অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৪ই পৌষ ১৪৩২


গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৬ই আগস্ট ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:২৯

remove_red_eye

১০২৫

অবশেষে শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশের মহাপরাক্রমশীল প্রধানমন্ত্রী, মুখরা রাজনীতিবিদ, কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতের দিল্লিতে সাময়িকভাবে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সেখান থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, গতকাল সোমবার রাতেই তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন। পরে জানা যায়, যুক্তরাজ্য তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও অফিসিয়ালি এ তথ্য কেউ স্বীকার করেনি। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনা আগামী কয়েকদিন দিল্লিতেই ‘সেফ হাউসে’ থাকতে পারেন। তবে ভারতে তিনি কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি।

সূত্র জানায়, দুপুরে গণভবন থেকে ভারতের সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে আগরতলার উদ্দেশে যাত্রা করেন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনা যুগের অবসান ঘটল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

স্বাধীন বাংলাদেশে ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর আরও একটি মহান অভ্যুত্থানের সাক্ষী হলো দেশবাসী। তবে, এবার মূল্য দিতে হয়েছে অনেক বেশি। গত দেড় দশকে লাখ লাখ মামলায় হাজার হাজার মানুষ কারাবন্দি হয়েছেন। গুম, হত্যার শিকার হয়েছেন অগুনতি ব্যক্তি। সহায়-সম্পদ খুইয়ে সর্বহারা হয়েছেন বিরোধী মতের লাখো নেতাকর্মী। অনিবার্য এই অভ্যুত্থানে প্রায় কয়েকশ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। এর মধ্যে চার বছরের শিশুও রয়েছে। তিন শতাধিক শিক্ষার্থী-তরুণের তাজা রক্তের স্রোতে ভেসে গেল অবশেষে তিন-তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের কারিগর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে টানা সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনমুক্ত হলো বাংলাদেশ। পেছনে পড়ে রইল ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দিকনির্দেশনাহীন, বিভ্রান্ত, হতাশ, নিরাপত্তাহীন লাখো নেতাকর্মী। তিনি তার বাবার হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিয়ে গেলেন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন।

 

যেভাবে আগুন ছড়াল: আন্দোলনের মুখে নির্বাহী আদেশে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরি থেকে কোটা প্রথা বিলুপ্ত করেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি সংগঠনের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর গত ৬ জুন হাইকোর্ট আবারও কোটা বহাল করে রায় দেয়। এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরদিন ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনে’র ব্যানারে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংগঠিত হতে থাকেন তারা। এ ব্যাপারে সরকারপ্রধানের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দেওয়া বক্তব্য, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ছাত্রলীগের হুমকি আন্দোলনে গতি সঞ্চার করে। আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতি-পুতি হিসেবে ইঙ্গিত করায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অভিমানে নিজেদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে তারা স্লোগান দেন সারা দেশের ক্যাম্পাসে। অবস্থা বেগতিক দেখে ছাত্রলীগ পুলিশ ও বহিরাগত হেলমেট বাহিনীর সহযোগিতায় বেদম পেটায় আন্দোলনকারীদের। এক পর্যায়ে রংপুরে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এ দৃশ্য লাইভে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় পুরো জাতি। ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভের আগুন সবখানে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়নও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সমন্বয়কদের কয়েকজনকে গুম এবং পরে তুলে নিয়ে আটকে রাখা হয় ডিবি অফিসে। তাদের দিয়ে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা পাঠ করান সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ। এদিকে, আন্দোলনে যোগ দেয় অভিভাবকের সঙ্গে, শিক্ষক, নানা শ্রেণির পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ। ঢাকার আকাশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়। গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে মারা যায় ফুটফুটে শিশু, মেধাবী শিক্ষার্থী, নিম্ন আয়ের মানুষ, পথচারীসহ অনেকে। প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় লাশ পড়তে থাকে। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ, টিয়ার গ্যাসের শেল, বাতাসে বারুদের গন্ধে এক যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা দেয় দেশে।

আন্দোলনকারীদের ডাকে একের পর এক অভিনব কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে থাকে কবি-শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দল শুরু থেকে সহযোগিতা করে আসছিল। শুরুতে কোটা বাতিল চাইলেও আস্তে আস্তে চার এবং নয় দফায় ওঠে আন্দোলন। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস করে দুর্বৃত্তরা। প্রধানমন্ত্রী সেসব পরিদর্শনে গিয়ে সম্পদের জন্য কান্নাকাটি করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। কারফিউ জারি করার মধ্য দিয়ে সরকার নিজের কফিনে নিজেই শেষ পেরেক ঠুকে দেন। শিক্ষার্থীদের দাবি মানা হবে বললেও তাদের ওপর হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার চলতেই থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করলেও আন্দোলন দমনে সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশিত হতে থাকে। দিন দিন দানা বেঁধে ওঠে গণঅভ্যুত্থানের ডাক। অনেক দেরিতে টনক নড়ে সরকারের। আলোচনার প্রস্তাব দেন সরকারপ্রধান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেলে আন্দোলনকারীদের ডাকে সর্বস্তরের মানুষ জড়ো হলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বতঃস্ফূর্ত এক অভ্যুত্থান থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে একদফা ঘোষণা করেন। হাজারও জনতা সমস্বরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিকে সমর্থন করেন এক আঙুল দেখিয়ে। বাঙালির অহংকারের শহীদ মিনার, মুক্তির সোপানতল আবারও একটি আবেগের সাক্ষী হয়ে রইল। পরদিন ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ দিন সারা দেশে ১৪ পুলিশ, শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। সমন্বয়করাও চাইছিলেন আন্দোলনকে দ্রুত পূর্ণতা দিতে। তাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনেন। ৫ আগস্ট ঠিক হয় ‘মার্চ টু ঢাকা’। ওদিকে, তিন বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বারবার ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করেও গুজব আটকাতে ব্যর্থ হয় সরকার। শেষ মুহূর্তে জনগণ মুক্তির আভাস পেলেও বুঝতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ৪ আগস্টও আন্দোলনকারীদের জঙ্গি, বিএনপি-জামায়াত, সন্ত্রাসী উল্লেখ করে হামলা অব্যাহত রেখেছে।

রাতভর নানা গুঞ্জনের পর গতকাল ভোরে অবশেষে পালালেন শেখ হাসিনা। দেশকে সংকটে রেখেই চলে গেলেন তিনি। দেশজুড়ে চলছে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। এমনকি তার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণভবন লুট হয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল আক্রমণের স্টাইলে। গত ১৫ বছরের দমন-পীড়নের বদলা নিতে এরই মধ্যে সারা দেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ, তাদের বাড়ি-অফিসে হামলা-আগুন দেওয়া অব্যাহত রেখেছে উন্মত্ত জনতা। শ্রীলংকান স্টাইলে চলছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সন্ধান। এদিকে, তিনি লাখো নেতাকর্মীকে বিপদে ফেলে রেখে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে আবারও আশ্রয় প্রার্থনায় পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশ বিভুঁইয়ে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। ভয়ভীতি দেখিয়ে চাহিদামতো দল নিয়ে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন করেছেন। এমনকি নিজ দলেও যোগ্য রাজনীতিক প্রার্থী বাদ দিয়ে ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সুযোগ করে দিয়েছেন। চরম সংকটকালে সেইসব ব্যবসায়ী ও সুবিধাভোগী সাংবাদিক নেতারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তাকে বিভ্রান্ত করেছেন। ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও গ্রামে গ্রামে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া আওয়ামী লীগের কর্মী ছিল। যে কারণে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যায় তারা। কিন্তু, টানা চারবার ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ সেই সব নেতাকর্মীদের হারিয়ে ফেলেছে। ফলে, স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, ঐতিহ্যবাহী দলটির অস্তিত্বই এখন প্রশ্নের মুখে পড়ল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের কাছে দলটির হেরে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজন হলো।

এদিকে অর্থ পাচার, সীমাহীন দুর্নীতি ও অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতিতে দেশের অর্থনীতির অবস্থা জেরবার গত কয়েক বছর ধরেই। এই পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জাতির সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি আশা করেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে সব সংকট দূর করে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবেন।





তারেক রহমান দুটি আসনে নির্বাচন করছেন, ঢাকা–১৭ ছেড়ে ভোলায় যাচ্ছেন আন্দালিভ পার্থ

তারেক রহমান দুটি আসনে নির্বাচন করছেন, ঢাকা–১৭ ছেড়ে ভোলায় যাচ্ছেন আন্দালিভ পার্থ

ভোলা-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আন্দালিভ রহমান পার্থ

ভোলা-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আন্দালিভ রহমান পার্থ

সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন বেগম খালেদা জিয়া: ডা. জাহিদ হোসেন

সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন বেগম খালেদা জিয়া: ডা. জাহিদ হোসেন

গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশজুড়ে প্রচারণা চালাচ্ছে ‘ভোটের গাড়ি’

গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশজুড়ে প্রচারণা চালাচ্ছে ‘ভোটের গাড়ি’

ভোলা-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে লালমোহনে আসছেন মেজর (অব:) হাফিজ

ভোলা-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে লালমোহনে আসছেন মেজর (অব:) হাফিজ

ভোলায় ধান চাউল আড়ৎ মালিক সমিতির কমিটি গঠন

ভোলায় ধান চাউল আড়ৎ মালিক সমিতির কমিটি গঠন

আমরা সবাই চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা সবাই চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ভোলায় আবাসিক হোটেল থেকে ব্যবসয়ারী ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ভোলায় আবাসিক হোটেল থেকে ব্যবসয়ারী ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ভোলায় অসহায় দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ

ভোলায় অসহায় দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ

২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনআইডি পাবেন তারেক রহমান

২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনআইডি পাবেন তারেক রহমান

আরও...