অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


নিজের অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না ভোলার আনোয়ারের


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রাত ০৯:৫৯

remove_red_eye

২৮৭




গুলশানে ভয়বহ  অগ্নিকাণ্ড

ইকরামুল আলম    : আর মাত্র দুই মাস পরেই সন্তান পৃথিবীর আসার কথা রয়েছে। এ সন্তানকেই ঘিরেই কতো স্বপ্ন ছিলো ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের দিদারুল্লাহ গ্রামের আনোয়ার হোসেনের। কিন্তু রবিবার (১৯ ফেব্রæয়ারী) দিবাগত রাতে ঢাকার গুলশান এলাকায় ১৩তলা একটি ভবনে অগ্নিকাÐের সময় ভবনের ১২তলা থেকে লাফিয়ে পরে মৃত্যু হয় তাঁর। ৭ মাসের অন্তসত্বা স্ত্রী আমেনা বেগমের গর্ভের অনাগত সন্তানের মুখ দেখার আগেই পৃথিবী থেকে চলে গেলেন আনোয়ার। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহনের পর তেমন লেখাপড়া করতে পারেনি আনোয়ার। সর্বশেষ গত ৭-৮ বছর আগে ঢাকায় গিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চি ও বাজার করার কাজ নেয়। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে আনোয়ার ছিলো তৃতীয়। ওই বাসায় কাজ করে খুব ভালোই চলছিল আনোয়ারের সংসার। এক বছর আগে দৌলতখান উপজেলায়ই বিয়ে করেন। তিনি ঢাকায় থাকলেও স্ত্রী আমেনা বেগম গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। গত দুই-তিন মাস আগে ছুটিতে বাড়ি এসে বেশ কয়েকদিন পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে চলে গেছেন। আগামী ৪-৫দিন পর আবারও বাড়িতে আসার কথা ছিলো। কিন্তু তা আর হলো না। এর আগেই পরপারে পারি জমিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২০ ফেব্রæয়ারী) দুপুর ২টার দিকে সরজমিনে আনোয়ারের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, আনোয়ারের বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজনসহ ওই বাড়ির সকলে আনোয়ারের শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে। আনোয়ারের বাবার কাছে তাঁর কথা জিজ্ঞেস করতেই হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠে সে। সবাই আনোয়ারের মরদেহের অপেক্ষা করছে। তবে আনোয়ারের স্ত্রী আমেনা বেগম তাঁর বাবার বাড়িতে ছিলেন।  
আনোয়ারের বাবা নুর ইসলাম জানান, আগুন লাগার আগে ছেলে আনোয়ারের সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে। দুই জনের মধ্যে কুশল বিনিময় হয়েছে। কিন্তু রাতে খবর আসে সে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছে।
আনোয়ারের চাচাতো ভাই কামাল জমাদ্দার জানান, ভাইদের মধ্যে আনোয়ারই একটু ভালো অবস্থানে ছিলো। তাঁর বাবা কৃষি কাজ করে অনেক কষ্টে সংসারের খরচ চালাতেন। তাই আনোয়ার টাকা-পয়সা দিয়ে পরিবারকে সহযোগীতা করতেন।
নিহতের ছোট ভাই জুলহাস মুঠোফোনে জানান, তিনি ভাই মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা থেকে ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। আসরের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
তিনি আরো জানান, গুলশানে আগুন লাগার খবর পেয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ সনাক্ত করেন। আনোয়ার হোসেন ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চির কাজ ও বাজার করতেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ও টিভিতে নিউজ দেখে ঢাকা মেডিকেলে এসে লাশ শনাক্ত করেন। পরে লিখিত আবেদন করেন ময়নাতদন্ত ছাড়াই আনোয়ারের লাশ নিয়ে ভোলায় চলে আসেন। তবে এ বিষয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।