দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী
বিশেষ প্রতিবেদক : ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শিশু মো. তানভীর(৮) ভুল চিকিৎসায় প্রায় চার মাস ভোগার পরে শনিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। শিশুটি মা মিতু বেগম ও বাবা মোসলেহ উদ্দিনের একমাত্র ছেলে। তার জ্বর হলে চিকিৎসার জন্য বাবা-মা বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের উপ-সহকারী সমাজভিত্তিক চিকিৎসা কর্মকর্তা(স্যাকমো) মো. সফিকুল ইসলাম ফুঁসলিয়ে হাসপাতালের সামনে মো. আকিবউল্লাহর ফার্মেসিতে নিয়ে ভূল চিকিৎসা দেন। এ ঘটনায় শিশুর মা মিতু বেগম বাদী হয়ে জুলাই মাসে ভোলার আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই মামলায় বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী সমাজভিত্তিক চিকিৎসা কর্মকর্তা(স্যাকমো) মো. সফিকুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেল-হাজতে পাঠিয়েছে। এবংমামলার এক নম্বর আসামী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের ফার্মেসি ব্যবসায়ী মো. আকিব উল্লাহ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন।
মামলার এজাহারে বাদী লিখেছেন- শিশু তানভীর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের ফুলকাচিয়া গ্রামের কৃষক মো. মোসলেহউদ্দিনের পুত্র। সে চরমোনাই মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করছিল। চলতি বছরের ১৯এপ্রিল সে ছুটিতে বাড়ি আসে। ২২ এপ্রিল তার গায়ে জ্বর আসে, ২৪এপ্রিল তানভীরকে তার মা মিতুবেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশে নিয়ে যায়।
মামলার এজাহার ও শিশুর বাবা মোসলেহউদ্দিন আরও জানান, বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশ ফটকে গেলে ওই এলাকার ফার্মেসি ব্যবসায়ী আকিব উল্লাহর সাথে দেখা হয়। আকিব তখন মিতুবেগমকে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দেবে বলে স্যাকমো সফিকুলের কাছে নিয়ে যায়। সফিকুল ইসলাম কিছু টেষ্ট করাতে বলেন। টেষ্ট রিপোর্ট দেখে তানভীরের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে বলে তাৎক্ষনিক ৪টি ইনজেকশন দেন। এর কিছুক্ষণ পর শিশুটির হাত-পাসহ শরীরের কালো কালো বিচি ফুটে উঠতে থাকে। এরপর এলার্জির সমস্যা বলে আরো একটি ইনর্জেকশন পুশ করেন। পরে শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে গেলে শরীরে চামড়া ফুলে অস্বাভাবিক হলে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে বরিশাল ,পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাবা মোসলেহউদ্দিন আরো বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় তানভীরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গেলে চিকিৎসক তার দুই হাত ও একটি পায়ের কিছু অংশ কেটে ফেলেছেন। ভুল চিকিৎসায় হাতপায়ে পঁচন লাগে। তারপরেও বাঁচাতে পারেননি। তাঁর সন্তানের চিকিৎসার জন্য সব জমি-জমা বিক্রি করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, তাঁরা এ ঘটনার জন্য দায়ী বোরহানউদ্দিন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যাকমো সফিকুল ইসলাম ও ফার্মেসি মালিক আকিবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।