অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


চরফ্যাশনে চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতির নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ


চরফ্যাসন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৭ই অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৪:০৫

remove_red_eye

৯৮

এআর সোহেব চৌধুরী ,চরফ্যাশন : চরফ্যাশনে ডাক্তার আঁখি আক্তারের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর পর এবার অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। 
‎গত ‎রবিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে চরফ্যাশন উপজেলার করিমজান মহিলা মাদ্রাসা রোডে অবস্থিত বেসরকারি ক্লিনিক ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে।
‎নিহত নবজাতকের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় ২নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মো. বাবুল মিয়া তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে নিয়ে সকাল ১০ টার দিকে চরফ্যাশনের মেঘনা ল্যাব এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক আঁখি আক্তারের কাছে নিয়ে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওই চিকিৎসক আঁখি ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হতে বলেন। এরপর বেলা ১২টার দিকে রোগীকে ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিকে ভর্তি করা হয়। 
ভুক্তভোগী বাবুল মিয়ার অভিযোগ, ভর্তি করার পর ডাক্তার আঁখি আক্তার আর সেখানে আসেননি। বরং একজন নার্স ও আয়াকে দিয়ে ডেলিভারির পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়, তবে দেড় ঘণ্টা পরও পরিবারকে কোনো খবর জানানো হয়নি।
নিহত নবজাতকের পিতা বাবুল মিয়া বলেন,“আমি ডাক্তার আঁখি আক্তারের পরামর্শে স্ত্রীকে ভর্তি করেছিলাম। ডাক্তার ওষুধ লিখে রক্ত আনতে বলেন, আমি সব প্রস্তুতি নিই। কিন্তু তিনি একবারও এসে রোগীর খোঁজ খবর নেননি। একজন নার্স আর আয়াই ডেলিভারির কাজ করেন। অনেক সময় পর আমাকে জানানো হয়, বাচ্চা মৃত জন্মেছে। পরে দেখি নবজাতকের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন,“ডাক্তার যদি আগে বলতেন যে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়, তাহলে আমি সিজার করাতাম বা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতাম। কিন্তু ডাক্তার আঁখির অবহেলার কারণে আমাদের সন্তান মারা গেছে। আমরা তার বিচার চাই ।
‎অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চরফ্যাশন হাসপাতাল রোডে অবস্থিত একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে একই চিকিৎসক আঁখি আক্তারের ভুল চিকিৎসায় আমিনাবাদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে মুন্নী আক্তার নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তিনি হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে কিছুদিন গাঁ ঢাকা দেন। পরে আবার ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিকে যোগদান করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর একই প্রাইভেট ক্লিনিক ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের অবহেলায় দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠে এবং তা বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। 
স্থানীয় সচেতন মহলের অনেকে দাবি করেন, ডা. আঁখি আক্তার এর বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তারা বলেন,“তিনি প্রায়ই চেম্বারে বসে টিকটক ভিডিও করেন, রোগীদের সঠিকভাবে দেখেন না। তার অবহেলায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।”
‎স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, চরফ্যাশনের বিভিন্ন এলাকায় অনুমোদনহীন ক্লিনিক গড়ে উঠেছে, যেখানে অনভিজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখেন এবং স্বাভাবিক প্রসবেও পরিবারকে ভয় দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থের জন্য সিজার করানো হয়। তারা দ্রুত এসব অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
‎‎অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিকে গেলে ডা. আঁখি আক্তারকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তার সহকারী পরিচয় ফোন রিসিভ করে মোবাইলে বলেন, হাসপাতালে শিশু মারা গেলে কি হয়, এমন ঘটনা হতেই পারে,এরপর ফোন কেটে দেন।
‎ইকরা হাসপাতালের পরিচালক মো. কাদের জানান, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ডা. আঁখি আক্তারকে হাসপাতালে রাখা হবে কি না তা শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
‎‎চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভন কুমার বশাক বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
‎তবে ‎ভোলা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, লিখি অভিযোগ পেলে ডা.আঁখি আক্তারের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


মোঃ ইয়ামিন চরফ্যাসন



আরও...