অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


 দৌলতখানে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে পড়ে যুবক নিখোঁজ


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৫শে নভেম্বর ২০২২ রাত ০৯:৪০

remove_red_eye

২৮৭


ইব্রাহিম আকতার আকাশ: ভোলার দৌলতখান উপজেলায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মেঘনা নদীতে পড়ে নোমান (২৭) নামে এক যুবক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ওসির গাড়ি চালক কনস্টেবল মো. রাসেল ও  সজীবকে সাময়িক বরখাস্ত ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজ করে ভোলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ২ দিনে দুই কনস্টেবলসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও ক্লোজড করা হয়। এদিকে নিখোঁজের ২ দিন পরও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নোমান (২৭) নামে ওই যুবকের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে স্থানীয় দিন শ্রমিক ইসমাঈল, ফারুক, গুণী ও নোমানসহ আরো ৭/৮ জন পাতার খাল মাছ ঘাট মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় জুয়া খেলছিল। এ সময় দৌলতখান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বরুপ কান্তি পালের নেতৃত্বে পুলিশ কনস্টেবল রাসেল ও সজীব নোমানদের জুয়ার আসরে গিয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে। এসময় ফারুক, ইসমাইল, রুবেল ও নোমান পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মেঘনা নদীতে পড়ে যায়। এদের মধ্যে ফারুক, ইসমাইল ও রুবেল সাঁতরে তীরে উঠে আসতে পারলেও নোমান পানিতে ডুবে যায়।
ফারুক ও রুবেল জানান, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তাঁরা ৪ জন মেঘনা নদীতে পড়ে যায়। এদের মধ্যে তাঁরা ৩ জন সাঁতরে তীরে উঠে যায়। এরই মধ্যে পুলিশ উপর থেকে নোমানকে লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়তে থাকে। তাদের ধারণা পুলিশের নিক্ষেপ করা ইট নোমানের মাথায় লেগে মাথা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। যাঁর ফলে নোমান সাঁতরে তীরে উঠতে পারেনি। নিখোঁজ নোমান দৌলতখান উপজেলার চর খলিফা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আবুল কালাম বেপারির ছেলে এবং এক সন্তানের জনক৷ তিনি পেশায় দিন শ্রমিক। দৌলতখান পাতার খাল মাছ ঘাটে শ্রমিকের কাজ করতেন নোমান।
দৌলতখান পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আমিন মাঝির ছেলে মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, নদীর মধ্যে পড়ে নোমান বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল। এসময় তিনি (রিয়াজ) নোমানকে নদী থেকে উদ্ধারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় এসআই স্বরুপ কান্দি পাল তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।
এদিকে নোমানের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাঁর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তাঁর স্ত্রী, ছেলে, বাবা-মা এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানান। তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত পুলিশের উপযুক্ত বিচারের দাবি জানান।
ঘটনার পর এখন পর্যন্ত নিখোঁজ নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়নি। শুক্রবার রাতে দৌলতখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হবে বলেও জানা গেছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার দুপুর ১টা পর্যন্ত নোমানের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। নদীতে তীব্র ¯্রােত ও পানির চাপ বেশি থাকায় উদ্ধারকারী টিম দুপুর ১টার দিকে তাদের উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
দৌলতখান ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। এরপর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। ঘটনাস্থলের আশেপাশে ডুবুরি দল অভিযান চালিয়ে নোমানের কোনো সন্ধান পায়নি। নদীতে তীব্র ¯্রােত ও পানির চাপ বেশি থাকায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এদিকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মেঘনা নদীতে পড়ে নোমান (২৭) নামে এক যুবক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার দিন ওসির গাড়ি চালক কনস্টেবল মো. রাসেল ও  সজীবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়াও শুক্রবার সকালে বরখাস্ত করা হয় দৌলতখান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বরুপ কান্তি পাল ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. সোহেল রানাকে ক্লোজড করা হয়েছে ।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।
ওসি জানান, ঘটনার দিন বিকেলে দুই পুলিশ কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত রা হয়েছে। এরপর শুক্রবার সকালে আরো দুই পুলিশ অফিসারকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা না হলেও শুক্রবার রাতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান।
এদিকে নিখোঁজ নোমানের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম। তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও বাবা-মায়ের কান্নায় নোমানের বাড়িতে এক হ্নদয়বেদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত পুলিশদের উপযুক্ত বিচারের দাবি জানান।

ভোলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান খান (প্রশাসন ও অর্থ) ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত করছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।





আরও...