলেন, চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। গ্রেপ্তারদের জবানবন্দি, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও উদ্ধারকৃত আলামত পর্যালোচনায় মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পুলিশের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম।