অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


বৃদ্ধ নিবাসে থেকেও বাবাদের নেই কোনো অভিযোগ


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৫ই মার্চ ২০২৩ রাত ১০:৫৫

remove_red_eye

৩০৬

মোঃ  ইসমাইল: এক মাত্র সন্তানরা বাবাদের কাছে আদরের পুত্র হয়। ঠিক তেমনি ভোলা সদর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের কালিকিত্তি গ্রামের আলী রাজা সাহেব বাড়ির আব্দুল মান্নানের(৭৫) ছেলে। আব্দুল মান্নানের তিন সন্তান। এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তিনি কৃষি কাজ করেই সংসার চালাতেন। ছেলে মেয়েদের বিয়ে সম্পন্ন করেছেন। আজ থেকে ১১ বছর আগে তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরেন। পরে তাঁর পা অবশ হয়ে যায়। সেই মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য তাঁর প্রয়োজন হয় বেয়বহুল অর্থের। তাঁর কাছে জমানো কোনো টাকা না থাকায় তিনি বাধ্য হয়ে তাঁর একমাত্র সম্ভব বসত ভিটা বিক্রি করে চিকিৎসা চালান।

তাঁর পর থেকে বয়ে আসে তাঁর জীবনের অন্ধকার। ভিটে বিক্রি করায় একমাত্র ছেলে তাঁর খোঁজ খবর নিচ্ছে না। তাই তিনি বাধ্য হয়ে এখন  জীবন যাপন করছেন ভোলা সদরের পৌর কাঠালির ৫০ শয্যার বৃদ্ধ নিবাসে। তাঁর মতো এমন নির্মম জীবন যাপন করছেন আরও ১৮ জন বৃদ্ধ বাবারা।

খোঁজ খবর নেওয়া ছেলের মুখ দেখতে এখনও পথের দিকে তাকিয়ে থাকেন এ বৃদ্ধ বাবা। নির্মম ভাবে জীবন যাপন করা সত্যেও ছেলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করছেন না তিনি।
বৃদ্ধ নিবাসে থাকেন আর এক বৃদ্ধ সামছুল হক(৮৫)। তাঁর পিতার নাম মৃত আব্দুল কাদের। তাঁর বাড়ি আলীনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাদ্রাসা বাজার এলাকায়। তিনি দিনমজুর ছিলেন। তাঁর পাঁচ সন্তান। এক ছেলে চার মেয়ে। একমাত্র ছেলের নাম মফিজুর রহমান। তাঁর স্ত্রী নেই। কয়েক বছর আগে স্ত্রী মারা গেছে। অন্যের কাজ করে সন্তানদের বিয়ে সম্পন্ন করেছেন। স্ত্রী মরে যাওয়ার পরে একমাত্র সন্তানই ছিল তার ভরসা। কিন্তু সেই ঠাঁই টুকু আর হল কই। ছেলের বউয়ের দুর্ব্যবহারের কারণে এখন তাঁকে থাকতে হচ্ছে বৃদ্ধ নিবাসে। ১১ বছর জীবন যাপন করছেন তিনি এখানে। এদিকে একমাত্র ছেলে তাঁর কোনো খোঁজ খবর নেননি। তাঁর পরেও কোনো অভিযোগ নেই তাঁর সন্তানের প্রতি। জানালেন, এখানেই ভালো আছেন তিনি।
এখানে কেবল আব্দুল মান্নান কিংবা সামছুল হক নন, তাদের মতো একই অবস্থা ইউনুস, রশিদসহ অন্য বাবাদেরও। তাদের বৃদ্ধ নিবাসে আসার গল্পটি ভিন্ন হলেও পরিণতি একই।
এ বৃদ্ধ নিবাসে বর্তমানে থাকছেন ১৮ জন বৃদ্ধ বাবা। খাবার-সেবাযতœ নিয়মিত চললেও সন্তানের কথা মনে করে কাঁদে তাঁরা। পরিবার থেকেও যেন নেই তাদের। যে সন্তানদের নিজ আদর-স্নেহে লালন-পালন করে বড় করেছেন,সেই সন্তানরা আজ আলাদা। কেউ আমাকে তাড়নায়, কেউ ভরণপোষণের দায়ে এড়াতে  বৃদ্ধ নিবাসে  পাঠিয়ে দিয়েছেন বাবাদেরকে।
বৃদ্ধ নিবাসের ম্যানেজার সেলিম মাষ্টার জানান, অবহেলার শিকার হওয়ার বৃদ্ধ বাবাদের কষ্ট লাগব করতে কতৃপক্ষ এ বৃদ্ধ নিবাসটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে এখানে ১৮ জন বৃদ্ধ বাবা রয়েছেন। তাদের খাবার, চিকিৎসাসহ সকাল কার্যক্রম চলমান রয়েছে।





আরও...