বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫শে নভেম্বর ২০২৫ বিকাল ০৫:৫৪
১৯৫
।। এম বজলুর রহমান ।।
“হাবি রিপোর্টারের কাছে কথা বললে মনে হতো, কেউ আমাদের হয়ে বলবে।” ভোলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক বাংলার কণ্ঠ এর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. হাবিবুর রহমান (৮৫) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সোমবার দুপুর তিনটার দিকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। খবরটি ভোলার মানুষকে যেন হঠাৎ শূন্যতার ভেতরে ফেলে দিল। বহু দশক ধরে যিনি ভোলা দ্বীপের সুখ-দুঃখের গল্প, মানুষের কান্না আর লড়াইয়ের কাহীনি সংবাদপত্র ও বেতারের ভাষায় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাঁর প্রস্থানে ভোলার সংবাদজগতের এক পুরোনো অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। এম হাবিবুর রহমান শুধু একজন পেশাদার সাংবাদিকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভোলার এক জীবন্ত অভিলেখ। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি বাংলাদেশ বেতারের ভোলা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। বেতারের অনন্য শক্তি দূর-দূরান্তের বাড়ি, চরের ঘর, মাছধরা নৌকা কিংবা চায়ের দোকান পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার সামর্থ্য তাঁর রিপোর্টের মধ্য দিয়েই ভোলার মানুষের জীবন সংগ্রামকে জাতীয় পরিসরে পরিচিত করেছে। ১৯৬৬ সালে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন এম. হাবিবুর রহমান। ১৯৭০ সালের মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপজেলা ভোলায় গাছে গাছে মানুষের লাশ ঝুলতে থাকাসহ ভয়াবহ ধংসযজ্ঞের সচিত্র খবর এম হাবিবুর রহমান প্রথম দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরেন। এছাড়া ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচার- নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার ছিলেন প্রবীণ এ কলম সৈনিক। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখে গেছেন অবহেলিত দ্বীপজেলা ভোলার মানুষের উন্নয়ন, সংকট, সম্ভাবনা নিয়ে। তখন ভোলা ছিল আরও দুর্গম, যোগাযোগ ছিল সীমিত, কিন্তু খবর পৌঁছে দেওয়ার আগ্রহ আর দায়বদ্ধতা তাঁকে ঠেলে নিয়ে গেছে দূরের চরে, নদীভাঙা গ্রামে, ঝড়ের ক্ষতবিক্ষত জনপদে। সেইসব পথচলার এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হচ্ছে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়।
১৯৭০ সালের নভেম্বরের সেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলের বিশেষ করে ভোলা ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানী ঘটে, পুরো জনপদ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এম হাবিবুর রহমান তখন দৈনিক পুর্বদেশ-এর জন্য একটি মানুষকেন্দ্রিক প্রতিবেদন পাঠান, যেটি পরদিন প্রথম পাতায় আট কলামে ছাপা হয়। ধ্বংসস্তূপের ছবির নিচে তাঁর পাঠানো কথাগুলো আসলে ভোলার জনজীবনের হাহাকার, শোক আর টিকে থাকার জেদকে একসঙ্গে ধারণ করেছিল। খবরের ভাষায় তিনি শুধু মৃত্যুর সংখ্যা লেখেননি; লিখেছেন বিধ্বস্ত পরিবার, অনাথ শিশু, হারানো চাষির জমি, মাছধরা জেলে আর চরবাসীর বুক ফাটা দীর্ঘশ্বাসের কথা। দুর্যোগের সেই তাৎক্ষণিক মানবিক ক্ষতির পাশাপাশি, ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গভীর পরিবর্তনের বীজ রোপিত হয়, এম হাবিবুর রহমানের সেইসব মাঠের খবর আসলে সেই পরিবর্তনের জনমুখী প্রেক্ষাপটও নির্মাণ করছিল। মানুষের বঞ্চনা, রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, স্থানীয় মানুষের স্থিতিস্থাপকতা এসব বাস্তবতার দলিল হয়ে তাঁর রিপোর্ট ভবিষ্যতের ইতিহাস লেখারও উপাদান হয়ে ওঠে। এক অর্থে বলা যায়, ভোলার মাটি থেকে তিনি নতুন দেশের জন্মকে দেখেছেন জনগণের চোখ দিয়ে। ভোলার মানুষ তাঁকে যে নামে সবচেয়ে বেশি চিনত, তা হলো ‘হাবি রিপোর্টার’। নামের মাঝে যেমন স্নেহ, তেমনি এক ধরনের আস্থাও লুকিয়ে আছে। মানুষের বাড়িতে গেছেন, চায়ের দোকানে বসেছেন, ফেরিঘাটে দাঁড়িয়ে খোঁজ নিয়েছেন তিনি শুধু খবর সংগ্রহ করতে যাননি, মানুষের প্রতি তাঁর একটা ঘনিষ্ঠ দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। তাই অনেকের ভাষায়, “হাবি রিপোর্টারের কাছে কথা বললে মনে হতো, কেউ আমাদের হয়ে বলবে।”
ভোলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হিসেবে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের সংগঠিত করতে, পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতার মানদণ্ড গড়ে তুলতে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। নবীন রিপোর্টারদের তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে ছোট্ট একটি খবরের মধ্যেও মানুষের মুখ, নাম আর স্বপ্নকে জায়গা দিতে হয়; কীভাবে নির্ভীক থেকে সত্যকে লিখতে হয়, আবার একই সঙ্গে সংবেদনশীলও থাকতে হয়। তাঁর সততা ও গাম্ভীর্য ভোলার সাংবাদিক সমাজের কাছে ছিল অনুসরণের উদাহরণ। বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে দীর্ঘ কর্মসম্পৃক্ততার কারণে এম হাবিবুর রহমান একদিকে যেমন ভোলার কণ্ঠস্বরকে জাতীয় অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, অন্যদিকে ঢাকা কেন্দ্রিক নীতিনির্ধারকদের কাছেও ভোলার সংকট, দুর্গত মানুষের দুর্দশা ও উন্নয়নের সম্ভাবনার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। উপকূলের নদীভাঙন, ভূমিক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সড়ক-নদীপথের সংকট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা এসব বিষয় তাঁর রিপোর্টে নিয়মিত উঠে এসেছে।
১৯৮৫ সালে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে (পিআইবি) পুরোনো সংবাদপত্র ঘাঁটতে গিয়ে যখন পুর্বদেশ এর সেই পুরোনো কপি দেখা যায়, তখন ছোট্ট এক লাইন চোখে পড়ে “ ভোলা থেকে এম হাবিবুর রহমান”। ভোলার দূরবর্তী দ্বীপ থেকে পাঠানো সেই খবর, সেই নাম যেন কাগজের পাতায় এক টুকরো উপকূলীয় বাস্তবতা। পরে জানা যায়, ভোলার মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ‘হাবি রিপোর্টার’ আসলে ‘হাবিব রিপোর্টার’। যার কাগুজে নাম এম. হাবিবুর রহমান। একদিকে পুরোনো কাগজের আর্কাইভে টিকে থাকা নাম, অন্যদিকে জীবন্ত মানুষ এই মিলের ভেতরেই বোঝা যায় একজন সাংবাদিকের জীবন কীভাবে ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। এম হাবিবুর রহমানের মৃত্যু ভোলার জন্য শুধু একজন গুণী ব্যক্তির প্রয়াণ নয়; এটি এক দীর্ঘ সাংবাদিকতা-যাত্রার ইতি, যা উপকূলের মানুষের কণ্ঠস্বরকে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরে এসেছে। এখন দরকার তাঁর লেখা, স্মৃতি ও অবদানকে নথিবদ্ধ করা। ভোলা প্রেসক্লাব, স্থানীয় গণমাধ্যম ও গবেষক সমাজ যদি উদ্যোগ নেয়, তবে ‘হাবি রিপোর্টার’-এর রিপোর্টগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক মূল্যবান আর্কাইভ হয়ে উঠতে পারে। তরুণ সাংবাদিকদের জন্য তা হবে সততা, মানবিকতা ও সাহসী প্রতিবেদনের এক স্কুল। আমরা এম হাবিবুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এবং শোকাহত পরিবারকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দান করেন ! আমিন!! ভোলার বাতাসে, রেডিওর তরঙ্গে, পুরোনো সংবাদপত্রের পাতায় ‘হাবি রিপোর্টার’-এর নাম তাই থেকে যাবে একজন মানুষের মতো, যিনি দূরবর্তী এক দ্বীপের মানুষের কণ্ঠস্বরকে সারা দেশে পৌঁছে দিতে আজীবন কলম আর মাইক্রোফোনকে সঙ্গী করেছিলেন। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার একমাত্র ছেলে হাসিব রহমান মাছরাঙা টেলিভিশন ও দৈনিক জনকণ্ঠের ভোলা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
[ এ এইচ এম বজলুর রহমান, ডিজিটাল গণতন্ত্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশে দায়িত্বশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক দূত ]
ভোলায় ধান চাউল আড়ৎ মালিক সমিতির কমিটি গঠন
আমরা সবাই চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভোলায় আবাসিক হোটেল থেকে ব্যবসয়ারী ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
ভোলায় অসহায় দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনআইডি পাবেন তারেক রহমান
বাবার সঙ্গে ভোটার হচ্ছেন জাইমা রহমান
ঢাকা-১৭ আসনে ভোটার হচ্ছেন তারেক রহমান: ইসি সচিব
ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান
মাঠেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ
বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন পেলেন রাশেদ খান
ভোলায় বিষের বোতল নিয়ে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকা
ভোলায় পাঁচ সন্তানের জননীকে গলা কেটে হত্যা
ভোলার ৪৩ এলাকা রেড জোন চিহ্নিত: আসছে লকডাউনের ঘোষনা
উৎসবের ঋতু হেমন্ত কাল
ভোলায় বাবা-মেয়ে করোনায় আক্রান্ত, ৪৫ বাড়ি লকডাউন
ভোলায় এবার কলেজ ছাত্র হত্যা, মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার
ঢাকা-ভোলা নৌ-রুটের দিবা সার্ভিসে যুক্ত হলো এমভি দোয়েল পাখি-১র
ভোলায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন করোনা রোগী: এলাকায় আতংক
জাতীয় সংসদে জাতির পিতার ছবি টানানোর নির্দেশ
ভোলায় কুপিয়ে হত্যা করে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক এক