অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


কমছে খেজুর গাছ, দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠছে রস


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১শে ডিসেম্বর ২০২৫ রাত ০৯:১১

remove_red_eye

৮৫

আকবর জুয়েল, লালমোহন: এক দশক আগেও শীতের মৌসুমে খেজুর গাছ কাটার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে চরম ব্যস্ত থাকতেন গাছিরা। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। তবে গ্রামবাংলার এ দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ভোলার লালমোহন উপজেলায় দিন দিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ। দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠছে খেজুরের রসও। 
এই উপজেলায় কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন বাড়িতে, সড়কের দুই পাশে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। অযত্ন-অবহেলায় কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই এসব গাছ বেড়ে ওঠতো। তবে নির্বিচারে খেজুর গাছ নিধনের ফলে এখন আর তেমন দেখা যায় না।

এদিকে, শীতের মৌসুম শুরু হতেই লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে সীমিত সংখ্যক যেসব খেজুর গাছ রয়েছে, তা থেকে রস আহরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাছিরা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক এই মধুবৃক্ষ (খেজুর গাছ) ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তুলনামূলকভাবে এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। তবে গ্রামগঞ্জের মেঠোপথের ধারে কিছু গাছ কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

এমনই কয়েকটি খেজুর গাছ দেখা গেছে লালমোহন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ পাড়া এলাকার ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে। ওই এলাকার গাছি মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, শীতের মৌসুমে খেজুর গাছ কাটি। এক সময় ৫০ থেকে ৬০টি পর্যন্ত গাছ কাটতে পারতাম। তবে বর্তমানে গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এ মৌসুমে ১২ টির মতো গাছ কাটছি। আপাতত গাছ কেটে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করতে পারবো। শীতের আড়াই মাস ধরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করবো। প্রতি হাড়ি রস দুইশত টাকা করে বিক্রি করি। তবুও মানুষের চাহিদার শেষ নেই। কারণ গাছ কম থাকায় মানুষের চাহিদা অনুযায়ী রস সংগ্রহ করা যায় না।

উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পাঙাশিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু বকর ও মোছলেহ উদ্দিন জানান, এক সময় আমাদের এলাকায় সারি সারি খেজুর গাছ ছিল। তবে এখন খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। যে জন্য সুস্বাদু রস এখন আর তেমন নেই। কিছু কিছু গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হলেও দাম অনেক বেশি। এক হাড়ি রস এখন দুইশত টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তাও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। অথচ গত কয়েক বছর আগেও প্রতি হাড়ি রসের দাম ছিল ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা। জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ইটভাটায় খেজুর গাছ পোড়াতে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ। তাই প্রাকৃতিক সুস্বাদু এই রসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারি-বেসরকারিভাবে খেজুর গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন বলেন, খেজুরে রস এবং গুড়ের বিপণন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কৃষকরা খেজুর গাছ লাগাতে আগ্রহী না। যার জন্য এই উপজেলায় খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। তবুও ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের খেজুর গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করছি। 

লালমোহন উপজেলা রেঞ্জ বন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাস জানান, আপাতত আমাদের খেজুর গাছ রোপণ করার মতো কোনো প্রকল্প নেই। তবে আমরা এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এছাড়া স্বাভাবিকভাবে খেজুর গাছ না কাটতে এবং নতুন করে চারা রোপণ করতে আমরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি।


লালমোহন মোঃ ইয়ামিন