অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বুধবার, ২৬শে মার্চ ২০২৫ | ১২ই চৈত্র ১৪৩১


শুটকি প্রস্তুতে ব্যস্ত চরাঞ্চলের জেলেরা


চরফ্যাসন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সন্ধ্যা ০৭:৫০

remove_red_eye

৮৫

এআর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন থেকে : বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের জেলে পল্লীতে রোদে শুকিয়ে শুটকি প্রস্তুতে ব্যস্ত জেলেরা। চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলিয় এলাকার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ পাতিলা,কুকরি-মুকরি,ঢালচরের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে যাদের প্রধান পেশাই হচ্ছে মাছ ধরা। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর ও কুকরি-মুকরির শুটকিপল্লীতে খোলা আকাশের নিচে বাশেঁর মাচায় রশি বেধে ছোট বড় কাচা মাছ রশিতে ঝুলানো হয় এছাড়াও মাটিতে চাটাইয়ে মেলে কাচা মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরনে ব্যাস্ত সময় পাড় করছেন শুটকি পল্লীর জেলেরা। পরে নৌকা বা ট্রলারে করে প্রস্তুতকৃত শুটকিমাছ চরফ্যাশনসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন জেলেরা। নদী ও সাগর উপকূলের দ্বীপাঞ্চলীয় এ জেলেরা মাছ ধরে শুটকি তৈরী করে জিবিকা অর্জন করছেন যুগ যুগ ধরে। এ অঞ্চলের জেলেদের অনেকেই ইলিশ মাছ আহরনের পাশাপাশি বছরের ৬মাস শুটকি ব্যবসা করেন। শুটকির ব্যবসা করে অনেক জেলেই এখন সাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর, সোনারচর, চরপাতিলা, চরকচুয়া, কুকরী-মুকরীসহ উপকুল এলাকার সাগর পাড়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় ১০ থেকে ১৫ টি শুটকী পল্লী। শুটকি পল্লীতে শুটকী প্রস্তুত করতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নিচ্ছেন পুরুষদের সহযোগীতায়। শুটকির জন্য প্রায় ২শতাধিক জেলে  নদী ও খালের পাড়ে চেউয়্যা, অলুফা, চিংড়ি,লইট্টা,বদর ছুড়ি,চাপলি,পোয়া,বুল্লা ইচা(চিংড়ির রেনু) বড় ইচা ( বড় লাল চিংড়ি) সহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয়  মাছ ধরে ৩/৭দিন রোদে শুকিয়ে শুটকি প্রস্তুত করে থাকেন। শুটকী পল্লীর জেলে আলমগীর জানান,আশ্বিন থেকে চৈত্র ৬ মাস শুটকী মৌসুম। এলাকার বেকার যুবকসহ জেলেরা নদী থেকে ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির কাচা মাছ এনে রোদে শুকিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। ঢালচর শুটকী পল্লীর জেলে রফিক জানান, ঢালচর ও চরপতিলা, কুকরী-মুকরীতে ২শতাধিকের  বেশী জেলে এ পেশার সাথে জড়িত। তিনি আরো বলেন, ১২বছর ধরে এ পেশায় আছি। শুটকী  প্রস্তুত করতে তেমন পুঁজির প্রয়োজন হয়না। শ্রমিক মজুরী খুবই কম। পরিবারের সবাই সহযোগীতা করলেই অল্প পুঁজিতে বেশী লাভবান হওয়া যায়। আমাদের প্রাচীন ঢালচর দ্বীপের বহু জেলে এ পেশার সাথে জড়িত।
তাদের মধ্যে অধিকাংশই সাবলম্বী হয়েছে। সরকার যদি এ বিষয়ে নজরদারী দিতো তাহলে শুটকীর মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব হতো। এ উপজেলার সবচেয়ে বড় শুটকির আড়ৎ দুলারহাটে প্রায়সব আড়ৎ থেকে বিভিন্ন জেলায় অধিক মুনাফায় রপ্তানি করেন পাইকাররা। দুলারহাটের শুটকি আড়তের মালিক মোঃ ইউসুফ মাতাব্বর বলেন, জেলেদের থেকে চেউয়্যা (৫০-১২০) বদর ছুড়ি(২০০-৪০০) অলুফা(২০০-২২০) লইট্টা(৩০০-৩৫০) বুল্লা ইচা(১০০-২০০) বড় ইচা(২৫০-২৮০) টাকায় কেজি প্রতি ক্রয় করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি মাছের মিশালি ফিস ফিড কোম্পানির জন্য ক্রয় করা হয়। আড়ৎদার মোঃ ফারুক মিয়া বলেন, আমাদের কাছে চরফ্যাশনের ঢালচর,পাতিলা,কুকরি-মুকরি মনপুরা,হাতিয়া নিঝুমদ্বীপ,সোনারচর পটুয়াখালির আশারচর,মহিপুরসহ কুয়াকাটা,নিজামপুর থেকে ছোট বড় শুটকির চালান আসে বিক্রির জন্য। আমাদের স্থানিয় চাহিদা মিটিয়ে এসব শুটকি দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী করা হচ্ছে। বছরের ৬মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকার শুটকী রপ্তানি হয় শুধু মাত্র চরফ্যাসন উপজেলার  ঢালচর, চরপাতিলা ও কুকরী-মুকরী থেকেই। স্থানীয় বাজারসহ  ভোলা,বরিশাল, চট্রগ্রাম, ঢাকা ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারী বাজারে রপ্তানি করা হয় দ্বীপাঞ্চলের এ শুটকিমাছ। এসব আড়তদারদের শুটকী ব্যবসায় ছয় মাসেই আয় হ্েচ্ছ কোটি কোটি টাকা। শুটকি আহরণ, প্রস্তুতকরন, বাজারজাত করন ও রপ্তানি কিছুটা কষ্টকর হলেও লোকসানের মুখে পড়তে হয়না জেলেদেরকে। এদিকে স্থানীয়দেও দাবি কিছু কিছু জেলে সচেতন না থাকায় শুটকী তৈরীর নামে নির্বিচারে নদ নদী ও সামুদ্রীক বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে ধ্বংশ করছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।