অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


গৌরবময় মহান মুক্তিযুদ্ধ : ভোলার ওয়াবদা ভবন ছিল পাক সেনাদের টর্চার সেল


অমিতাভ অপু

প্রকাশিত: ১৩ই ডিসেম্বর ২০২৫ রাত ১০:৩৭

remove_red_eye

৬১

            ক্যামেরায় ধারণ করেন সাংবাদিক হাবিবুর রহমান
 
অমিতাভ অপু : ভোলায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমরযোদ্ধাদের পাশাপাশি সাংবাদিক যোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, এম. হাবিবুর রহমান। যিনি ৮৬ বছর বয়সে গেল মাসের ( নভেম্বর) ২৪ তারিখ বিকাল ৩টায় শ্¦াস কষ্ট জনিত কারণে ইন্তকাল করেন। এ  বছর বিজয় মাসে তার মুখে আর শোনা যাবে না পাক হানাদারদের নির্মম নিষ্ঠুর টর্চার সেলের প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণানা। জীবিত হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে নেয়া সাক্ষাতকারটির তথ্যে তুলে ধরা হলো ভোলায় পাক হানাদার বাহিনীর টর্চার সেলের গল্প।  
১৯৭১ সালের ৫ মে  দ্বীপ জেলা ভোলায় ( তৎকালীন মহকুমা সদর) প্রবেশ করে পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর বহর। খেয়াঘাট থেকে মার্চ করে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস চত্বরে ঘাটি স্থাপন করে। ওই সময় ওয়াবাদা ভবন নামেই এটি পরিচিত ছিল। এই মূলঘাটি থেকেই পাক সেনাদেও পরিচালিত করা হতো। এই দফতরের পেছন দিকে তৈরি করা হয় টর্চার সেল। এখানেই পরবর্তী ৬ মাস স্বাধীনতায় বিশ্বাসী অসংখ্য  মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়েছে। ব্যানট দিয়ে খুঁচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এমন নির্যাতনের ছবি ধারণ  করেছেন এম. হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান একজন ভালো মানের ফুটবল খেলোয়ার ছিলেন। খেলোয়ার হিসেবে তার চাকুরি হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডে। ওই দফতরের ফুটবল টিম ছিল বেশ জমজমাট। হাবিবুর রহমান ওই টিমের হয়ে খেলতেন। এই সুবাদে ওয়াবদা অফিসে তার যাতায়াত ও অবস্থান ছিল। ৭০ সালের ভয়াল ১২ নভেম্বরের গোর্কির জলোচ্ছ্বাসে এ অঞ্চলের ৫ লাখ মানুষের মৃত্যুর সচিত্র প্রতিবেদন তৎকালীন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ করায় সাংবাদিক হিসেবে হাবিবুর রহমানের নামও ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব-অঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিকতার হাতে খড়ি দিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ হোসেন বাবুল। এই ফরিদ হোসেন বাবুলকে সঙ্গে নিয়ে ওয়াবদা অফিসের পেছনের দেয়াল ঘেষে হোগলা পাতার আড়াল থেকে টর্চার সেলের ছবি তোলেন হাবিবুর রহমান। ওই ছবি পরবর্তিতে পূর্বদেশসহ জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ধরা পড়লে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সেই দিন হাবিবুর রহমান ও ফরিদ হোসেন বাবুল ওই ছবি ক্যামেরায় ধারণ করে ছিলেন। পাকহানাদার বাহিনীর এই টর্চার সেলের পাশের হোগলা বনের গহীন জঙ্গলে ও গর্তে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর লাশ ফেলে রাখা হতো। বর্তমানে ওই স্থানই বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। টর্চার সেলের পাশে ছিল পাক কমান্ডারের কক্ষ। সেখানে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রীদের তুলে এনে নির্যাতন করা হতো। ওদের মনোরঞ্জনের জন্য গানের জলসা বসানো হতো। শিল্পীদের বাধ্য করা হতো গান গাইতে। এমন অসংখ্য নির্যাতনের সাক্ষী এই ওয়াবদা ভবন। আর এই সব নির্যাতনের অনেক ছবিই ক্যামেরাবন্দি করেন হাবিবুর রহমান। তাই হাবিবুর রহমান না ফেরার দেশে চলে গেলেও রয়েগেছে তার এই অনবদ্য সাহসী সাংবাদিকতার দিনগুলো। এ জন্য সাংবাদিকতার জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন কয়েক বার। সেই কর্মকান্ড আজও শ্রদ্ধায় স্মরণীয় ।  হাবিবুর রহমান ৯ বার ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও ৮ বার সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন কওে ছিলেন। দৈনিক বাংলার কন্ঠ নামের স্থানীয় পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ বেতারের প্রতিনিধিও ছিলেন। 

অমিতাভ অপু মোঃ ইয়ামিন