অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৮ই অক্টোবর ২০২৪ | ২৩শে আশ্বিন ১৪৩১


ভাঙ্গনের মুখে ক্রমেই মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে চরফ্যাসনের ঢালচর


এ আর সোহেব চৌধুরী

প্রকাশিত: ১৩ই জুন ২০২০ রাত ০৮:৪০

remove_red_eye

৭৩৮



এআর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন : মানচিত্র থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচর। নদী ও সাগরবেষ্টিত ছোট্ট এ দ্বীপ ইউনিয়নটি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলায় ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে অবস্থিত। প্রবল ভাঙ্গণে বিধ্বস্ত ঢালচর ইউনিয়নটি প্রায় ২শত বছর পূর্বে মেঘনা ও বঙ্গপোসাগরের বুকে জেগে ওঠে। আর এ চরটিই এখন মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এ চরের এক সময়ে মৎস আহরণের জন্য ব্যাপক নামডাক ছিল। আড়ৎ ও মাছের গদিগুলোয় ব্যাপক হাকডাক ছিল কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে শৈসব ও কৈশরের স্মৃতি চিহ্নটুকুও বলছেন জেলে মো. নাসির মিয়া (৭২)। তিনি জানান, শৈশবে দৌলতখান উপজেলার হাকিমুদ্দিন থেকে নদী ভেঙ্গে পিতার সাথে আসেন ঢালচরে সেই থেকেই বাবার সাথে নদী ও সাগরে মৎস শিকার করেই কাটিয়ে দিয়েছেন যৌবনের ৬০বছর। শেষ বয়সে এসে মেঘনা ও বঙ্গপোসাগরের করালগ্রাসে সহায়সম্বল ও জমিজমা হাড়িয়ে এখন পথে বসে গিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন,এক টুকরো ভূমি নেই। যে বুড়ো বয়সে ছেলে সন্তান নিয়ে সেখানে বসবাস করবো।

নদীর কিনারায় অবস্থিত চায়ের দোকানদার নুরুল ইসলাম ঝান্টু (৫০) বলেন, ৩৬ বছরে ১০বার নদীর ভাঙ্গণে  আমার প্রায় ১৬০ শতাংশ জমি হারিয়ে এখন খুব অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছি। আমার দুই ছেলে, বড় ছেলেকে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছি ছোট ছেলেটাও পড়ছে। তবে এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ নদী ভাঙ্গনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আর তাই ঢালচর এখন দারিদ্রতায় হাহাকার করছে।

জানা গেছে , র্দীঘ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে মেঘনার ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হাড়িয়ে এ অঞ্চল ত্যাগ করে অন্য কোন জনপদে চলে যাচ্ছেন এখানকার অনেক পরিবার। অন্যত্র চলে যাওয়া এখন ধারাবাহিকতায় পৌছে গিয়েছে। তবে বেশিরভাগ নারীপুরুষ নতুন জেগে ওঠা চরসহ স্থানীয় তারুয়ার চরে গিয়ে আশ্রয় নিলেও সেখানকার বন বিভাগ তাদের যায়গা দিতে নারাজ।
এদিকে গত একবছরের ধারাবাহিক ভাঙ্গণে শতাধিকের বেশি বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রায় হাজার হেক্টর জমির শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বনাঞ্চল ও ফসলাধি বিলিন হয়ে গেছে মেঘনা ও বঙ্গপোসাগরের ঘোলাটে জলের পেটে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালাম হাওলাদার জানান, এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নেই কোন খাল যাতে করে এ অঞ্চলের ৯৮ ভাগ জেলে বন্যা ও জলচ্ছাসের সময় সাগর ও নদী থেকে খালে এসে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পাড়ে।

এছাড়াও র্দীঘ বছরের ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে হাজার,হাজার একর জমি খালি পড়ে থাকা চর তারুয়া ও পূর্ব ঢালচরে এক টুকরো ভূমি পাচ্ছেনা চষাবাদসহ বসতী স্থাপনের জন্য।  তিনি আরও বলেন,খালি থাকবেনা এক শতাংশ জমিও,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষনা থাকলেও হাজার,হাজার একর জমি পড়ে আছে এসব চরে তবুও জনস্বার্থে চাষবাস করার অনুমতি মিলছেনা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের। অথচ গত এক বছরে ঢালচরবাসীর প্রায় ৫০একর জমি ও ২শতাধিকের বেশি বাড়িঘর এবং বনাঞ্চলসহ ব্যাপক ফসলাধি বিলিন হয়েছে নদীগর্ভে। বর্তমানে মাত্র ১২শ ১২ একর ৫২ শতাংশ জমি নিয়ে এ ঢালচরটি অনবরত ভাঙ্গণের মুখে রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, ঢালচর ইউনিয়নে ভাঙ্গণ কবলীত মানুষের জন্য ভূমী বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। এবং চরতারুয়া ও পূর্ব ঢালচরের বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।


চরফ্যাশন