নেই পুর্নবাসনের উদ্যোগ
ইসরাফিল নাঈম ,চরফ্যাশন : ভোলার চরফ্যাশনে নীলিমা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে আশ্রিত ২০ পরিবারের ঘর ভেঙে যায়গা থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছেন দুর্বৃত্তরা। এদিকে প্রশাসন পুনর্বাসন না করায় বিপাকে পড়েছেন পরিবারগুলো। এতে পরিবারগুলো দীর্ঘদিন স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সেখানেও আশ্রয় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ২৪ দিন পর উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় ঝুপড়ির ঘর তুলে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে করছেন বসবাস তারা।
জানা যায়, চরফ্যাশন পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ড আদর্শ গ্রামে ২০১৭ সালে সরকারি অর্থায়নে নিলিমা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ২০টি ঘর বরাদ্দ দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এরপর থেকে দীর্ঘ ৭ বছর এই দুঃস্থ অসহায় ২০ পরিবার এসব ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে এরপর থেকেই আশ্রিত ২০ পরিবারকে জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হুমকি প্রদান করেন স্থানীয় যুবদলের কতিপয় নেতাকর্মীরা। তাদের হুমকিতে ঘর ছেড়ে না যাওয়ায় গত ১৭ নভেম্বর রবিবার ও ১৮ নভেম্বর সোমবার দিবাগত রাতে ভাঙচুর করে লুটে নেওয়া হয় দরজা ও জানালা এবং টিনের চাল। এতে অসহায় পরিবারগুলোকে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। এসব পরিবারগুলো স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় না পেয়ে বাধ্য হয়ে খালি ভিটায়ই ফিরেছেন। বর্তমানে ঝুপড়ির ঘর তুলে সেখানেই বসবাস করছেন ।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীলিমা আশ্রয়ন প্রকল্পের উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন মিজান-বকুল দম্পতি। কথা হলে মিজান বলেন, সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। দুর্বৃত্তরা আমাকে পুরো নিঃস্ব করে দিয়েছে। ২০১৭ সালে আশ্রয়ণের ঘরটি নেই। গত ১৭ নভেম্বর দুর্বৃত্তরা আমার ঘরের চাল-বেড়াসহ সবকিছু নিয়ে গেছে। ওইদিন রাত কোনোমতো কাটিয়ে সকালে আশ্রয়ের নেই বোনের বাড়িতে। সেখানে আশ্রয়ে মেলেনি। বাধ্য হয়ে খালি ভিটায়ই ফিরেছি। বর্তমানে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছি। প্রায় এক মাস হয়ে গেছে কোনো কামকাজ নাই। কী করে ঘর তুলব মাথায় আসছে না। অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের পুনর্বাসনে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ দেখিনি।
আবাসনে ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী জেলে বাবুল বলেন, মেঘনার স্রোতে ভেঙে যায় আমাদের বসতভিটা। পরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এরপর ২০১৭ সনে সরকারি ভাবে নীলিমা আশ্রয়ণে ঘর পাওয়ার পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলাম। কিন্তু গত ১৭ নভেম্বর দুর্বৃত্তরা আমার আশ্রয়ণের ঘরের দরজা-জানালা, টিনের চালা ভেঙে দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছে। রাইতটা কোনরকমে পার করি, দিন হইলে মালামাল নিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানেও আশ্রয় মিলেনি।বাধ্য হয়ে আশ্রয়নের খালি জায়গায় ফিরেছি। এবং ঝুপড়ির ঘর তুলে বসবাস করছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের রাস্তায় কেন নামানো হলো আমরা সেটাই বুঝতে পারছি না। আমাদের পুনর্বাসন করুন, আমাদের থাকার জায়গা দিন, এই শীতের মধ্যে আমরা কীভাবে রাত্রিযাপন করব। আমাদের এই জায়গা ছাড়া কোথাও থাকার মতো জায়গা নেই।
তার পাশে ঝুপড়ির ঘরে রান্না করছিলেন পিয়ারা বেগম। তিনি বলেন, সেদিন রাতে ঘরের টিনের চাল ছুটাইয়া নেন দুর্বৃত্তরা। কোনোমতে জীবন বাঁচিয়েছি। ঘরের সব আসবাব শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে রান্না করে খেয়ে না-খেয়ে বেঁচে আছি, প্রায় ২৪ দিন অতিবাহিত হলেও সরকারি ভাবে কোনো সাহায্য পাইনি।
শুধু পিয়ারা নয় এমন চিত্র দেখা গেছে অন্য পরিবারগুলোরও। দুর্বৃত্তরা তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করায় নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। একদিকে খাদ্যের অভাব, অন্যদিকে বাসস্থান তৈরির দুশ্চিন্তা ভর করেছে ঘরহীন-ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর।
যুবদল নেতা অভিযুক্ত রাসেল ও মমিন বলেন, এটা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমাদের নিজেদের মধ্যে একটি মামলা চলমান। এই সুযোগে জোর করে আওয়ামী লীগের পৌরসভা ২ নং ওয়ার্ড সভাপতি জসিম এবং সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম কিসানসহ আওয়ামী লীগের নেতারা পুলিশের সহায়তায় আমাদের জমিতে আবাসনের ঘর তোলেন। আমরা বিএনপি করায় কোনো রকম প্রতিবাদ করতে পারিনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পতনের পর তারা নিজেরাই তাদের ঘর ভেঙে অন্যথায় চলে যায়। আমরা কারও ঘর ভাঙিনি। এ বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাছাড়া জায়গাটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের এবং তাদের তদন্তধীন রয়েছে। জায়গাটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। তবে সরকারীভাবে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।