অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শনিবার, ২৭শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় নিহত ৪ যাত্রীর পরিবারে চলছে শোকের মাতম


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭শে ডিসেম্বর ২০২৫ সকাল ১০:৩৫

remove_red_eye

১৮

ঘনকুয়াশায় মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক : মেঘনা নদীতে ঢাকাগামী এমভি জাকির সম্রাট-৩ এবং অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনায় ভোলার ৪ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয় আরো অন্তত ১৫ জন। নিহতদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। নিহতরা হলেন,আব্দুল গনি (৩৮), মোঃ সাজু (৪৫), হানিফ (৬০) এবং মোছাঃ রিনা (৩৫)।এদের তিনজনের বাড়ি লালমোহন উপজেলায়, একজনের বাড়ি চরফ্যাশনে। নিহতের পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে ।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক দুইটার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি আডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ১৫ জন যাত্রী। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের এসপি সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। 


এদিকে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লালমোহন ও চরফ্যাশনে নিহতের বাড়িতে নেমেছে শোকের ছায়া। প্রিয়জনকে হারিয়ে স্বজনদের কান্না ও আহাজারি পুরো এলাকায় ভারী হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে বাড়িতে ভীড় করতে দেখা গেছে। নিহতদের মধ্যে লালমোহন বদরপুর ইউনিয়নের কাজিরাবাদ গ্রামের রাজমিস্ত্রি গণি ও কৃষক সাজু এবং পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কচুয়াখালী গ্রামের লাল মিয়া গাজি বাড়ির গার্মেন্ট কর্মী রিনা বেগমের বাড়িতে আহাজারি চলছে। স্বামী মোঃ হোসেন ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতো।  ৭-৮ বছর আগে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ জীবন যাপনের জন্য স্বামীর সাথে ঢাকায় চলে যায় রিনা বেগম। তাদের একমাত্র কন্যা সাথী বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে থাকতো।

স্থানীয় কচুয়াখালী মহিলা মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাথী মায়ের করুন মৃত্যুর খবর শুনে বার বা মূর্”া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাবা ও মা একসাথে মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লঞ্চে উঠে কচুয়াখালী ঘাট থেকে। যাবার বেলায় বলে যান রোজার ঈদে আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু সেই রাতেই শুনতে পান মায়ের মৃত্যুর সংবাদ। বাবাও গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছেন।


কাজিরাবাদ গ্রামের বেপারী বাড়ির নিহত রাজমিস্ত্রি আব্দুল গণির বাড়িতে স্ত্রী লাইজু বেগম ৩টি শিশু সন্তান নিয়ে আহাজারি করছে। সন্তানদের এখন কি হবে- কে তাদের দেখবে-এমন আহাজারিতে ভাড়ি হয়ে উঠছে ওই এলাকার বাতাস। ওই গ্রামের সেরাজল বেপারীর ছেলে গণি দীর্ঘদিন ঢাকাতে রাজ মিস্ত্রির কাজ করতো। ১০দিন আগে বাড়িতে আসে। বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে একই এলাকার ৫জন দেউলা ঘাট দিয়ে লঞ্চে উঠেন।  তারা লঞ্চে একই সাথে রাতে ঘুমান। দুর্ঘটনায় গণি ও সাজু নামে দুইজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া মিলন ও শাহাদাৎ নামে তাদের সাথে থাকা দুইজনের অবস্থাও আশংকাজনক। নিহত সাজুর একই এলাকার খাঁ বাড়ির কালু খার ছেলে। তিনি ঢাকায় একজনের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করার জন্য যাচ্ছিলেন।    মরদেহগুলো রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। শুক্রবার রাতেই মরদেহ নিয়ে ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
এদিকে লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ মো. অলিউল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল লালমোহন এলাকায় না হলেও, ভুক্তভোগী পরিবার সহায়তা চাইলে যথাযথ সহায়তা দেওয়া হবে।


মোঃ ইয়ামিন