অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৪ই পৌষ ১৪৩২


মেঘনার ভাঙনে উদ্বাস্তু হচ্ছে ঢাল চরের বাসিন্দারা


চরফ্যাসন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৯ই ডিসেম্বর ২০২২ রাত ১০:০১

remove_red_eye

২৬১

এআর সোহেব চৌধুরী ,চরফ্যাশন: "মেঘনার ভাঙনে ভিটেমাটিসহ সকল সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব সাহেদ আলিরা। এখন আর কোথাও গিয়ে জমি কেনার মতো সামর্থ্য নাই তাদের। "আক্ষেপ করে এমন কথা জানান চরফ্যাশন উপজেলা ভাঙন কবলিত বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন ঢালচরের বাসিন্দা বৃদ্ধ সাহেদ আলি মিয়া। এমন আক্ষেপ শুধু সাহেদ আলীর না, এই ইউনিয়নের আরও একাধিক বাসিন্দাদের। ঢালচরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে চরের বাসিন্দারা দিশেহারা। মাথা গোঁজার একটু ঠাইয়ের জন্য তারা বারবার  সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে গেলেও  মাথা গোজার ঠাই হচ্ছে না তাদের। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবী সরকারি চাল, গম, আটা, শাড়ি বা লুঙ্গি কিছুই দরকার নেই, শুধু মাথা গোঁজার এক টুকরো তুমি চান তারা। সাহেদ আলি আরও বলেন, ৪৫ বছর ধরে ঢালচরে বসবাস করছি। ব্রিটিশ আমল থেকে এখানের মংস্যঘাটে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে মাছের ব্যবসা করেছে। আগুনে পুড়লে ভিটেমাটি থাকে, নদীর ভাঙনে আমাদের তাও নেই। আমার ঘর বাড়ি চারবার ভেঙেছে এর পর কোথায় যাব এ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি এক টুকরা জমি পাওয়ার আশায়। ঢালচরের আরেক বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই, এখান থেকে চলে গেলে কী করব। নদীতে বারবার ভাঙলেও ঢালচরেই থাকতে হবে। ঢালচরের যুবক মোঃ মিরাজ বলেন, ঢালচরেই জন্ম, শৈশব, কৈশোর কাটিয়ে যখন সংসারের বোঝা যখন ঘাড়ে চেপেছে তখন নদী ভাঙনসহ নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশেষকরে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায়। পৈতৃকভাবে পাওয়া শেষ সম্পদটুকু নদীতে যাওয়ার পর আর কোনো জায়গা নেই আশ্রয় নেয়ার মতো। তাসনুর বেগম বলেন, 'আমরা এক টুকরা জমি চাই মাথা গোঁজার জন্য। মেঘনার ভাঙন আর নোনাপানির জন্য ফসল ফলাতেও পারিনা। গেলো  ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় আমাদের এই চরে ৩ফুটের বেশি উচুতে পানি উঠেছিলো। গৃহপালিত হাঁস মুরগী পানিতে ভাসিয়ে নিয়েছিলো। জেলে আবুল হোসেন বলেন,ভাঙনের কারনে এখন আর মৎস্য ঘাট নেই।এখানে আগের মতো মাছের ব্যবসা হয়না। মাছ পেলে চরফ্যাশনের মৎস্যঘাটে নিয়ে যাই। আমাদের এখানে বন্যার সময় ট্রলার নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার মতো নেই খাল। একটি খাল খনন ও একটি ঘাট হলে আমাদের শতশত ট্রলার বন্যার সময় নিরাপদে খালে বেঁধে রাখা যেতো।  

ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, আমার ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ড ভেঙে গেছে। এখানকার বাসিন্দারা ভাঙনের শিকার হয়ে মূল ভূখÐ চরফ্যাশনের বিভিন্ন এলাকায় বসত করছে। আমি পাশের আরেকটি চর তারুয়া এলাকায় আমার ইউনিয়নের ভূমিহীনদেরকে জমি বন্দবস্ত দেয়ার জন্য আবেদন করেছি। তবে বন বিভাগ তা দিচ্ছে না। ঢালচরের মানুষ ভাঙন ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছে। ঢালচর বাজারটিও এখন নদীর প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ে ভেঙে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, ১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী ঢালচরের আয়তন ছিল ৩১ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটার। ভাঙনের ফলে বর্তমানে দাড়িয়েছে ৪ ভাগের দুই ভাগে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নদীভাঙন রোধে  উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি মাসিক উন্নয়ন সভায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি।
তুলে ধরেছি। এলাকাবাসীর একটাই আবেদন তারুয়ারচর ও পূর্ব ঢালচরে  ভূমিহীন পরিবারগুলোকে জমি বন্দোবস্ত দিলে তারা মাথা গোঁজার সুযোগ পাবে। চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান রাহুল বলেন, ভাঙনের শিকার ভূমিহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বন ও পরিবেশ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি উত্থাপিত করা হবে। এ ছাড়াও একাধিক পরিবারকে উপজেলার বিভিন্ন আবাসনে পুনর্বাসন করা হয়েছে।