অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগার: স্মৃতির গর্ভে জন্ম নেয়া এক আলোকবর্তিকা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৬ই আগস্ট ২০২৫ সকাল ১০:৫৫

remove_red_eye

৯৬

মোঃ মহিউদ্দিন: সভাপতি, হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগার ১৯৯০ সালের ২৭ মার্চ, একটি রৌদ্রোজ্জ্বল সকালের ঢাকায় ঘটে যায় এক অন্ধকার অধ্যায়—সকাল দশটায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা চিরতরে হারিয়ে ফেলি আমার আপন বড় ভাই, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হারুন অর রশিদকে।
তিনি ছিলেন শুধু আমাদের পরিবারের অহংকার নন, বরং ছিলেন ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের এক উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় নক্ষত্র। একাধারে মেধাবী ছাত্র, প্রতিশ্রুতিশীল কবি, মানবিক সমাজসেবক এবং জনপ্রিয় সংগঠক—তার প্রতিটি পরিচয় ছিল প্রাঞ্জল, প্রগাঢ় ও প্রেরণাদায়ক।
রাজকীয় সরলতা ও নেতৃত্বের দীপ্তি--
হারুন অর রশিদের স্বভাবসুলভ ভদ্রতা, নেতৃত্বগুণ ও রাজকীয় হাবভাব তার আশপাশের সবাইকে আকৃষ্ট করত। নাছির মাঝি এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন বহু সামাজিক সংগঠন, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নিরলসভাবে। তাঁর অকালপ্রয়াণে পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছিল শোকের ঘন ছায়া, যেন সময় থমকে গিয়েছিল এক অনন্য মানবিক গুণাবলির ধারককে হারিয়ে।
স্মৃতিকে রূপ দিলাম আলোর মিনারে-


এই ব্যথা, এই স্মৃতিকে অমর করে রাখতেই আমাদের পারিবারিক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছি “হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগার”। পাঠাগারটি প্রথমে শাপলা বাজারে স্থাপন করা হলেও, পরবর্তীতে আমার বাড়ির পাশে, যেখানে আমার প্রয়াত সহধর্মিণীর সমাধি অবস্থিত, সেখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে সেটিকে স্থানান্তরিত করছি।
আল্লাহর অশেষ রহমতে ইতোমধ্যেই ভবনের নির্মাণকাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে এবং পাঠাগারটি সরকারি স্বীকৃতিও পেয়েছে (রেজি: ভোলা/বেস/লাই/০১/২০২)।
এই পাঠাগারে রয়েছে বহু দুর্লভ গ্রন্থ, বিশ্বকোষ, এবং ভোলা জেলার কবি-সাহিত্যিকদের রচনাসমূহ। জেলার বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক এবং সাহিত্যপ্রেমীরা নিয়মিত এই পাঠাগারে আসেন, বই পড়েন এবং আলোচনায় অংশ নেন।
পাঠাগারের লক্ষ্য ও কর্মসূচি: জ্ঞানের সঙ্গে মানবতার বন্ধন---
আমাদের পাঠাগারের মূল লক্ষ্য শুধু বই পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি হবে একটি মানবিক চেতনার কেন্দ্র, একটি প্রজন্ম গঠনের পাঠশালা:
প্রতিদিনের সূচনা হবে ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে। বয়স্ক নারীদের জন্য থাকবে নামাজ, কোরআন ও কায়দা শিক্ষার ব্যবস্থা। বয়স্ক পুরুষদের জন্য থাকবে তাজবীদসহ নামাজ ও সুরা শিক্ষার কর্মশালা।পাঠাগারটি সারাদিন উন্মুক্ত থাকবে সকল পাঠকের জন্য।
প্রতি শুক্রবার, পাঠাগারের ব্যানারে আয়োজন করা হবে হতদরিদ্রদের জন্য ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি।
শোকের ভিতর থেকেও জন্ম নেয় আশার আলো
আমার সহধর্মিণীর আকস্মিক মৃত্যু আমাদের পরিবারে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। তার স্মৃতির পাশেই এই পাঠাগার নির্মাণ করছি যেন আমাদের ভালোবাসা, ত্যাগ আর স্বপ্ন একসাথে এগিয়ে চলে—সমাজের কল্যাণে নিবেদিত থেকে। সমাপ্তি নয়, শুরু এক দীপ্ত যাত্রার
হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগার কোনো একক প্রচেষ্টার ফল নয়—এটি একটি স্বপ্ন, একটি প্রজন্ম গঠনের অভিযান, একটি নীরব বিপ্লব। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা পাশে থাকলে, এই পাঠাগার একদিন হয়ে উঠবে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য-সংস্কৃতি কেন্দ্র।
আপনাদের দোয়া, পরামর্শ ও সহায়তা একান্ত কাম্য। আসুন, একসাথে গড়ে তুলি এক আলোকিত আগামী।


ভোলা জেলা মোঃ ইয়ামিন