অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


রোমাঞ্চকর টাইয়ের পর ভারতের সঙ্গে ট্রফি ভাগাভাগি করলো বাংলাদেশ নারী দল


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২শে জুলাই ২০২৩ সন্ধ্যা ০৭:৫৭

remove_red_eye

২০১

ফারজানা হকের সেঞ্চুরি ও বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুন্যে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারনী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে টাই করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এতে ভারতের সাথে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও ১-১ সমতায় শেষ করে ট্রফি ভাগাভাগি করলো বাংলাদেশের নারীরা। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বৃষ্টি আইনে ৪০ রানে জয় পায় বাংলাদেশ এবং দ্বিতীয় ওয়ানডে ১০৮ রানের বড় ব্যবধানে জিতে ভারত। 
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ২২৫ রান করে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি পুর্ন করে  ১০৭ রান করেন ফারজানা। জবাবে ৪৯ দশমিক ৩ ওভারে ২২৫ রানে অলআউট হয় ভারত। স্কোর সমান হওয়ায় ম্যাচটি টাই হয়। 
তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে জিতলেই সিরিজ নিশ্চিত, এমন সীমকরণ নিয়ে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। দলকে দারুন সূচনা এনে দেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার শামিমা সুলতানা ও ফারজানা। ১৫৮ বল খেলে উদ্বোধনী জুটিতে ৯৩ রান তোলেন তারা। 
ক্যারিয়ারের ১৩তম ওয়ানডে ম্যাচে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান শামিমা। হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ৭৮ বলে  ৫টি চারে ৫২ রান করে প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন শামিমা।
শামিমার বিদায়ের পর ফারজানার সাথে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। ভারতীয় বোলারদের দারুণভাবে সামলে ৩৮তম ওভারে দলের রান দেড়শ স্পর্শ করেন ফারজানা ও নিগার। এই জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পেয়ে যান ফারজানা। 
৪১তম ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ৩৬ বলে ১টি চারে ২৪ রান করা নিগার। চার নম্বরে নামা রিতু মনি ২ রানের বেশি করতে না পারলে  ৪২তম ওভারে দলীয় ১৬৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
চতুর্থ উইকেটে সোবহানা মোস্তারিকে নিয়ে মারমুখী হন ফারাজানা। ৪৮তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ফারজানা। ৫৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৯টি হাফ-সেঞ্চুরির পর অবশেষে সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন তিনি। এজন্য ১৫৬ বল খেলেন তিনি। 
শেষ ওভারের শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে  ৭টি চারে ১৬০ বলে ১০৭ রানের দারুন ইনিংস খেলেন ডান-হাতি ব্যাটার ফারজানা।
চতুর্থ উইকেটে মোস্তারির সাথে ৪৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৬ রান যোগ করেন ফারজানা। এতে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ২২৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের। ২টি চারে ২২ বলে অপরাজিত ২৩ রান করেন মোস্তারি। ভারতের ¯েœহ রানা ২টি উইকেট নেন। 
২২৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে ভারত। ৩২ রানের মধ্যে ভারতের দুই ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান পেসার মারুফা আকতার ও অফ স্পিনার সুলতানা খাতুন। ওপেনার শেফালি ভার্মাকে ৪ রানে মারুফা ও ইয়াশটিকা ভাটিয়াকে ৫ রানে শিকার করেন সুলতানা। 
শুরুতে চাপে পড়া ভারতকে খেলায় ফেরাতে হাল ধরেন আরেক ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা ও হারলিন দেওল। ১৪২ বলে ১০৭ রান তুলে ভারতকে লড়াইয়ে ফেরান তারা। ২৯তম ওভারে স্মৃতিকে শিকার করে বাংলাদেশকে দারুন এক ব্রেক-থ্রু এনে দেন লেগ-স্পিনার ফাহিমা খাতুন। ৫টি বাউন্ডারিতে ৫৯ রান করেন স্মৃতি। 
স্মৃতির বিদায়ে ক্রিজে আসেন ভারতের অধিনায়ক হারমনপ্রীত কৌর। ২টি চারে ইনিংস শুরু করলেও হারমানপ্রীতকে ১৪ রানে বিদায় করেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাহিদা আকতার। ১৬০ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত। এক প্রান্ত আগলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ভারতের রানের চাকা সচল রাখেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওযা  দেওল। ৪২তম ওভারে ফাহিমার দারুন ফিল্ডিংয়ে রান আউটের ফাঁদে পড়েন ৯টি চারে ১০৮ বলে ৭৭ রান করা দেওল। 
দেওলের ফেরার ওভারে দিপ্তি শর্মাকে সরাসরি থ্রোতে রান আউট করেন মোস্তারি। এক ওভারে দুই রান আউটে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় ম্যাচ জিততে শেষ ৮ ওভারে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৪ রান দরকার পড়ে ভারতের। সপ্তম উইকেটে ঠান্ডা মাথায় ৩০ বলে ২৪ রান তুলে ভারতের জয়ের পথ তৈরি করেন জেমিমা রড্রিগুয়েজ ও আমনজত কৌর। ৪৭তম ওভারের শেষ বলে আমনজতকে ১০ রানে শিকার করেন লেগ স্পিনার রাবেয়া খান। 
পরের ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা তৈরি করেন নাহিদা। ২১৭ রানে ৯ উইকেট হারায় ভারত। ৪৯তম ওভারে ৬ রান পায় ভারত। শেষ ওভারে ৩ রান দরকার পড়ে ভারতের। বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিলো ১ উইকেট। 
মারুফার করা প্রথম দুই বলে ২ রান নেন ভারতের রড্রিগুয়েজ ও মেঘনা সিং। এতে দু’দলের স্কোর সমান-সমান হয়ে যায়। তৃতীয় বলে মেঘনাকে আউট করে ভারতের শেষ উইকেট তুলে নেন মারুফা। ২২৫ রানে অলআউট হয় ভারত। নিজেদের ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিলো ৪ উইকেটে ২২৫ রান। এতে সিরিজ নির্ধারনী শেষ ম্যাচটি টাই হয়। বাংলাদেশের নাহিদা ৩টি, মারুফা ২টি, সুলতানা-রাবেয়া ও ফাহিমা ১টি করে উইকেট নেন।  তিন ম্যাচে ১৮১ রান করে সিরিজ সেরা হন বাংলাদেশের  ফারজানা হক। 
আইসিসি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ছিলো এই সিরিজটি। এখন ৯ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তমস্থানে আছে বাংলাদেশ। ৯ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে ভারত।

সুত্র বাসস