অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


ধীরে ধীরে মুরুব্বী শূন্য হয়ে যাচ্ছে আমাদের এই চেনা শহর ভোলা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৬শে নভেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যা ০৭:১২

remove_red_eye

৯৮

॥ মাহাবুব আলম নীরব মোল্লা ॥
চলে গেলেন ভোলার সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম পথিকৃৎ সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, এক সময়ের দাপুটে ফুটবল খেলোয়াড় স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা বাংলার কন্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এম. হাবিবুর রহমান, হাবিব ভাই। 
শৈশবের আতুর ঘর পেরিয়ে যখন স্কুলে ভর্তি হলাম বন্ধুবান্ধব হলো, আমাদের স্কুলের মাঠে তখন বর্ষার দিনে ফুটবল খেলা লেগেই থাকত। এছাড়াও বর্তমানে যেখানে ভোলা স্টেডিয়াম সেখানেও ফুটবল খেলা হত জমজমাট। আমি তাকে প্রথম যখন চিনতে শুরু করি তখন তাকে একজন ভালো মানের ফুটবলার হিসেবেই জানতাম।
তিনি ছিলেন খুব স্টাইলিস্ট একজন ফুটবলার। সহজেই চোখে পড়ার মতো। তখন সাংবাদিকতা কি জিনিস এটা ঠিক বুঝতাম না। খেলোয়াড় হাবিব ভাইকে চিন্তে, আরো যখন একটু বয়স বাড়লো এবং ১৯৬৫ তে, যখন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ লাগলো আমরা ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্য এক রূপ জানতে শুরু করলাম।
আমাদের ব্যবসায়িক গদিতে তখন কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা রাখা হতো। দৈনিক  ইত্তেফাক, দৈনিক পূর্বদেশ, এবং সংবাদ। এ-ই পত্রিকায় যারা সংবাদ পাঠানোর কাজ করেন তাদেরকে লোকেরা সাংবাদিক নামে জানেন। হাবিব ভাই, ফারুক স্যার, আবু তাহের ভাইরা তখন মফস্বল শহরে এই কাজ করে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীকালে আরও অনেকে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। 
এমনকি রাজনৈতিক অঙ্গনের মোশাররফ হোসেন শাজাহান, ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা আফসার উদ্দিন বাবুল, ফরিদ হোসেন বাবুল, বাহার ভাই, মোবাশ্বের  ভাইও এতে যুক্ত হন।
তখন সাংবাদিকতা ছিল এক মহান ও সাহসী পেশা। ষাটের দশকে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতনের স্বীকার হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে লিখেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে এদের অবদান চির স্বরণীয় হয়ে থাকবে। 
হাবিব ভাই ছিলেন একজন বিনয়ী এবং বিদগ্ধ মানুষ। তিনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়ো হলেও কেন জানিনা আমাকে কখনো তুমি বা তুই ব’লে সম্বোধন করতেন না; “নীরব ভাই” এবং অথবা “নীরব মিয়া” বলে ডাকতেন। 
আমার কিছু লেখা লিখির অভ্যাস ছিল। একদিন তিনি আমাকে সময় পেলে তার পত্রিকায় লিখতে বলেন, আমি একটি লেখা, সাংবাদিক মোকাম্মেলের কাছে দিয়ে আসি। সেই লেখাটি ২৪শে মে বুধবার ১৯৯৫, ১০ই জৈষ্ঠ প্রকাশিত হয়। আমার লেখার শিরোনাম ছিল “রাজনৈতিক মিথ্যাচার, / স্বহিংসতা এবং আগামী প্রজন্মের কাছে বর্তমানের জবাবদিহিতা” এরপর ওনার সাথে আমার একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠে যা মৃত্যু পর্যন্ত অটুট ছিল। 
আমাদের জাগতিক জীবনে আমাদের প্রয়োজন, আমাদের অনেক সময়ে অনেক কিছু করতে বাধ্য করে। আমরা মানুষেরা ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে নই। হাবিব ভাইও হয়তো তার ব্যতিক্রম নন। তবে একজীবনে তাঁর কিছু স্বরণীয় কর্ম আমাদের কাছে তাঁকে স্বরণীয় করে রাখবে। ১৯৭০ ভয়াবহ জ্বলোচ্ছ্বাসে তার সাংবাদিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, ভোলার গাছে গাছে ঝুলছে মানুষের লাশের ছবিসহ একটি প্রতিবেদন গোটা পৃথিবীর মানবিক মানুষের বিবেক’কে নাড়া দেয়। সমস্ত পৃথিবী থেকে মানুষ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন। পাকিস্তানের শাসকদের তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষদের প্রতি অবহেলার চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে প্রতিয়মান করে তোলে। তিনি মুক্তিযুদ্ধেও তার সাংবাদিক পেশাকে কাজে লাগান; যা ছিল জীবনের জন্য ঝুঁকিপুর্ণ।
একটি জাতি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় যারা ভুমিকা রাখেন, তাদেরকে সম্মান জানানো আমাদেরকেই সম্মানিত করে। আমি গভীর শ্রদ্ধায় আজ এই মানুষকে স্বরণ করে একটি কথা বলতে চাই আসুন আমরা মানুষের জীবনের ভালো কাজগুলো মনে করে তাদের ভুলগুলো ক্ষমা করি। 
মানুষকে ভালো বাসতে শিখি, দেশকে ভালোবেসে দেশের কল্যাণে আমাদের নৈতিকতা নিয়ে এগিয়ে যাই। [ লেখক : কবি ও সাংবাদিক ।]


দৈনিক বাংলার কণ্ঠ ভোলা জেলা মোঃ ইয়ামিন