অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


চরফ্যাসনে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩রা সেপ্টেম্বর ২০২৩ রাত ১০:১৪

remove_red_eye

১৭১

বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক  : ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বেসরকারি এনজিও সংস্থার পরিচালিত মধ্য চরআইচা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো.বশিরউল্লাহ মিয়া স্কুলের টিনসেড ঘর ভেঙ্গে আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ায় মাটিতে বসে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করছেন শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার সময় উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের রফিক মাতাব্বরের বাড়ির ওঠানে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ করতে দেখা গেছে। এতে করে শিশু শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জিসান, সাকিব, সেলিনা ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তানহা জানায়, গত ২৭ আগষ্ট রবিবার তারা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসে দেখেন স্কুল ঘরটিসহ আসবাবপত্র কিছুই নেই। এরপর শিক্ষকরা তাদেরকে একটি দোকানের সমানে বসিয়ে পরীক্ষা নেন। পরর্বতীতে পরীক্ষা শেষ হলে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় রোদ-বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বসিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। স্কুল ঘর ও আসবাবপত্র না থাকায় তারা মাটিতে বসে কষ্ট করে ক্লাশ করতে হচ্ছে। তারা দ্রæত তাদের স্কুল ঘরসহ পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

ওই এলাকার স্থানীয় মো. মুরাদ ফরাজি, রিয়াজ, ও মো. সবুজ  জানান, ২০০৬ সাল থেকে শুরু হয়ে মধ্য চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত এই এলাকায় দেখে আসছেন। কিন্তু গত ২৫ আগষ্ট শুক্রবার ভোর রাতে কো-ইড স্কুলের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. বশিরউল্লাহ মিয়া স্কুলটি ভাংচুর করে অস্তিত্ব গায়েব করে দেন। এতে করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েন।
তারা আরো জানান, সভাপতি স্কুলটি গায়েব করায় বর্তমানে শিক্ষার্থীদেরকে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রæত সময়ের মধ্যে স্কুলটি একই জায়গায় বহাল রাখার দাবী জানান তারা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম জানান ২০০৬ সালে চরফ্যাশনের চরমানিকা ইউনিয়নের চর আইচা গ্রামে অস্ট্রেলিয়ান সংস্থার আর্থয়ানে মধ্য চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১৭ বছর ৫ জন শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি সময়ে ওই বিদ্যালয় এলাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ানে কো-ইড স্কুলের জায়গায় ঘূর্ণীঝড় আশ্রয় কেন্দ্র কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হলে পাশ^বর্তী একটি যায়গায় টিনসেড ঘর নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের কাজ চলমান রাখা হয়। কিন্তু সাইক্লোন সেল্টারটির কাজ শেষের দিকে আসলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি বশির উল্লাহ মিয়া ওই সাইক্লোন সেল্টারে তার ছেলে এমদাদুল হক বাকেরকে প্রধান শিক্ষক বানিয়ে নতুন করে পূর্ব চর আইচা আদর্শ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় চালু করেন। এনিয়ে দুই স্কুলের মধ্যে দ্বন্দ শুরু হয়। এবং বশির উল্লাহ মিয়ার প্রতিষ্ঠিত নতুন স্কুলটিতে শিক্ষার্থী না থাকায় কো-ইড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের ভাগিয়ে নিতে গত শুক্রবার ভোর রাতে বশির উল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের টিনসেট ঘরটি ভেঙে ঘরসহ আসবাবপত্র নিয়ে যায়। এবং ওই স্থানে সুপারি গাছ লাগিয়ে দেয়। এতে করে প্রায় দুই শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় তাদের। বর্তমানে রাস্তা ঘাটে এবং মানুষের বাড়িতে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এসময় তিনি বিদ্যালয়টি দ্রæত সময়ের মধ্যে ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি বশির উল্ল্যাহ মিয়ার ছেলে এমদাদুল হক বাকের জানান, তার পিতা- ও দাদী কো-ইড স্কুলের নামে কোনো জমি দান করেননি। তারা ২০০৬ সালে পূর্ব চরআইচা আদর্শ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৪৬ শতাংশ জমি দান করেছেন। সে নামে তারা একটি বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন। সেখানে একটি সাইক্লোন সেল্টারের পাশ হয়।  ভবনের কাজ চলাকালীন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টিনসেটের একটি ঘর করেন। তাদের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় তারা ওই ঘর ভেঙে নিয়ে গেছেন।
তবে সাইক্লোন সেল্টারের কাজ করা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মামুন ট্রেডার্সের মালিক ইউনুস আল মামুন বলেন, “আমরা কো-ইড স্কুলের টিনসেড ঘর কোনো ভাঙবো, আমাদের তো এখনো কাজই সমাপ্ত হয়নি।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকা সহকারী কমিশনার ভূমি আবুল মতিন খান জানান, এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।