অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২৫শে মাঘ ১৪৩১


ভোলায় নিহত জেলে হাসানের পরিবারে শোকের মাতম


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রাত ১০:২৬

remove_red_eye

২৯

বাংলার কন্ঠ প্রতিবেদক : জীবিকার টানে নদীতে ইলিশ ধরতে গিয়ে নদীতে জলদস্যুর গুলিতে  মারা গেছেন ভোলার ইলিশা ইউনিয়নের জেলে হাসান। শনিবার সন্ধ্যায় ভোলার মেঘনায় জেলেদের সাথে প্রথমে নদীতে জালপাতা সংঘর্ষ,পরে জলদস্যাুর গুলিতে নৌকার মধ্যেই মারা যায় জেলে হাসান। এই ঘটনায় ৩ জন গুরতর আহত হন।
এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
স্ত্রী সন্তানদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশ। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী মুক্তা  ।
ভোলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের গুপ্তমুন্সী গ্রামের প্রতিবন্ধী মো হাসান। শারীরিক ভাবে অক্ষম হওয়াতে অন্য জেলেদের সাথে নদীতে মাছ ধরে কোন রকম জীবীকা নির্বাহ করে থাকেন । শনিবার অন্য অন্য দিনের মতো  ভোলার মেঘনায় মাছ ধরতে যায় হাসান। কে জানতো নদীতে এই যাওয়াই শেষ যাওয়া হাসানের। মাছ  ধরতে গিয়ে জলদস্যুর গুলিতে নিহত হন তিনি। এই ঘটনায় মা হারিয়েছে সন্তানকে  ও স্ত্রী তার  স্বামী হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাসানের পরিবার । তাদের  আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। শোকে পাগলপ্রায় পরিবারের স্বজনরা: কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তাদের কান্না। পাড়া-প্রতিবেশিরাও তাদের আহাজারিতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।ভোলা  সদর উপজেলার  পূর্ব  ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্ত মুন্সী গ্রামে  দেখা যায় এ দৃশ্য।
হাসানের মা মমতাজ বেগম বলেন, হাসান আমার নিরহ একটা পোলা আসিলো। ও শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী। নিজে চলতেই ওর কষ্ট হইতো। তেমন কোন কাজ করতে পারতোনা। পরিবারের কারনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। ওর দুই টা সন্তার আছে এহন ওগোরে কে দেখবো। ওরা তো এতিম হয়ে গেলো। শুক্রবার বাড়ি থেকে দুগা ভাত খেয়ে গেছে নদীতে।তারপরে আর বাড়িতে আসে নায়। আর এখন আইলো লাশ হয়ে। এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন মা মমতাজ বেগম।
হাসানের স্ত্রী মুক্তা বলেন,আমার স্বামীকে মেরে আমাকে যারা বিধবা করলো, আমার সন্তানকে এতিম করলো সরকারের কাছে আমি তাদের  বিচার চাই। আমার স্বামী যা আয় করতো তাদিয়ে আমাদের সংসার চলতো। এখন আমার সংসার কিভাবে চলবো। আমার পোলাইনের কিভাবে পড়ালেহার খরচ চালামু। আমার বাবাও নেই। এহন আর আমার কেউ নাই সংসারে।
ভবিষ্যত এখন কে দেখবো। আমার স্বামী খুব ভালো  ছিলো। কারো সাথে কোন জগড়া বিবাদ করতো না।
এখন আমি সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাব, কীভাবে স্বামীর ধার-দেনা পরিশোধ করব। বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে কীভাবে সংসার চালাব?
হাসানের একমাত্র কন্যা সাদিয়া বলেন,আমরা দুই ভাইবোন। বাবা মারা গেছে এখন আমাদেরকে দেখার মতো কেউ নাই। আমরা খাবো কিভাবে চলবো কিভাবে। কে আমাগো পড়াশোনার খরচ চালাবে এখন।
হানানের বউ এর বোন মালেকা বেগম বলেন,আমার বোন জামাই ছিলেন নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। সে ছিলো পঙ্গু মানুষ। শুধু নদীর কাজই জানতো। আর কোন কাজ যানেনা। এই নদীর কাজ করেই কোন রকম সংসার চালাতো। যারা আমার বোন জামাইরে মারছে তাদের বিচার চাই। আর সরকার যেন আমার বোনের দুটি এতিম সন্তানদের দিকে চেয়ে যেন ইকটু পাশে দাড়ায় এটাই আমাগো দাবি।
স্থানীয় রা বলেন, হাসান একজন পঙ্গু মানুষ। ও কি এমন অপরাধ করছে তার জন্য ওকে জীবন দিতে হলো। দেশে কি কোন আইন নাই। শুনছি নদীর নিরাপত্তার জন্য নৌপুলিশ আছে,কোস্টগার্ড আছে,পুলিশ আছে তারা কি কাজ করে যে সাধারন একজন জেলে নদীতে গিয়ে জীবন দিতে হলো। আমরা এই ঘটনার তদন্ত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই যারা হাসানকে মারছে তাদের।
প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় শোকে স্তব্দ পুরো পরিবার। মাছ ধরেই জীবিকা চলছিলো হাসানের  পরিবারের। এখন ছোট দুটি ছেলে- মেয়ে নিয়ে এই পরিবারে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
এমন বাস্তবতায় সরকারি সহযোগিতার দাবি নিহতের পরিবারের স্বজনদের।  পাশাপাশি এই হত্যার বিচারের দাবি জানান।
পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) রিপন কুমার সরকার জানান,নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তবে নদীতে জলদস্যু সহ বিভিন্ন ডাকাত  দমন করতে যৌথবাহিনী  যৌথ ভাবে কাজ করছে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
এ ব্যাপরে ভোলা মডেল থানার ওসি মোঃ হাসনাইন পারভেজ জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এক জেলে নিহত হওয়ার ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।