অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ১লা নভেম্বর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


ভোলার চরাঞ্চলে দিন দিন কমছে অতিথি পাখির সংখ্যা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ রাত ০৩:৫২

remove_red_eye

৮৪৫

অচিন্ত্য মজুমদার : শীত এলেই ভোলার চরাঞ্চলে প্রতিবছর ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসলেও এবছর তাদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠত মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা অসংখ্য চর। কিন্তু এবছর অধিকাংশ চর ফাঁকা। নেই আগের মতো আর পাখির কলরব। তবে কিছু কিছু চরে পাখির দেখা মিললেও সংখ্যা বিচারে তা আগের চেয়ে অনেক কম। স্থানীয় লোকজন এবং পাখি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শিকারীদের উপদ্রব, খাদ্য সংকটসহ নানা কারণে পাখিরা এখন তাদের শীতকালীন অবকাসস্থল পরিবর্তন করেছে। তবে উপক‚লীয় বন কর্মকর্তা মতে পাখিরা তাদের বিচরণ ক্ষেত্র বদলেছে।

শীত এলেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি এসে জড়ো হয় ভোলার চরাঞ্চলে। অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো, কিচিরমিচির শব্দ, খাবারের সন্ধানে কাঁদায় নামা আবার কখনো জলে ডুব সাঁতার দেয়া, দলবেঁধে কৃষকের বীজতলা উজাড় করা সব মিলিয়ে অন্য এক রূপে সেজে ওঠে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি দ্বীপজেলা ভোলা। এসময় এসব চরাঞ্চলের মানুষের ঘুমভাঙে পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনে আবার রাতে পাখির কলতানে ঘুমিয়ে পরে তারা। তবে গত কয়েক বছর ধরে পাখির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। পাখি শিকারিদের দৌরাত্ব্য, চরে অবাধে গরু-মহিষের বিচরণ, নদীতে অবৈধ জালে মাছ শিকার, কোলাহল মুক্ত বিচরণ ক্ষেত্রের অভাবসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় দিন দিন ভোলায় আসা পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে অতিথি পাখি দেখতে এসে হতাশা প্রকাশ করছে পর্যটকরাও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৮০’র দশকে ভোলায় আসা অতিথি পাখির সংখ্যা ছিলো প্রায় ৩৫০ প্রজাতির। কিন্তু বর্তমানে এরসংখ্যা নেমে ৭৭ প্রজাতিতে চলে এসেছে। প্রতিবছরই শীতের শুরুতে হাজার পাখির কলকাকলীতে এ অঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দিন দিন এর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে এভাবে দিন দিন পাখির সংখ্যা কমতে থাকলে একসময় ভোলার চরাঞ্চলগুলোতে অতিথি পাখির জলকেলী আর কলতান ফুরিয়ে যাবে।

৯ জানুয়ারী ঢাকা থেকে ভোলায় পাখিশুমারী করতে আসা বন্যপ্রাণী গবেষক ও পাখি পর্যবেক্ষক সামিউল মোহসেনিন জানান, গত শীত মৌসুমে সর্বমোট ৪৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি গণনা করেছেন। এর মধ্যে ৭৭ প্রজাতির পাখির সন্ধান মিলেছে। যার মধ্যে জলচর পাখি ছিল ৬৩ প্রজাতির। সর্বমোট সৈকত পাখির সন্ধান মিলেছে ৩১ প্রজাতির ১২ হাজার ৬৫৭টি। যার মধ্যে চেগা, জিরিয়া, বাটান ছিল উল্লেখ যোগ্য। বনু হাসের সন্ধান মিলেছে ১২ প্রজাতির ১৫ হাজার ৩৭২টি। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য সিঁথি হাঁস, বেবী, চকাচকি, রাজ হাঁস। অন্যদিকে এবছর শীত মৌসুমে মোট ৬২ প্রজাতির ৪০ হাজার ৫১টি জলচর পাখি দেখা গিয়েছে।

এবছর চার প্রজাতির বিপন্নপ্রায় জলচর পাখি দেখা গিয়েছে, এর মধ্যে মহা বিপন্ন চামুচ ঠুটো বাটান ৩টি। বিপন্ন নর্ড ম্যানের সবুজ পা ১টি। সংকটাপন্ন দেশী গাঙচষা ১০১টি ও বড় নথ ২৮টি। এছাড়া প্রায় সংকটাপন্ন প্রজাতির মধ্যে নদীয়া পানচিল ১২টি, এশীয় ডউইচার ৩টি, কালা লেজ জৌরালি তিন হাজার ১৮৪টি, কালামাথা কাস্তেচরা ৭৫৭টি, ইউরেশীয় গুলিন্দা ২৫৭টি, দাগিলেজ জৌরালি ৮টি ও মরচে রং ভূতিহাঁস ১টি।

তারা উপক‚লের মোট ২৯টি চর পর্যবেক্ষণ করেছে। এরমধ্যে মাঝের চর, পাতার চর, দমার চর, শাহাজালাল, কালকিনির চর, চর কুকরি-মুকরি, চরপিয়াল, চরপাতিলা, আন্ডার চর, সোনার চর, চর মনতাজ, টেগরার চর, সালুর চর, ডুব চর, ও বঙ্গের চর উল্লেখ যোগ্য। তবে তিনি দু:খ করে বলেন, বেশ কিছু চরে এ পাখি শিকারের প্রমাণ ও নমুনা পাওয়া গিয়েছে। উপক‚লে পাখি কমে যাওয়ার পেছনে খাবার ও জায়গা সংকটের পাশাপাশি শিকারিদের দায়ী করেন তিনি। তাই পাখি সমৃদ্ধ চরগুলোতে গরু-মহিষের অবাধ বিচরণ কমিয়ে আনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করা গেলে পাখি রক্ষা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

তবে ভোলার উকূলীয় বন কর্মকর্তা মোঃ তৈফিকুল ইসলাম জানান, শীত মৌসূমে আসা অতিথি পাখির সংখ্যা কমেনি। পাখিরা তাদের বিচরণ ক্ষেত্র পরিবর্তন করেছে। আগে যে সব কাঁদা চরগুলোতে পাখি আসত এখন সে সব চরগুলো স্থায়ী হওয়ায় মানুষের গতাকম্য বেড়েছে। তাই পাখিরা খাদ্যের সন্ধানে নতুন কাঁদা চরে পারি জমাচ্ছে।