ইসরাফিল নাঈম, শশীভূষণ : ভোলার চরফ্যাশনের বেতুয়া-ঢাকা রুটে লঞ্চ মালিকদের রোটেশন সিন্ডিকেটে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। যাত্রীদের হয়রানি করে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ। হাতে বহনকারী ব্যাগ বা বস্তা থেকেও বেশি ভাড়া আদায় করছে লঞ্চ স্টাফরা। বাধ্য হয়ে অন্য পথে চলাচল করছে যাত্রীরা। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ইজারাদার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
জানা গেছে, ২০০১ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম প্রথম একটি লঞ্চ দিয়ে এই রুট চালু করেন। পরে নানা কারণে স্থায়িত্ব হয়েছে মাত্র ৭ দিন। পরবর্তীকালে সংসদ সদস্য তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বেতুয়া-ঢাকা রুটটি চালু করেন।
পর্যায়ক্রমে এই রুটে তিনটি লঞ্চ কোম্পানি যুক্ত হয়। অনুমোদন অনুযায়ী প্রত্যেক কোম্পানির একটি করে লঞ্চ দৈনিক যাতায়াত করার কথা। কিন্তু মালিকদের রোটেশন অনুযায়ী প্রথমে তিন কোম্পানির তিনটি লঞ্চ নিয়মিত যাতায়াত করে। কয়েক মাস ধরে এক মালিকের দৈনিক দুটি লঞ্চ যাতায়াত করলেও বর্তমানে একটি লঞ্চ চালু রয়েছে। পরের দিন অন্য লঞ্চ চলাচল করে।
যাত্রীরা জানায়, এক মালিকের লঞ্চ হওয়ায় যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ খারাপ আচরণের অভিযোগ। এই রোটেশন সিন্ডিকেটে বেতুয়া ঘাটটি এখন প্রায় যাত্রীশূন্য। ঢাকাগামী যাত্রীরা এখন অন্য রুট ঘোষের হাট, লালমোহন, ভোলা ব্যবহার করে ঢাকায় যাতায়াত করছেন। এতে বেকার হচ্ছেন বেতুয়া ঘাটের শ্রমিকরা, লোকসান গুনছেন ঘাট ইজারাদার।
বেতুয়া ঘাটের যাত্রী মো. হৃদয় বলেন, তিনটি লে র পরিবর্তে একটি লঞ্চ চলার কারণে জুলুম অত্যাচার তো আছেই, তারপরে কেবিন চাইলেও পাচ্ছি না। এজন্য অন্য রুট দিয়ে যেতে হয়। লঞ্চ কোম্পানির যদি না পোষায় তারা সরকার থেকে এক রুটে এতগুলো কোম্পানি অনুমোদন নিলো কেন। এখন যাত্রীদের জিম্মি করে ব্যবসা করছে।
ঘাটের চায়ের দোকানদার ফজলুর রহমান বলেন, আগে এই ঘাটে অনেক লঞ্চ যাত্রী হতো। আমরা তাদের কাছে চা বিস্কুট বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতাম। এখন আগের চাইতে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ঘাট শ্রমিক সর্দার ইছহাক বলেন, প্রতিদিন ৩-৪টা ল ছাড়ত। যাত্রীদের মালামাল টেনে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতাম। এহন দৈনিক একটা লঞ্চ ছাড়ে, তাই যাত্রী কমে গেছে। আগের মতো কামাই হয় না।
লঞ্চের এক সুপারভাইজার বলেন, এভাবে লঞ্চ চালিয়ে মালিকারা লাভবান হয়, কিন্তু লঞ্চ স্টাফদের অনেক লোকসান হয়।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী লঞ্চ মালিক মো. সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এই রুটে যাত্রী কিছুটা কম। এজন্য একটি লঞ্চ চলে। যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা লঞ্চ মালিকরা শিগগিরই আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করব।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেক মূহিদ বলেন, কিছুদিন আগে আমিও লঞ্চে গিয়ে কেবিন পাইনি। অনেক কষ্ট করে ঢাকায় যেতে হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।