অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর ২০২৪ | ৩০শে কার্তিক ১৪৩১


ঢাকা মেডিকেলে অনেক লাশের মধ্যে পড়েছিল শহিদ রনির লাশ


হাসনাইন আহমেদ মুন্না

প্রকাশিত: ৫ই অক্টোবর ২০২৪ বিকাল ০৫:৩৯

remove_red_eye

১০২

হাসনাইন আহমেদ মুন্না :  গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী  ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে  ঢাকা মেডিকেলে অসংখ্য লাশের মধ্যে পড়েছিল শহিদ মো: রনির লাশ। প্রায় দেড় ঘন্টা  ধরে খোঁজাখুঁজির পর মেডিকেলের ইমার্জেন্সি বিভাগের উত্তর পাশে বেশকিছু  লাশের মধ্যে মিলল তার লাশ। পুরো মেডিকেল জুড়ে ছিল অনেক লাশ  ও আহত মানুষের আহাজারি। 
সেদিন শহিদ রনির লাশ শনাক্তকারী তার চাচা আমির হোসেন মুঠোফোনে এসব কথা বলেন। 
তিনি বলেন, রনির বাবা ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী  ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: হারুন আমার চাচাতো ভাই। রনি রাজধানীতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। গত ৫ আগস্ট  বিকেলে আমাকে জানানো হয় রনির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে রয়েছে। রাতে সেখানে গিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর মেডিকেলের ইর্মাজেন্সি বিভাগের উত্তর পাশের একটি স্থানে ১৬ টি লাশের মধ্য থেকে শহিদ রনির গুলিবিদ্ধ  লাশ শনাক্ত করি। 
ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী  ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বালিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ হারুনের দ্বিতীয় ছেলে মো: রনি(২২)। পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গত প্রায় বছরখানেক হলো রনি ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ নেন। কিন্তু  ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কর্মস্থল থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হলে তাকে। রনির এই অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে পরিবারের অন্যান্য সদস্য। এখনো পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম।
সরেজমিনে শহিদ রনির বালিয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা হারুন ও মা মাহিনুর এখনো কাঁদছেন ছেলের জন্য। রনির বড় ভাই রাকিব কুমিল্লায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। ভাইয়ের মৃত্যুতে সে বাড়িতে চলে এসেছে। ছোট বোন নূপুর স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এছাড়া আরো এক বোন সুমি বেগম থাকেন শ্বশুর বাড়িতে। 
শহিদ রনির পিতা মো: হারুন বাসস’কে বলেন, রনি ঢাকার গুলিস্তান এলাকার একটি মেসে থাকতো। গত ৫ আগস্ট রনি কাজে যায়নি। সকাল দশটার দিকে রনি আমাকে মুঠোফোনে বলে, আব্বা ঘর থেকে বের হইয়েন না, ঢাকার অবস্থা খুব খারাপ। এখনো নিচে নেমে খাবার খেতে যেতে পারিনি। তখন রনির পিতা বলেন, আমরা ঠিক আছি, তুমি কিন্তু নিচে নেমো না, ঘর থেকে বের হইও না বাবা। এটাই ছিলো ছেলের সাথে আমার শেষ কথা।
রনির পিতা আরো বলেন, শেষ পর্যন্ত বেলা এগারোটার দিকে রনিসহ কয়েকজন নিচে খাবার খেতে নামে। খাওয়া শেষে  গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় রনি। তার তলপেটে একটি গুলি লাগে। পরে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে জানতে পারি ছেলের মৃত্যুর খবর।  
তিনি বলেন, পরে ঢাকায় বসবাস করা আমার চাচাতো ভাই আমির হোসেনকে জানালে সে রাতেই রনির লাশ নিয়ে ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরদিন সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করি। 

রনির বড় ভাই মো: রাকিব বলেন, গুলিস্তানে রনি যখন গোলাগুলির মধ্যে পড়ে,তখন তার সাথে যারা ছিল সবাই দিক-বিদিক হয়ে ছোটে। রনির গায়ে কিভাবে গুলি লাগে কিংবা কারা হাসপাতালে নিয়ে যায় আমরা সেসব কিছুই জানতে পারিনি। শুধু দুপুরে আমাদেরকে জানানো হয় রনির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। 
রনির মা মাহিনুর বলেন, রনির বাবার বয়স হয়েছে, তাই আগের মত কাজ করতে পারে না। তাদের দুই ছেলে রাকিব ও রনি রাজমিস্ত্রির কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাতো। সেই টাকায় তাদের সংসার চলত। রনির এমন অকাল মৃত্যুতে  তাদের পরিবারের আয়ের বড় একটি খাত বন্ধ হয়ে গেল। বর্তমানে পরিবারে আর্থিক দুরাববস্থা দেখা দিয়েছে। তাই সরকারি সহায়তা প্রত্যাশা করছেন তিনি।
রনিদের প্রতিবেশী  ফজলুর রহমান বলেন, পরিবারের ছোট ছেলে রনিকে হারিয়ে তার বাবা অনেকটাই পাগল প্রায়। সারাদিন ঘরেই থাকে। সরকার যদি পরিবারটির পাশে দাঁড়ায় তাহলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।





আরও...