অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ৭ই এপ্রিল ২০২৫ | ২৪শে চৈত্র ১৪৩১


বিনিয়োগ সম্মেলন: তাৎক্ষণিক না হলেও ভবিষ্যতে বাড়বে বিনিয়োগ


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৭ই এপ্রিল ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

remove_red_eye

২০

বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুরু হচ্ছে। এ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের ছয় শতাধিক বিনিয়োগকারী অংশ নেবেন। সম্মেলনে শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব ছাড়াও বহু সংখ্যক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ কর্পোরেশন অংশগ্রহণ করছে যাদের বার্ষিক রাজস্ব আয় বাংলাদেশের মোট জিডিপির কাছাকাছি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। শুধু তাই নয়, তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পৃথকভাবে বড় বড় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী (৭ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল) বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ সম্মেলন।

ফলে এ সম্মেলনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তাদের অনেকের প্রশ্ন, বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কত মিলিয়ন বা বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ গ্যারান্টি পেয়ে যাবে।

 

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান বলেছেন, ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। প্রথমত বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ববাসীর যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে তা পাল্টাতে হবে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে ব্যবসা করার যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো দ্রুত নিরসন করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০/১২ বছরের কর অব্যাহতির সুযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবু কেন বিনিয়োগ হচ্ছে না? কারণ একজন বিনিয়োগকারী যখন একটি দেশে বিনিয়োগের চিন্তা করেন তিনি যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবেন তা ফেরত পাবেন কি না, বিনিয়োগ করতে কত সময় লাগবে, বিনিয়োগ করার জন্য সরকারের কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পাবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। আমরা যখন তাদের এসব ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে পারবো তখন তাৎক্ষণিক না হলেও ও ভবিষ্যতে বিনিয়োগ বাড়বে।

আশিকুর রহমান বলেন, অপ্রত্যাশিত হলেও একথা সত্য যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের কাছে আগামী দুই-চার বছরের মধ্যে বিশ্বের কোন কোন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের কোনো তালিকা নেই।

তিনি বলেন, তালিকা থাকলে তাদের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ করা সম্ভব হতো। কিন্তু কোনো ধরনের তালিকা বা পরিকল্পনা না থাকায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়নি।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিসহ তালিকা তৈরি করা সম্ভব হবে। সে তালিকা অনুযায়ী আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বিনিয়োগ করানো সম্ভব হবে।

এবারের সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে সম্ভাবনাময় মোট পাঁচটি সেক্টরে (নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, ফার্মাসিটিক্যাল, ডিজিটাল ইকোনমি এবং টেক্সটাইল) বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে উৎসাহিত করা হবে। এরই অংশ হিসেবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা করবে, কথা বলবে যাতে ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে জয়েন্ট ভেঞ্চার তৈরি হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একত্রে এনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য তাদের মনের সব জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়ার জন্য সরকারের উপদেষ্টা, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগকারীদের কেউ নিজেদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আগামী ১০ বছরে বিনিয়োগের কতটুকু সম্ভাবনা রয়েছে তা তিনি তুলে ধরবেন।

চারদিনের বিনিয়োগ সম্মেলনে যা থাকছে:

প্রথম দিনের দুটি ট্র্যাকে অনুষ্ঠানটি হবে। প্রথম ট্র্যাকে ৬০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিয়ে স্পেশাল ফ্লাইট চট্টগ্রাম যাবে। সেখান থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইতে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন করে রাতে ফিরে আসবে।

তিনি জানান, যারা যাচ্ছেন তারা হলেন সেসব উদ্যোক্তা যারা মনে করছেন তাদের সেখানে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে হবে। তাদের জায়গা জমি লাগবে। তাদের জন্য আমরা কী ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে পারি তা তারা সরেজমিনে দেখবেন।

অন্যদিকে সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টার্টআপ কানেক্ট নামে সারাদিনের অনুষ্ঠান সূচি রয়েছে। সেখানে যারা আরলি স্টেজ স্টার্টআপ এবং যেসব ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী আসছেন তাদের মধ্যে ম্যাচমেকিং ইভেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও প্যানেল হবে। সারাদিন স্টার্টআপ ইভেন্টকে ফোকাস করা হবে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রথম বেলায় বিনিয়োগকারীদের নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে (যেখানে জাপানি ইকোনমিক জোন রয়েছে) সরেজমিন পরিদর্শন করে সেখানকার ফ্যাক্টরির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতটুকু সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা দেখবেন।

দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলওর সাথে কিছু এঙ্গেজমেন্ট আছে। তারা এফডিআই রিলেটেড কিছু ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটুকু ছাড়া সারাদিনই একাধিক (৩/৪টা) প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে কিছু বিনিয়োগকারীকে পুরস্কৃত করা হবে। একই সঙ্গে কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী বক্তব্য দেবেন। সেখান থেকে আমরা বোঝার চেষ্টা করবো আর কী করলে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য বেটার ডেস্টিনেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।

পরবর্তী সময়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইয়ুথ এন্টারপ্রেনিয়রশিপ মেলার আয়োজন থাকবে। উপদেষ্টা সেখানে আরলি স্টেজ কোম্পানির সাথে কথা বলবেন।

দ্বিতীয় ধাপে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে কথা হবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। তারা ইনভেস্টমেন্ট প্রমিস করলে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিনিয়োগকারীদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ফলোআপ কথাবার্তা হবে ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। সন্ধ্যায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তোলা হবে।

বিনিয়োগ সম্মেলনে শীর্ষ বিনিয়োগকারী যারা আসছেন:

সামিটে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট ব্যক্তিত্বরা অংশ নেবেন। তাদের মধ্যে আছেন- জারা গ্রুপের সিইও অস্কার গার্সিয়া মেসেইরাস, ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলাইয়েম, ব্রিটিশ ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, স্যামসাং সিঅ্যান্ডটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কিয়ংসু লি, গিওর্দানোর সিইও জুনসিওক হান, এক্সেলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট স্টিভেন কোবোস, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উবারের পাবলিক পলিসি প্রধান মাইক অর্গিল এবং মেটার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর সারিম আজিজ।

এছাড়া বি ক্যাপিটাল, গবি, কনজাংশন, মারুবেনি এবং জিএফআরের মতো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলো স্টার্টআপ বিনিয়োগ ও ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে কাজ করবে।

দেশি-বিদেশি পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হবে:

আগামী ৯ এপ্রিল বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে থেকে পাঁচজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হবে। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, যাদের সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হবে। তারা হলেন একজন স্থানীয় বিনিয়োগকারী, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী, এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের জন্য একটি সংস্থা, নতুন কোনো কিছু উদ্ভাবনের জন্য একটি কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশে বছরের পর বছর কাজ করছেন এমন একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে সম্মাননা পুরস্কারের পাশাপাশি অনারারি সিটিজেনশিপ অফার করা হবে।