শফিক খাঁন: একে একে ৬ সন্তান কে শে'ষ গোসল দিয়ে কব'রে পাঠিয়েছে ছবুরা বেগম। মারা গেছে ৫ ছেলে ও একটি মেয়ে। সন্তানদের বয়স ২/৩/৪ এমন হলেই হঠাৎ জ্ব'র এর পর মৃ'ত্যুকে আলি'ঙ্গন করে পৃথিবীর মায়া ত্যা'গ করেচেন তারা। শোকের ছায়া ও দারিদ্র্যতা আরো চেঁপে বসে তাদের উপর। খোঁজ নেয়নি সরকারি বা বেসরকারি কোন সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান।
সন্তানদের শো'কে পাথর হয়ে গেছেন ছবুরা-বেলাল দম্পতি।
কান্না করতে করতে চোখের পানি নেই তাদের। তাদের এখন দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে তাও একটি প্রতি'বন্ধী বিয়ের পর স্বামী খোঁজ-খবর নেন না প্রতিবন্ধী মেয়ের।
অন্য মেয়ে কে বিয়ে দিতে পারছে না। একটি ঘর নেই। ছোট্ট একটি জরা'জীর্ণ ঘরে বসবাস করেন। বৃষ্টি আসলে মাটিতে পড়ার আগে ছবুরার ঘরে পড়েন।
একদিকে ৬ সন্তানের শো'ক অন্যদিকে সংসারের অভাব এ পরিবার কে নিঃশেষ করে দিচ্ছে তিলে তিলে।
অসু'স্থ্য স্বামী আর দুই কন্যাকে নিয়ে থাকার জন্য একটি ঘরের আকুতি জানিয়েছে ছবুরা দম্পতি।
মাথা গুঁজার একটু আবাস ছাড়া আর কোন চাওয়া নেই অসহায় ছবুরা হেলাল দম্পত্তির। ছয় সন্তানকে দাফন করে নিজেরাই পাগল প্রায় ছবুরা ও হেলাল। একে সন্তানের শোাক সাথে দারিদ্র্যতা। প্রতিবেশীদের সহায়তায় কোন রকম খাবারের ব্যবস্থা হলেও মাথা গুঁজার ঠাই নামক স্থান টুকুই তাদের একমাত্র চাওয়া।
ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শ্যামপুর গ্রামেই ৪ শতক জমিতে ভাঙা কিছু টিন আর পলিথিন কাগজের তৈরি একটি ঝুপড়ীতে বসবাস ছবুরা হেলাল দম্পত্তির। প্রায ৩০ বছর পুর্বে নদী ভাঙ্গে তাদের বসত ভিটা। পরে অন্যের সহায়তায় এখানে ৪ শতক জমি কিনে বসবাস করতে থাকেন ছবুরা হেলাল দম্পত্তি।
ইতিমধ্যে তাদের ঔরসে পর পর জম্ম নেয় ৫ টি ছেলে সন্তান ও একটি কণ্যা সন্তানের। জম্মের পর পরে অজানা কোন এক রোগে মারা যায় ৬টি সন্তানই।
সন্তানদের শোকে শোকে মানসিক ও শারীরিক রোগাক্রান্ত হন ছবুরা ও হেলাল।
হেলাল তেমন কোন কাজমর্ম করতে না পাড়ায় অভাব আর অসহায়ত্বে পড়েন তারা।
অসহায় ছবুরা হেলাল দম্পত্তি প্রায় ৩০ বছর ধরেই তাদের এই ঝির্ণশির্ণ ঘরেই বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন।
দুটি কণ্যা সন্তান সহ ৪ সদস্যের পরিবার ছবুরা হেলালদের। কন্যা সন্তানদের ও একজন প্রতিবন্ধী, প্রতিবন্ধী কন্যাকে বিয়ে দিয়েছিলেন বটে, সেখানে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি তাদের, বিয়ের পরে প্রতিবন্ধী কন্যার স্বামী তাকে ফেলে চলে যায় অন্যত্র।
আজ বৃহস্পতিবার ২৯ আগষ্ট কথা হয় অসহায় ছবুরার সাথে, তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান আমি ৬ টি সন্তান হাড়িয়ে এখন অসহায় হয়েছি।
ছেলেরা বেঁচে খাকলে হয়তো কারো কাছে হাত পাততে হতো না। দুনিয়াতে আমার একমাত্র চাওয়া একটি ছোট ঘর যদি কেউ করে দিতো তাহলে সেখানে নামাজ কালাম পড়ে তার জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করতাম।
তিনি বলেন বাবা এখন বর্ষাকাল বৃষ্টি হলেই রাতে বস্তা গায়ে জড়িয়ে মেয়ে দুটি নিয়ে বসে থাকি।
দিনেের বেলা প্রবল বৃষ্টি হলে পাশের বাড়িতে গিয়ে স্খান নিলেও রাতে তো আর কারে ঘরে জায়গা হয়না। প্রতিবেশীরা খাবারে সহায়তা করলেও ঘরের সহায়তায় কেউ আসে নাই।
এদিকে বয়সের বারে এখন ছবুরা হেলাল দুজনেই অসুস্থ, শরীরের বেথায় হেলাল এখন কোন কাজই করতে পারেন না। অপরদিকে তার ছোট মেয়েটাও বিবাহ উপযুক্ত, দিনের বেলা বৃষ্টিতে কারো ঘরে স্থান নিলেও রাতে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে নিয়ে নিজের ঘরে থাকা ছারা উপায় নেই বাবা।
দুঃখ করে ছবুরা বলেন বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে নিয়ে আছি এক বড় চিন্তায়, একটি ঘরের জন্য পাড়ছি না মেয়েটা বিয়ে দিতে।
কেউ ডদি একটি ছোট ঘর করে দিতো তাহলে মেয়েটি বিয়ে দিয়ে মরেও শান্তি পাইতাম।আমার আর কিছু চাওয়ার নাই কোন রকম একটি ঘর হইলে শান্তি হইতো।
একই গ্রামের মোঃ তুহিন বলেন ছেলে সন্তান গুলো মারা যাবার পরে তারা কাতর হয়ে গেছে। দির্ঘ বছর ধরে তাদের এই দুরাবস্থা আমরা মাঝে মাঝে সহায়তা করলে তাতে খাবারের পয়সা হয়, কিন্তু ঘরের সহায়তায় কেউ আসলে ওদের খুব উপকার হবে।
তাদের ঘরের চারপাশে এখন পানিতে ঢুবে গেছে, কোন রকম গাছের উপর দিয়ে চলে, একটি মেয়ে বিবাহ উপযুক্ত, তাকে নিয়ে আরেকটি চিন্তা তাদের, ঝড় বৃষ্টির দিনের বেলা কারো ঘরে স্থান নিলেও রাতেই তাদের বড় কষ্ট।
ভোলা জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান অসহায় পরিবারের প্রতিবন্ধী ( স্বামী পরিত্যক্ত) মেয়ের জন্য দ্রততার সাথে বাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। একই সাথে অসহায় পরিবারের ঘরের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে দ্রুততার সাথে তাদের ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
ভোলা জেলা
মোঃ ইয়ামিন