নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবর্তনের দাবী জেলে ও মৎস্য আড়ৎদারদের
মো: সজীব মোল্লা, মনপুরা থেকে : ভোলার মনপুরার মেঘনা নদী ও সাগরে ভরা মৌসুমে বিগত বছরের এই সময়ে সোনালী ইলিশের ছড়াছড়ি থাকলেও এবার জলেদের জালে মিলছেনা কাঙ্খিত ইলিশ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার পঞ্চাশ হাজার জেলে ও আড়ৎদার।
এদিকে সরকার গত বছরের থেকে ১০ দিন এগিয়ে এনেছে নদী ও সাগর মোহনায় ইলিশসহ মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা। এতেই উদ্ভেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করেছে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মাঝে। জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
জানা যায় গত বছর ১৩ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞার সময় শুরু হলেও এবার ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২ টা পর্যন্ত ইলিশ নিধন ও সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। তবে চলতি বছর নিষেধাঙ্গার সময় আরও ২০ থেকে ২৫ দিন জারি করার দাবি জানিয়েছেন জেলে ও মৎস্য ব্যসায়ীরা।
জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, ভরা মৌসুমে নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা পড়েনি। খালি হাতে ফিরছে বেশিরভাগ জেলে ও যখনি নদী ও সাগরে ইলিশ দেখা মিলছে, তখনই সরকার মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে সরকার। অথচ এখনো ইলিশের পেটে ডিম আসেনি।
তারা আরো জানান, প্রতি বছর বাংলাদেশে যখন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, তখন ভারতীয় জেলেরা বাংলােদেশের সীমানায় প্রবেশ ইশিশ শিকার করেন তাই তারা ভারতের সাথে মিল রেখে নিষেধাঙ্গার সময় নির্ধারণের দাবী করেন।
জনতা বাজার এলাকার সমুদ্রগামী টলারের জেলে রফিক জানান, গত দুই বছর নিষেধাজ্ঞা পালন করতে গিয়ে তার শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়। এছাড়াও এই বছরে ইলিশ শিকার করে যা আয় করছেন তা ঋন পরিশোধ করে হাতে কিছু থাকছেনা। এতে তার সংসারে অভাব ছাড়ছেনা
মাষ্টারহাট এলাকার জেলে হোসেন মাঝি জানান, কিস্তির বোঝা মাথায় নিয়ে প্রতিনিয়ত মেঘনায় জাল ফেলে আসছি। কোনো দিন খালি হাতে ফিরেছি, আবার কোনো দিন দুই একটা ইলিশ নিয়ে ফিরেছি এখন যখন আজকাল কমবেশি ইলিশ পড়তে শুরু করেছে। শুনছি সরকরি মাছ ধরার নিষেধাঙ্গা জারী করেছে। এতে করে দেনা কিভাবে মিটাবো আবার নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবারের খরচ কিভাবে জোগাড় করবো তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
হাজিরহাট ঘাটের মাঝি আবব্দুর রব, মিজান, সফিজল সহ অনেক জেলেরা অভিযোগ করেন, নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারী সাহায্য তারা পাননা। এতে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশীম খেতে হয়।
মৎস্য ব্যবসায়ী হাবিব , হেলাল ও লিটন শাহ জানান, গত ২০ বছর ধরে ইলিশের ব্যবসা করে আসছি। যখন জলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়া শুরু করছে তখনই সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিছে। তবে গত বছর ১২ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই বছর ৩ অক্টোবর কেন দেওয়া হলো তা তারা বুঝতে পারছেনা তাই তারা নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবর্তনের দাবী করছেন।
এই ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারি মোঃ মনির জানান, জেলেরা নিষেজ্ঞার পিছানোর দাবী করেছেন। তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা লালমোহন মৎস্য কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আলী আখতার জানান, নদীতে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে ইলিশের সংরক্ষণ কমে গেছে। তবে মা ইলিশ রক্ষা করা গেলে আগামীতে জলেদের জালে ইলিশের দেখা মিলবে তাই সরকারের নিষেধাজ্ঞার যাতে সঠিক ভাবে পালণ করা হয় সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মনপুরায়
মোঃ ইয়ামিন