অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শনিবার, ১১ই জানুয়ারী ২০২৫ | ২৭শে পৌষ ১৪৩১


ভোলায় বাবা-ছেলের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘটনা আড়াল করতে নিজ ঘরে আগুন দেয়ার অভিযোগ


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০ই জানুয়ারী ২০২৫ সন্ধ্যা ০৬:৪২

remove_red_eye

১৯

টিপু সুলতান : ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নে জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বাবা-ছেলের উপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়েছেন প্রতিপক্ষরা। ঘটনাটি আড়াল করতে প্রতিপক্ষরা নিজ ঘরে থাকা লাকড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বাবা-ছেলেসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। বাবা-ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যমকর্মীরা সরেজমিনে গেলে ঘটনার মূল রহস্য বেড়িয়ে আসে। আর এই ঘটনার নাটকের গুরু হলেন মাকসুদ আলম নামের এক ব্যক্তি। যিনি বাবা-ছেলের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার ৩ নম্বর আসামি। পুলিশ বলছে, ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাপ্তা ইউনিয়নের পাইলট বাজারের নান্টু মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে প্রতিপক্ষরা বাবা-ছেলের উপর এমন নির্মম হামলা চালায়।
ভুক্তভোগী বাবা-ছেলের অভিযোগ এবং সরেজমিন তদন্তে জানা যায়, গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মো. বিল্লাল হোসেন এবং তাঁর ছেলে মো. তামিম আহমেদ পাইলট বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় একই বাড়ির বাসিন্দা মো. মাহাবুবুল আলমের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ জমির বিষয়ে তামিম ও তাঁর বাবা বিল্লাল হোসেন কথা বলছিলেন। কথার একপর্যায়ে মাহাবুবুল আলমের সঙ্গে তামিমের তর্কবিতর্ক বাঁধে। পরে স্থানীয় পথচারীরা তাদের দুজনকে দু'দিকে পাঠিয়ে দেয়। এরইমধ্যে মাহাবুবুল ফোন করে মানসুর রহমান, মাকসুদ আলম ও বাবুকে ফোন করে নান্টুর দোকানের সামনে নেয়। এরপর তাঁরা সবাই একত্রিত হয়ে তামিম ও তাঁর বাবাকে মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে মাহাবুবুল আলম চায়ের দোকানে থাকা খুন্তি দিয়ে তামিমের মাথায় আঘাত করে। তামিম গুরুতর আহত হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে ও তাঁর বাবাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। খুন্তির আঘাতে তামিমের মাথা ফেটে যায় এবং ৩টি সেলাই লাগে।
এদিকে বাবা-ছেলের উপর হামলা করার পর প্রতিপক্ষরা মামলা থেকে বাঁচতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মানসুর রহমান তাঁর নিজ ঘরের লাকড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তা তামিম ও তাঁর বাবার উপর চাপানোর চেষ্টা করে। তাদেরকে মামলা দিয়ে ঘায়েল করতে পহেলা জানুয়ারি মানসুর রহমানের বোন বিবি হালিমা বেগম তামিম ও তাঁর বাবা বিল্লাল হোসেনসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ভোলা থানার পুলিশকে নির্দেশ দেয়।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) এই প্রতিবেদকসহ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী সরেজমিনে গেলে লাকড়িতে আগুন দেওয়ার রহস্য বেড়িয়ে আসে। মানসুর রহমানের স্ত্রী আকলিমা বেগম প্রথমে দাবি করেন, ৩১ ডিসেম্বর রাতে তাঁর বাড়িতে কে বা কারা গিয়ে লাকড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তাকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। তিনি তখন ঘরে একা ছিলেন। ঘরে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে তিনি কাউকে চিনতে পারেননি। আপনার ঘরের লাকড়িতে আগুন দিয়েছে এবং আপনাকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে কিন্তু, আপনি কাউকেই চিনতে পারেননি, তাহলে আপনি তামিম এবং তার বাবাকে কেন এ ঘটনায় আসামি করে মামলা করলেন ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্ন শুনে তিনি দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যান। এছাড়াও ঘটনার বিষয়ে তাকে আরো বেশকিছু প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মাকসুদ আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনিও দিতে পারেননি। একপর্যায়ে তিনি আকলিমা বেগমসহ আরো কয়েকজনকে টেনে ঘরে নিয়ে যান। তখন তিনি বলেন, 'সাংবাদিকদেরকে কিছু বলিস না, এঁরা একের পর এক প্রশ্ন করে মূল ঘটনা বের করে ফেলবে'।
বাবা-ছেলেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘায়েল করতে লাকড়ির ঘরে এই আগুন আপনার কুপরামর্শে দেয়া হয়েছে এবং আপনি এ ঘটনার নাটকের গুরু বলে অভিযোগ উঠেছে, এতে আপনি কি বলতে চান ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, 'মামলা মিথ্যা দিছি আর সত্য দিছি, সেটা পুলিশে দেখবে, আপনাদেরকে কিছুই বলব না।
সরেজমিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এবং আকলিমা বেগম যেসমস্ত কথা বলেছেন। তাঁর ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
তামিম এবং তার বাবাসহ স্থানীয়রা দাবি করছেন, মাকসুদ আলম একজন মামলাবাজ। তাঁর ইন্ধনে এবং কুপরামর্শে এই মিথ্যা মামলা হয়েছে। তাঁরা দ্রæত এই মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি চান।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসনাইন পারভেজ বলেন, অনেক দুষ্ট লোকই মামলা থেকে বাঁচতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা দিয়ে থাকে। প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার মূল রহস্য বেড়িয়ে আসে। আপনারা যেহেতু, ঘটনার মূল ক্লু খোঁজে পেয়েছেন। সেহেতু আমিও তদন্ত কর্মকর্তাকে বলব, ঘটনাটি এ টু জেড তদন্ত করতে।





আরও...