অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শনিবার, ১৭ই মে ২০২৫ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


ভোলার মেধাবী ছেলে আদিলের কৃতিত্ব


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ই মে ২০২৫ দুপুর ০২:৪২

remove_red_eye

১১৯

 ক্যান্সার শনাক্তকরণ প্রযুক্তিতে বুয়েটের বিশ্বজয়
  
 
এইচ আর সুমন : বিশ্বে ২০০ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪০ টি গ্রুপকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রথম স্থান অধিকার করেন। বুয়েট’র ৫জনের একটি দলের মধ্যে ভোলার ছেলে আদিল অন্যতম। আদিলের গবেষণা ছিলো স্থন ক্যান্সার প্রাথমিক সনাক্তের কিট। তার দল সাফল্যের সাথে এগিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে বুয়েট এবং বাংলাদেশের সন্মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যান। তারা হাবার্ড, এমআইটি এবং স্টানফোর্ড’র মতো বিক্ষ্যাত বিশ্ববিদ্যালকে পেছনে ফেলে প্রথম হন।
আদিল শুধু ভোলার গর্ব-ই নয় সে দেশের গর্ব। আদিল’রা বুয়েট এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যান ভিন্ন উচ্চতায়, যেখানে আর কারো স্থান নেই।
আদিল বলেন, প্রথম হব ভাবিনি। কিন্তু শুরুর দিকে থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি পরিকল্পনামাফিক। প্রতিদিন ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করতাম। সে অনুযায়ী পড়তাম।
আদিলের স্বপ্ন নিজেকে আরো উচ্চতায় নিয়ে দেশের জন্য কিছু করা। এক প্রশ্নের জবাবে আদিল বলেন, আমার সপ্ন পিএইচডি করার পর দেশের মানুষের ক্যাল্যানের জন্য কাজ করবো ও দেশের বাহিরে যাওয়ার প্রশ্নের জবাবে আদিল বলেন আমি দেশেই থাকবো ও দেশের জন্য কাজ করবো এটাই আমার ইচ্ছা আমি চাই আমাদের দেশের ছাত্র ছাত্রীরা বুয়েটে পড়াশোনা করুক (কারণ এখানে সকল সুযোগ সুবিধা ভালো) দেশের জন্য কিছু করুক। বিশ্বের তুলনায় আমাদের দেশ অনেক পেছানো কিন্তু আমাদের আছে জনশক্তি, এ জনশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমার এই পর্যন্ত আসার পেছনে আমার মা-বাবা এবং বুয়েটের অবদান। আমি সকলের দোয়া চাই। আদিল ২০১৮ সালে ভোলা সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি, ২০২০ সালে ভোলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বুয়েট ভর্তি হন। বর্তমানে বুয়েটের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ভোলা শহরের ব্যবসায়ী মোঃ সিরাজুল হক দম্পত্তির দুই ছেলের প্রথম সন্তান আদিল এবং ভোলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং খান ফ্লাওয়ার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: জামাল খানের ভাগিনা।
বিশ্বের ২শ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বুয়েট প্রথম বুয়েট’র ৫জনের একটি দলের মধ্যে ভোলার ছেলে আদিল থাকায় ভোলার সর্ব স্থরের গণ্য মান্য ব্যক্তিবর্গ ও আদিলের আত্মিয় সজন বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও “দৈনিক বাংলার কণ্ঠ” পরিবারের পক্ষ থেকে আদিলকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
 
বিস্তারিত নীচে দেওয়া হলো : প্রতিবছর একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দ্য জনস হপকিনস সেন্টার ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইনিং। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠান। এবারের প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগে অংশ নেয় ২শ’বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৪০টি দল। সুখবর হলো, প্রতিযোগিতার ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, ক্যালটেকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি দল। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর দলটির নাম নিওস্ক্রিনিক্স।
 
যেভাবে অংশ নেওয়া : ১৭ এপ্রিল দুপুরে ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আধভেজা হয়ে পৌঁছালাম বুয়েটে। নিওস্ক্রিনিক্সের পাঁচ সদস্য ফাহমিদা সুলতানা, এইচ এম শাদমান, সাদাতুল ইসলাম, মো. হাসনাইন আদিল ও পৃথু আনানকে ক্যাফেটেরিয়াতেই পাওয়া গেল। শুরুর গল্পটা বললেন ফাহমিদা, ‘জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবছরই বুয়েটের বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তাঁদের কাছ থেকেই এই প্রতিযোগিতার খবরটা প্রথম পাই। প্রতিযোগিতাটি যেহেতু গণস্বাস্থ্যবিষয়ক এবং আমাদের কয়েকজনের গণস্বাস্থ্য গবেষণার আগ্রহ আছে, তাই আবেদন করি। আবেদনের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের একটি প্রস্তাবনা জমা দিতে হয়।
 
কী ছিল প্রস্তাবনায় : সহজ করে বললে প্রাথমিক পর্যায়েই স্তন ক্যানসার শনাক্ত করার এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে নিওস্ক্রিনিক্স। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন নারী নিজেই স্তন ক্যানসারের লক্ষণ বা সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারবেন। ফাহমিদার নিজের পরিবারেও স্তন ক্যানসারের রোগী থাকায় বছর দুয়েক আগেই তিনি এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন হাসনাইন আদিল ও সাদাতুল ইসলাম। শুরুতে হাসনাইন অ্যাপটির ইউআই (ইউজার ইন্টারফেস) বা ফ্রন্টএন্ড এবং সাদি অ্যাপটির প্রোগ্রামিং বা ব্যাকএন্ডের কাজ করেছেন। এরপর দলে যুক্ত হন এইচ এম শাদমান ও পৃথু আনান। শাদমান এই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করেছেন। পৃথু সামলেছেন স্তনের স্ক্রিনিং বা ছবি তোলার যন্ত্র তৈরির দায়িত্ব। পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা দিয়ে পুরো কর্মযজ্ঞকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফাহমিদা। শুধু এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করেই যে তাঁরা কাজ করেছেন, তা নয়। সাদাতুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগেও একটি দেশীয় প্রতিযোগিতায় আমাদের এই প্রযুক্তির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে কোনো স্বীকৃতি সেভাবে আসেনি। তবে যথেষ্ট পর্যালোচনা পেয়েছিলাম। ফলে নিজেদের ত্রুটিগুলো দূর করে পরের প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়েছে। জানুয়ারিতে প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার পর ১০ মার্চ প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হয়। ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগের ছয় ফাইনালিস্টের মধ্যে নিওস্ক্রিনিক্সের সঙ্গে বুয়েটের অন্য একটি দলও ছিল। ১২ এপ্রিল অনলাইনে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই জানানো হয় বিজয়ীদের নাম।
এই প্রতিযোগিতা কেন আলাদা : যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য-চিকিৎসা শিক্ষা জগতের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। ফাহমিদা জানালেন, এই প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষক জনসন অ্যান্ড জনসন মেডিকেল প্রযুক্তি জগতের অন্যতম নামী প্রতিষ্ঠান। যেদিন চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হলো, সেদিন নিওস্ক্রিনিক্সের কেউই ভাবতে পারেননি যে তাঁরা প্রথম হয়ে যাবেন। পৃথু বলেন, ‘হবে না ধরেই নিয়েছিলাম। শাদমান বাদে আমরা সবাই অনলাইন ওয়েবিনার থেকে বেরও হয়ে গিয়েছিলাম।’ হাসনাইন যুক্ত করেন, ‘আমি এত কিছু আশা করিনি। ওয়েবিনার থেকে বের হয়ে গেমস খেলা শুরু করে দিয়েছি।’ সাদাতুল ইসলাম তো নাকি ঘুমিয়েও পড়েছিলেন! বিজয়ীদের নাম ঘোষণা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন শুধু শাদমান। তাঁর কাছেও এই অর্জন অপ্রত্যাশিত, অবিশ্বাস্য।
বুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা হচ্ছে তো ? : পুরস্কার হিসেবে নিওস্ক্রিনিক্স পেয়েছে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ছয় লাখ টাকা। নিজেদের পড়াশোনা ও গবেষণায় এই অর্থ কাজে লাগাতে চান তাঁরা। অর্জনের পেছনে দলের বাইরের কয়েকজনের অবদান আছে বলে জানালেন ফাহমিদা। পুরো কাজটি তত্ত্বাবধান করেছেন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. সোহেল রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম ও রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রিবাতুল ইসলাম তথ্য সংগ্রহে বিশেষ অবদান রেখেছেন। এই তিনজনের প্রতি নিওস্ক্রিনিক্সের সদস্যদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর অবস্থান চিন্তা করেই ভবিষ্যতে প্রযুক্তিটি নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটি। আপাতত ছোট পরিসরে হলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতন করতে চান তাঁরা। এরপর নিজেদের প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে চান সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়।