অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


লালমোহনে জালিয়াতি করে শিক্ষিকা নিয়োগের অভিযোগ


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫ই অক্টোবর ২০১৯ রাত ১১:০৮

remove_red_eye

৬১৫

 

লালমোহন প্রতিনিধি : ভোলার লালমোহনে প্রধান শিক্ষকের জালিয়াতির কারনে বিদ্যালয় জাতীয়করনের পর শিক্ষক তালিকায় নাম ওঠেনি এক সহকারী শিক্ষিকার। অভিযোগ উঠছে, মোটা অংকের ঘুষ খেয়ে ভুয়া রেজুলেশন ও জালিয়াতির মাধ্যমে একজন নিয়মিত সহকারী শিক্ষককে বাদ দিয়ে আরেকজন নামধারী শিক্ষককে তালিকাভুক্ত করেছেন প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি গোচরে আসার পর কয়েকদফা তদন্ত করে এর প্রমানও পায় উপজেলা শিক্ষা অফিস। কিন্তু তার পরও ওই জালিয়াত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এতে দিশেহারা হয়ে পরছেন ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষিকা।
জালিয়াতি ও প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগম উপজেলার পুর্ব মহেশখালী গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল মিয়ার স্ত্রী। তিনি জানান, ২০১০ সালে লালমোহন উপজেলার আবুগঞ্জ এলাকায় ‘পুর্ব মহেষখালী রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার চাকরি হয়। সে সময় চাকরি পেতে বিদ্যালয়ের নামে ১৬ শতাংশ জমি লিখে দিতে হয়েছে। শুরু থেকে বিদ্যালয়ে চাকরি করে আসলেও ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের পর দেখি শিক্ষক তালিকায় আমার নাম নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরনবী পিংকু, জালিয়তির মাধ্যমে ভুয়া রেজুলেশন করে আমার নাম বাদ দিয়ে আরেকজনকে শিক্ষক দেখিয়ে তালিকা পাশ করিয়েছেন। কিন্তু কে এই শিক্ষক, তা জানে না বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। তালিকায় আনোয়ারা বেগম নামের এক মহিলাকে শিক্ষক হিসেবে দেখানো হলেও আজ পর্যন্ত তাকে বিদ্যালয়ে দেখেনি কেউ।
সাজেদা বেগম আরো জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী পিংকু, ৫ লাখ টাকা ঘুষ খেয়ে এই জালিয়াতি করে আমার জীবন বিপন্ন করে দিয়েছে। যার ফলে আমার সংসার ও পুরো পরিবারটাই আজ বিপন্ন। আমি এই জালিয়াত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিচারের দাবিতে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগের কয়েক দফা তদন্ত হয়েছে এবং সবকটি তদন্তে জালিয়তির বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে। কিন্তু এখনও এই জালিয়াত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আইয়ুব আলী বলেন, এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের জালিয়াতির বিচার চেয়ে সহকারী শিক্ষক সাজেদা ছাড়াও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অলিউল্লাহ মেম্বার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এসব অভিযোগ তদন্ত করে সততা পেয়েছি এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করেছি। এখন কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক কী ব্যবস্থা নেয় সে অপেক্ষায় থাকতে হবে। শিক্ষা অফিসার আইয়ুব আলী আরো বলেন, এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরনবী পিংকু একজন ধুরন্দর প্রকৃতির এবং সঠ ও প্রতারক। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর জাল-জালিয়তি ও ধান্দাবাজি ছাড়া তিনি আর কিছুই করেনি। ২০১৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করনের পর থেকে সে স্কুলে যায় না। সরকারী অনুদানের টাকাও সে আত্মসাৎ করে ফেলে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের লোকজন ভিজিটে গিয়ে মাসের পর মাস তাকে অনুপস্থিত পেয়ে তার বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে তার ৬ মাস ধরে বেতন বন্ধ।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অলিউল্লাহ মেম্বার বলেন, ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি আমি প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানে নুরনবী পিংকুকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করে, সহকারী শিক্ষক পদে আমার পুত্রবধূ তানিয়া, সাজেদা বেগম ও চম্পাকে নিয়োগ দিয়েছি। কিন্তু ২০১৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করন হলে পিংকু,আমার স্বাক্ষর জাল করে একটি ভুয়া রেজুলেশন তৈরী করে সাজেদার স্থলে আনোয়ারা বেগম নামের এক মহিলাকে শিক্ষক তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে। বিষয়টি জানতে পেরে আমি শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তার এই জালিয়তির জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরনবী পিংকু এ ব্যপারে কোনো মন্তব্য না করে সব অভিযোগই হেসে উড়িয়ে দেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এসব কিছু না। আপনি শিক্ষা অফিসে আলাপ করেন। পারলে তারা সমাধান করুক।