অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় ক্ষুদ্র জেলেদের জন্য নিরাপদ বিকল্প জীবিকা নিশ্চিতের দাবী


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০শে অক্টোবর ২০২৫ সন্ধ্যা ০৭:৫২

remove_red_eye

২২৫

বিশেষ প্রতিবেদক : ভোলার প্রায় দুই লাখ জেলেসহ উপকূলের পাঁচ লাখ ক্ষুদ্র জেলের জীবিকা আজ মারাত্মক সংকটে। সংকট মোকাবেলায় বিকল্প টেকসই জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে।
নদী-সাগরে মাছ ধরায় মৌসুমী নিষেধাজ্ঞা(মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণ অভিযান) জেলেদের আয়ের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে, অথচ বিকল্প জীবিকার কোনো টেকসই ব্যবস্থা এখনো হয়নি। এ বাস্তবতায়, ‘শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, নিরাপদ বিকল্প জীবিকা চাই: ক্ষুদ্র জেলেদের ন্যায্য সহায়তা নিশ্চিত করুন’ শিরোনামে সোমবার সকালে কোস্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ভোলা সার্কিট হাউস এলাকায় তাদের নিজস্ব মিলনায়তনে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওই সেমিনারে মুক্তালোচনায় উপস্থিত বক্তারা এমন কথা বলেছেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক টিম লিডার রাশিদা বেগম, আর সঞ্চালনা করেন ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক সনৎ কুমার ভৌমিক। আলোচনায় অংশ নেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন, কোস্টগার্ড কর্মকর্তা ফিরোজ আল হাসান, সাংবাদিক নজরুল হক অনু, মোকাম্মেল হক মিলন, শিল্পী রানী রায়, এবং জেলে প্রতিনিধি এরশাদ আলী প্রমুখ। কর্মশালায় ৫০ জনেরও বেশি জেলে ও তাঁদের পরিবার উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা সফল করতে হলে জেলেদের আয়বর্ধক বিকল্প কর্মসংস্থান জরুরি। জেলেদের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, পরিবার পরিকল্পনা সচেতনতা বাড়াতে হবে, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং নদী-খালে খাঁচায় মাছচাষ, সুঁটকি করা, গবাদিপশু ও হাঁসমুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রায় ৪.৫ লাখ মানুষ সরাসরি ইলিশ মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত, আর এই খাত থেকে ২৫ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিবছর মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা পরিবেশগতভাবে প্রয়োজনীয় হলেও, ক্ষুদ্র জেলেরা তখন সম্পূর্ণ আয়ের উৎস হারান। কোস্ট ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, ভোলার ১ লাখ ৬৮ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত জেলের মধ্যে প্রায় অর্ধেক এখনো সরকারি সহায়তা পান না। অনেক প্রকৃত জেলে নিবন্ধনের বাইরে থেকে বঞ্চিত। নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারি চাল সহায়তাও সময়মতো পৌঁছায় না।
৮৩শতাংশ জেলে পরিবার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর তাঁরা সহায়তা পাচ্ছেন, যা কাজে লাগছে না।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত জেলে বাদ পড়ে, অজেলেরা তালিকায় স্থান পান। অন্যদিকে, বড় ট্রলার ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দায়মুক্ত থেকে যায়। বক্তারা তাই ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রকৃত জেলে তালিকা হালনাগাদ, ডিজিটাল প্রণোদনা ট্র্যাকিং এবং ন্যায্য সহায়তা কাঠামো গঠনের দাবি জানান।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ৮৭শতাংশ জেলে পরিবার কখনো কোনো বিকল্প কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ পাননি। নিষেধাজ্ঞার সময় তারা ঋণের ফাঁদে পড়ে আবারও দাদনদারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এ ঋণচক্র থেকে মুক্তি দিতে সল্পসুদে সমবায়ভিত্তিক ঋণ ও প্রশিক্ষণ সহায়তা চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনও এখন জেলেদের জীবিকায় বড় হুমকি। ক্রমবর্ধমান ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন ও মাছের অভিবাসন পরিবর্তনের কারণে তাদের খরচ বাড়ছে, উৎপাদন কমছে। ২০২৫ সালে ইলিশ আহরণ গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০শতাং কমেছে।
মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী বলেন, জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল সঠিক জেলেরা পাচ্ছে না। তারপরেও ৯৯ভাগ জেলে সরকারি আই মেনে চলছে।
বক্তারা ৯ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখ করেন,প্রকৃত জেলেদের তালিকা হালনাগাদ, মাসিক ৮হাজার টাকা ও ৪০ কেজি চাল সহায়তা, নিষেধাজ্ঞার আগেই প্রণোদনা বিতরণ, নারী ও যুব জেলেদের প্রশিক্ষণ সহায়তা, এবং মানতা সম্প্রদায়কে দ্রুত জেলে কার্ডের আওতায় আনতে হবে।
বক্তারা আরও জানান, ক্ষুদ্র জেলেরা রাষ্ট্রের বোঝা নয়, বরং খাদ্যনিরাপত্তা ও নীল অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। মা ইলিশ রক্ষা যেমন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, তেমনি জেলেদের জীবন রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সদিচ্ছা ও সময়োপযোগী নীতি প্রয়োগই পারে এই উপকূলের জেলেদের টেকসই জীবিকা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে।


ভোলা সদর মোঃ ইয়ামিন



আরও...