অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


করোনা প্রভাব: তরমুজের বাম্পার ফলনেও চাষিদের মূলধণ উঠছেনা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২শে এপ্রিল ২০২০ রাত ১১:৪০

remove_red_eye

৭৭৪

বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি:: ভোলার বোরহানউদ্দিনে গত বছর ফলনে চরম মার খাবার পর গত দশ বছরের মধ্যে সবো”চ বাম্পার ফলনে হলেও করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বাজার চাহিদা কম থাকায় বিক্রি করতে না পারায় চাষিদের মূলধনও উঠে আসছেনা। খেতে পেঁকে নষ্ট হচ্ছে তরমুজ। সীমিত পরিসরে ট্রলার-ট্রাকে করে তরমুজ পরিবহনের ব্যবস্থা করা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এতে চাষিদের কয়েকগুণ বেশী ভাড়া গোনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে নানা বাঁধার মুখে পড়তে হয় বলে চাষিরা জানান।


ফলে লাভ তো দূরের কথা, মূলধনের অর্ধেক টাকা উঠবে কি না, তাই নিয়ে সংশয়ে আছেন চাষিরা। পরিস্থিতি এমন যে, বহু কৃষকের পথে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা। করোনার নেতিবাচক প্রভাবে চোখে অন্ধকার দেখছেন তরমুজ চাষরাী। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় ৩ শত ২১ একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। তবে কৃষরা বলছেন এর পরিমান আরো অনেক বেশী। উপজেলা তেঁতুলিয়া নদী সংলগ্ন গঙ্গাপুর ইউনিয়নে ৮০ শতাংশের বেশী তরমুজ উৎপাদন হয়। গঙ্গাপুর ইউনিয়নের শিকদার চরের অহিদ সর্দার জানান, ৮ একর জমিতে এবার ড্রাগন  জাতের তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। সবমিলিয়ে বিক্রি ৪ লাখ টাকা হতে পারে। গত বছর একই পরিমান জমিতে তরমুজ চাষ করে ফলন না হওয়ায় ৭ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে।


সরেজমিনে গঙ্গাপুরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর লতিফে গিয়ে দেখা যায় কয়েক শত একর জমিতে তরমুজ খেত। ওই চরের তরমুজ খেতে চাষি তাজল ইসলাম বলেন, ২৪ একর জমিতে জাম্বু জাগুয়ার, বিট ফ্যামিলি ও ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। ২৪ লাখ টাকা বিনিয়োগে ৬ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। সবমিলিয়ে আরো ৪ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হতে পারে। গত বছরও সাড়ে ৮ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছি। চরলতিফ ও পাতার চরের চাষি লিটন মেম্বার বলেন, ২০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি।  ২০ লাখ টাকার খরচের মাত্র ৪ লাখ টাকা উঠে এসেছে। খেতে যে তরমুজ আছে তাতে  সবো”চ ২ লাখ টাকা আরো বিক্রি নামতে পারে।


ওই দুই কৃষক জানান, প্রথমে তরমুজ  নৌপথে ট্রলার দিয়ে বরিশাল অংশে নিয়ে কুমিল্লা, সিলেট, কুমারকান্দি ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় পাইকারদের পৌঁছে দেয়া হয়। সড়ক পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা  নানাভাবে হয়রানী করে।
আগে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এলাকায় এসে তরমুজ কিনে নিয়ে যেত। পরিবহনও করত তারা। আমাদের কিছুই করতে হতো না। এখন তারা  তো আসছেই না,  পাইকারদের আড়তে ৩-৪ দিন বসে  থেকেও বিক্রি করতে পারছি না। চাষিরা জানান, সরকার যদি তাঁদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে পথে বসতে হবে।


তরমুজ কিনে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সোহেল জানান, গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় ১ হাজার  তরমুজ চাষিদের কাছ থেকে কিনে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে আরো কিনার বরাদ্দ আসেনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, বাম্পার ফলন হবার পরও বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে চাষিরা লোকসানে পড়েছে। কৃষি অফিস পরবর্তী সহায়তায় সব সময় তাঁদের পাশে থাকবে।  ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজি জানান, তরমুজ সহ যেকোন কৃষিপণ্য পরিবহণে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্বক সহায়তা করবে।


ভোলা-২(বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান)আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল বলেন, করোনার কারণে প্রায় সব সেক্টরেই দরিদ্র মানুষ নানামুখী বিপদে পড়েছেন। আমি চাষিদের কাছ থেকে তরমুজ কিনে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেছি। আমাদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকেও এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের জন্য বিশাল অংকের কৃষি প্রণোদনা ঘোষনা করেছেন। আলাদাভাবে এ ব্যাপারে  কৃষি এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে।